26/04/2024 : 7:35 PM
আমার দেশ

প্রধানমন্ত্রী মৎস্যসম্পদ যোজনা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

উপস্থিত সকলকে আমার প্রণাম জানাই। দেশের স্বার্থে, বিহারের স্বার্থে, গ্রামের জীবন সহজ করার স্বার্থে এবং সরকারি ব্যবস্থা মজবুত করার স্বার্থে এই রাজ্যে মৎস্য উৎপাদন, ডেয়ারি, পশুপালন এবং কৃষিক্ষেত্র নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার সুবিধা বৃদ্ধির জন্য কয়েকশ’ কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন হল। সেজন্য বিহারের ভাই ও বোনেদের আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

 

বিহারের রাজ্যপাল ফাগু চৌহানজি, মুখ্যমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় নীতিশ কুমারজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী গিরিরাজ সিংজি, কৈলাশ চৌধুরিজি, প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গিজি, সঞ্জীব বালিয়ানজি, বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ভাই সুশীলজি, বিহার বিধানসভার অধ্যক্ষ বিজয় চৌধুরিজি, রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যগণ, উপস্থিত সাংসদ ও বিধায়কগণ এবং আমার ভাই ও বোনেরা।

 

বন্ধুগণ,

আজ যতগুলি প্রকল্প শুরু হল, তার পেছনে ভাবনা এটাই ছিল যে আমাদের দেশের গ্রামগুলিকে একবিংশ শতাব্দীর ভারত, আত্মনির্ভর ভারতের শক্তির উৎস করে তোলা,  প্রাণশক্তিতে ভরপুর করে তোলা। আমরা এই শতাব্দীতে ব্লু রেভোলিউশন বা মৎস্যপালন সংশ্লিষ্ট অনেক প্রকল্প, হোয়াইট রেভোলিউশন বা ডেয়ারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু প্রকল্প, স্যুইট রেভোলিউশন অর্থাৎ, মধু উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের গ্রামগুলিকে আরও সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টা করছি। ‘প্রধানমন্ত্রী মৎস্যসম্পদ যোজনাও’ এই লক্ষ্য মাথায় রেখে রচনা করা হয়েছে। আজ দেশের ২১টি রাজ্যে একসঙ্গে এই প্রকল্পের শুভ সূচনা হচ্ছে। আগামী ৪-৫ বছরে এবাবদ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হবে। এর মধ্যে এখানে আজ ১,৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প শুরু হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিহারের পাটনা, পূর্ণিয়া, সীতামাঢ়ী, মধেপুরা, কিষাণগঞ্জ এবং সমস্তিপুরে অনেক পরিষেবার উদ্বোধন কিংবা শিলান্যাস করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদকেরা নতুন পরিকাঠামো পাবেন। আধুনিক সরঞ্জাম পাবেন ও নতুন বাজার পাবেন। এর ফলে, কৃষির পাশাপাশি, অন্যান্য মাধ্যম থেকেও রোজগারের সুযোগ গড়ে উঠবে।

বন্ধুগণ,

দেশের প্রত্যেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে, নদী ও সমুদ্র তটবর্তী অঞ্চলগুলিতে মাছের ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে প্রথমবার দেশে এত বড় ব্যাপক প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। স্বাধীনতার পর এক্ষেত্রে যত বিনিয়োগ হয়েছে তা থেকে অনেকগুণ বেশি বিনিয়োগ ‘প্রধানমন্ত্রী মৎস্যসম্পদ যোজনা’র মাধ্যমে করা হচ্ছে। একটু আগেই গিরিরাজজি বিস্তারীত বলছিলেন। তখন তাঁর বলা পরিসংখ্যান শুনে অনেকেই হয়তো অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু যখন আপনারা বাস্তবটা জানতে পারবেন, তখন বুঝতে পারবেন যে সরকার কত ক্ষেত্রে কত কত মানুষের ভালোর জন্য কেমন ধরনের সুদূরপ্রসারী কর্মসংস্থানের কথা ভেবে প্রকল্পগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

 

দেশে মৎস্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসা-বাণিজ্য দেখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এখন একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রক গড়ে তুলেছে। এর মাধ্যমে আমাদের মৎস্যজীবী বন্ধুরা মৎস্যপালন ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সমস্ত পরিষেবা পাচ্ছেন। আমাদের লক্ষ্য এটাই যে আগামী ৩-৪ বছরে মৎস্য রপ্তানিকে দ্বিগুণ করতে হবে। এর ফলে শুধুই মৎস্যক্ষেত্র নয়, রোজগারের ক্ষেত্রেও লক্ষ লক্ষ নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। েক্টু আগে এখানে যে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আমার মন আরও বেশি বিশ্বাস ও আস্থায় ভরে গেছে। যখন আমি আমাদের ওপর আপনাদের এবং রাজ্যগুলির বিশ্বাস দেখি, আমি ভাই ব্রজেশজির সঙ্গে কথা বলছিলাম, ভাই জ্যোতি মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলছিলাম এবং বেটি মণিকার সঙ্গেও কথা বলছিলাম, তখন অনুভব করছিলাম যে তাঁদের মনের আস্থা কতো সুদৃঢ়।

 

বন্ধুগণ,

মৎস্যপালন অনেক ক্ষেত্রেই পরিষ্কার জলের প্রতুলতার ওপর নির্ভর করে। এ কাজে গঙ্গাজিকে আরও স্বচ্ছ এবং নির্মল করে তোলার অভিযান অনেক বেশি সহায়ক হয়ে উঠছে। গঙ্গাজির দু’পাশের এলাকাগুলিতে রিভার ট্রান্সপোর্ট উন্নত করার জন্য যে কাজ চলছে সে কাজের মাধ্যমেও নিশ্চিতভাবেই মৎস্যচাষ ক্ষেত্র উপকৃত হবে। এ বছর ১৫ আগস্টে যে মিশন ডলফিনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, সেটিও স্বাভাবিকভাবেই মৎস্যচাষ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। অর্থাৎ, এক প্রকার বায়ো-প্রোডাক্ট-এর সহায়তায় অতিরিক্ত লাভজনক হতে চলেছে। আমি জানতে পেরেছি যে আমাদের নীতিশবাবু এই মিশনের কথা জেনে অত্যন্ত উৎসাহিত। সেজন্য আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে যখন গঙ্গা ডলফিনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, এর দ্বারা গঙ্গাতটে বসবাসকারী মানুষরা তো উপকৃত হবেনই, অন্য সবাইও উপকৃত হবেন।

বন্ধুগণ,

নীতিশজির নেতৃত্বে বিহারের গ্রামে গ্রামে জল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ হচ্ছে। ৪-৫ বছর আগে যেখানে বিহারের মাত্র ২ শতাংশ বাড়িতে পরিচ্ছন্ন পানীয় জলের সরবরাহ ছিল, সেখানে আজ এই পরিসংখ্যান বেড়ে ৭০ শতাংশেরও বেশি হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ বাড়িকে পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে। নীতিশজির এই অভিযান এখন কেন্দ্রীয় সরকারের জল জীবন মিশনের মাধ্যমে নতুন শক্তি পেয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে করোনার সঙ্কটকালেও বিহারে প্রায় ৬০ লক্ষ বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এটি সত্যিই খুব বড় সাফল্য। এটা এমন ইতিবাচক উদাহরণ যে এই সঙ্কটের সময়ে যখন দেশের প্রায় সমস্ত কাজ থেমে গিয়েছিল, তখনও আমাদের গ্রামে গ্রামে কিভাবে একটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ এগিয়ে গেছে। এটি আমাদের গ্রামগুলিরই শক্তি যেজন্য করোনা সঙ্কটকালেও শস্য উৎপাদন, ফল ও সব্জি উৎপাদন এবং দুগ্ধ উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে গ্রাম থেকে বাজার পর্যন্ত, গোয়াল থেকে ডেয়ারি পর্যন্ত কোন ত্রুটি ছাড়া ও নতুন প্রযুক্তি ছাড়াই সরবরাহ শৃঙ্খল অটুট রয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

এই সময়ে অন্ন উৎপাদন থেকে শুরু করে ফল উৎপাদন, দুগ্ধ উৎপাদন – সকল ক্ষেত্রেই প্রচুর উৎপাদন হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট সরকারগুলি ডেয়ারি শিল্পোদ্যোগগুলি এই সঙ্কটকালেও রেকর্ড পরিমাণ শস্য, শাকসব্জি, ফল ও দুগ্ধ কিনেছে। পিএম-কিষাণ সম্মান নিধির মাধ্যমেও দেশের ১০ কোটিরও বেশি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ লক্ষ কৃষক আমাদের বিহারের বাসিন্দা। বন্ধুগণ, যখন থেকে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে, তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বিহারের কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে গেছে। এমনই অনেক প্রচেষ্টার ফলে আমরা দেশের গ্রামে গ্রামে এই বিশ্বব্যাপী মহামারীর প্রভাব এত ন্যূনতম রাখতে সক্ষম হয়েছি। এ কাজ এজন্য অত্যন্ত প্রশংসনীয় কারণ বিহার করোনার পাশাপাশি, বুক চিতিয়ে গণ্ডার বিভীষিকারও মোকাবিলা করছে।

 

বন্ধুগণ,

করোনার পাশাপাশি, ভারী বর্ষা এবং বন্যার ফলে বিহার সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির যে শোচনীয় অবস্থা হয়েছে সে সম্পর্কে আমরা সকলেই ভালোভাবে পরিচিত। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার উভয়েই ত্রাণকার্য আরও দ্রুতগতিতে সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছে। বিনামূল্যে রেশন পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে যাতে অসহায় মানুষেরা ‘প্রধানমন্ত্রী গরীবকল্যাণ রোজগার অভিযান’ দ্বারা নিরন্তর উপকৃত হন। প্রত্যেক গ্রামের প্রতিটি অসহায় পরিবার, আর যেসব শ্রমিক পরিবার করোনার ফলে শহরগুলি থেকে ফিরে এসেছেন তাঁরাও এই সুবিধা পেতে পারেন। সেজন্যই বিনামূল্যে রেশনের এই প্রকল্পকে জুনের পর দীপাবলী এবং ছট পূজা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

করোনা সঙ্কটের ফলে শহর গ্রামে থেকে ফিরে আসা শ্রমিক বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই এখন পশুপালনের দিকে পা বাড়িয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিহার সরকারের অনেক প্রকল্পের মাধ্যমে এই পশুপালন ক্ষেত্রে তাঁরা উৎসাহ পেয়েছেন। আমি এমন বন্ধুদের বলব যে আজ যে পদক্ষেপ আপনারা নিয়েছেন, তার ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। আমি আজকে যে কথাগুলি বলছি, সেগুলি লিখে রেখে দিন। আবারও  বলছি, আপনারা যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। সরকার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে দেশে ডেয়ারি শিল্পোদ্যোগ আরও বিস্তার লাভ করে, নতুন নতুন পণ্য তৈরি হয়, নতুন নতুন উদ্ভাবন হয় যার মাধ্যমে কৃষকরা, পশুপালকেরা আরও বেশি রোজগার করতে পারেন। এর পাশাপাশি, যাতে দেশে উন্নত প্রজাতির পশু তৈরি হয় এবং তাদের স্বাস্থ্য উন্নত হয়, তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার উন্নত ব্যবস্থা থাকে, তাদের খাদ্য-পানীয়ের পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা থাকে এবং পুষ্টি সুনিশ্চিত হয় – আমরা এক্ষেত্রেও জোর দিচ্ছি।

 

এই লক্ষ্য নিয়ে আজ দেশের ৫০ কোটিরও বেশি পশুধনকে খুরের ঘা এবং মুখের ঘায়ের মতো রোগ থেকে মুক্ত করার জন্য বিনামূল্যে টিকাকরণ অভিযান চলছে। পশুগুলির উন্নত খাদ্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেশে উন্নত দেশী প্রজাতির গবাদি পশু উৎপাদনের জন্য ‘মিশন গোকুল’ চালু করা হয়েছে। এক বছর আগেই সারা দেশে কৃত্রিম গর্ভাধান প্রকল্প শুরু করা হয়েছিল, যার একটি পর্যায় আজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

বিহারে এখন উন্নতমানের দেশী প্রজন্মের গবাদি পশুর প্রজননের জন্য দেশের একটি প্রধান কেন্দ্র গড়ে উঠছে। রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন-এর মাধ্যমে আজ পূর্ণিয়া, পাটনা, বারাউনিতে যে আধুনিক পরিষেবাগুলি গড়ে উঠেছে, সেগুলির মাধ্যমে ডেয়ারি ক্ষেত্রে বিহারের পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। পূর্ণিয়ায় যে কেন্দ্র গড়ে উঠেছে তা ভারতের সর্ববৃহৎ কেন্দ্রগুলির অন্যতম। এর ফলে শুধু বিহারই নয়, পূর্ব ভারতের বৃহৎ অংশের পশুপালকরা উপকৃত হবেন। এই কেন্দ্র থেকে ‘বছৌর’ এবং ‘রেড পূর্ণিয়া’র মতো বিহারের নিজস্ব দেশী প্রজাতির প্রজনন ও বিকাশ এবং সংরক্ষণকে অত্যন্ত উৎসাহ যোগানো হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

এই গরুগুলি সাধারণত বছরে একটা বাচ্চা দেয়। কিন্তু আইভিএফ প্রযুক্তির মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতে একটি গরু এক বছরে অনেক ক’টি বাচ্চা দিতে পারে। আমাদের লক্ষ্য হল এই প্রযুক্তিকে দেশের গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়া।

 

বন্ধুগণ,

গবাদি পশুর উন্নত প্রজাতির পাশাপাশি, সেগুলির দেখাশোনা, লালন-পালন নিয়েও বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলি জানা ততটাই প্রয়োজনীয় হয়। সেজন্য বিগত বছরগুলিতে নিরন্তর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পর্যায়ে আজ ‘ই-গোপালা’ অ্যাপ উদ্বোধন করা হল। ‘ই-গোপালা’ অ্যাপটি এমন একটি অনলাইন ডিজিটাল মাধ্যম যার সাহায্যে পশুপালকরা উন্নত প্রজাতির গবাদি পশু বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তাঁরা দালালদের খপ্পর থেকে মুক্তি পাবেন। এই অ্যাপ পশুপালকদের প্রজনন ক্ষমতা থেকে শুরু করে পশুর স্বাস্থ্য ও আহার সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যই জোগাবে। এর ফলে কৃষকরা এটা জেনে যাবেন যে তাঁদের গবাদি পশুর কখন কিসের প্রয়োজন। যদি পশু অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন কোথায় গেলে সুলভে চিকিৎসা করাতে পারবেন সেটাও এই অ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এই অ্যাপকে পশুর আধার কার্ডের সঙ্গেও যুক্ত করা হচ্ছে। যখন এ কাজ সম্পূর্ণ হবে, তখন ‘ই-গোপালা’ অ্যাপে পশুর আধার নম্বর টাইপ করলেই সেটি নির্দিষ্ট পশু সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানিয়ে দেবে। এর মাধ্যমে পশুপালকরা গবাদি পশু কেনা-বেচার ক্ষেত্রেও ততটাই সাহায্য পাবেন।

 

বন্ধুগণ,

কৃষি থেকে শুরু করে পশুপালন, মৎস্যচাষ – এই সমস্ত ক্ষেত্রে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত করতে অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রহণ করা এবং গ্রামে গ্রামে আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিহার তো এমনিতেই কৃষি সংশ্লিষ্ট পড়াশোনা এবং গবেষণা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিল্লিতে যেখানে আমরা ‘পূসা’ ‘পূসা’ শুনি, অনেকেই জানে না আসল পূসা দিল্লিতে নয়, বিহারের সমস্তিপুরে পাওয়া যায়। এখানে এর যমজ ভাইকেও পাওয়া যায়।

 

বন্ধুগণ,

দীর্ঘ দাসত্বের সময়ে সমস্তিপুরের পূসায় জাতীয় স্তরের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং জননায়ক কর্পূরী ঠাকুরের মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতারা এই পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাঁদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রচেষ্টাগুলি থেকে প্রেরণা গ্রহণ করে বিগত ২০১৬ সালে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তারপর এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর অধীনস্থ অন্যান্য কলেজগুলিতে পাঠক্রম ও পরিষেবারও ব্যাপক উন্নতি করা হয়েছে। মোতিহারীর কৃষি ও অরণ্য-বিদ্যার নতুন কলেজ থেকে শুরু করে পূসার স্কুল অফ এগ্রি-বিজনেস অ্যান্ড রুরাল ম্যানেজমেন্ট, বিহারের কৃষি-বিজ্ঞান এবং কৃষি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধাকে অনেক শক্তিশালী করে তুলেছে। এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আজ স্কুল অফ এগ্রি-বিজনেস অ্যান্ড রুরাল ম্যানেজমেন্ট-এর নতুন বাড়ির উদ্বোধন হল। পাশাপাশি, নতুন ছাত্রাবাস, স্টেডিয়াম এবং অতিথিশালারও শিলান্যাস করা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তাগুলির কথা মাথায় রেখে বিগত ৫-৬ বছরে দেশে একটি বড় অভিযান চলছে। ছয় বছর আগে যেখানে দেশে মাত্র একটি কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, সেখানে আজ দেশে তিন তিনটি কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আমাদের বিহারে প্রতি বছর বন্যা আসে। সেই বন্যার প্রকোপ থেকে কৃষকদের ফলনকে কিভাবে বাঁচানো যায়, তার উপায় খুঁজে বের করতে মহাত্মা গান্ধী রিসার্চ সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। তেমনই মোতিপুরে মৎস্যচাষ সংক্রান্ত রিজিওনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, মোতিহারীতে পশুপালনের সঙ্গে যুক্ত কৃষি এবং ডেয়ারি বিকাশ কেন্দ্র, এমনই অনেক প্রতিষ্ঠান কৃষিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করার জন্য শুরু করা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

আজ ভারত সেই পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যখন গ্রামের কাছেই এমন ক্লাস্টার গড়ে উঠবে, যেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত শিল্পোদ্যোগ গড়ে উঠবে, আর তার কাছাকাছি সংশ্লিষ্ট খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ গবেষণাকেন্দ্র গড়ে উঠবে। অর্থাৎ, একদিক থেকে আমরা বলতে পারি – ‘জয় কিষাণ, জয় বিজ্ঞান ও জয় অনুসন্ধান’। এই ত্রিফলার শক্তি যখন একজোট হয়ে কাজ করবে তখন দেশের গ্রামীণ জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বিহারের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়েছে।  বিহারে উৎপাদিত ফল, লিচু থেকে শুরু করে জর্দালু আম, আমলকি, মাখানা ছাড়াও এখানকার হস্তশিল্প এবং মধুবনি পেইন্টিংস-এর মত অনেক জনপ্রিয় পণ্য বিহারের জেলায় জেলায় রয়েছে। আমাদের এই লোকাল পণ্যগুলির জন্য আরও বেশি ভোকাল হতে হবে। আমরা লোকালের জন্য যত বেশি ভোকাল হব, ততই বিহার আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে, ততই দেশ আত্মনির্ভর হবে।

 

বন্ধুগণ,

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, বিহারের যুব সম্প্রদায় বিশেষ করে আমাদের বোনেরা আগে থেকেই এই সকল ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। স্ত্রীবিধি ধানের চাষ থেকে শুরু করে লিজে জমি নিয়ে সব্জি চাষ, ‘অজ্জোলা’ সহ অন্যান্য জৈব সারের ব্যবহার, কৃষি ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ‘হায়ারিং সেন্টার’ ইত্যাদির মাধ্যমে বিহারের স্ত্রী-শক্তিও আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে শক্তি যোগাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। পূর্ণিয়া জেলায় ভুট্টার বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ‘আরণ্যক এফপিও’ এবং কোশী এলাকার মহিলা ডেয়ারি কৃষকদের সমবায় সংস্থা কৌশিকী মিল্ক প্রোডিউসার কোম্পানি, এরকম অনেক সমবায় প্রশংসনীয় কাজ করছে। এখন তো আমাদের এরকম উৎসাহী যুব সম্প্রদায়ের জন্য, বোনেদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। ১ লক্ষ কোটি টাকার এই পরিকাঠামো তহবিল থেকে এ ধরনের এফপিও কৃষি উৎপাদক সমবায়গুলিকে, সহকারী-সমবায়গুলিকে, গ্রামের গুদামীকরণ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদামীকরণ এবং অন্যান্য পরিষেবা গড়ে তোলার জন্য খুব সহজেই আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, আমাদের বোনেদের যে স্বনির্ভর সমবায়গুলি রয়েছে, সেগুলিকেও এখন অনেক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। আজ বিহারের পরিস্থিতি এমন যে ২০১৩-১৪ সালের তুলনায় এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ ৩২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে দেশের প্রতি, ব্যাঙ্কগুলির প্রতি, আমাদের বোনেদের সামর্থ্যের প্রতি, তাঁদের শিল্পোদ্যোগ সক্ষমতার প্রতি সরকারের কতটা ভরসা আছে।

 

বন্ধুগণ,

বিহারের গ্রামগুলিকে, দেশের গ্রামগুলিকে আত্মনির্ভর ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র করে তোলার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা লাগাতার বৃদ্ধি পাবে। এই প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে বিহারের পরিশ্রমী বন্ধুদের অংশগ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনাদের কাছে দেশের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। বিহারের মানুষ দেশে হোক কিংবা বিদেশে, নিজেদের পরিশ্রমের মাধ্যমে, নিজেদের প্রতিভার মাধ্যমে নিজেদের পরাক্রম গড়ে তুলছে। আমি বিশ্বাস করি যে বিহারের মানুষ এখন আত্মনির্ভর বিহারের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যও নিরন্তর এ ধরনের কাজ করে চলেছেন। উন্নয়ন প্রকল্পগুলির শুভ সূচনার জন্য আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু আরেকবার নিজের কিছু ভাবনার কথা বলব। আপনাদের কাছে আমার কিছু প্রত্যাশা আছে, সেই কথাগুলি বলব। আমার প্রত্যাশা হল, আপনারা সবাই নিজেদের নিরাপদ রাখবেন, নিয়মিত মাস্ক পড়বেন এবং দু’গজ দূরত্বের নিয়ম অবশ্যই পালন করবেন। নিজে নিরাপদ থাকবেন, অন্যদের নিরাপদ রাখবেন।

 

আপনাদের বাড়িতে যে বয়স্ক মানুষেরা রয়েছেন তাঁদেরকে খুব সামলে রাখবেন। এটা খুব প্রয়োজনীয়। করোনাকে হাল্কাভাবে নেবেন না। আর প্রত্যেক নাগরিককে যতদিন পর্যন্ত না আমাদের বৈজ্ঞানিকরা প্রতিষেধক আবিষ্কার না করেন, ততদিন পর্যন্ত এই সামাজিক ভ্যাক্সিন করোনা থেকে বাঁচার এটাই সর্বোত্তম উপায়। এটাই পথ। আর সেজন্য দুই গজের দূরত্ব, মাস্ক, কোথাও থুতু ফেলবেন না, বয়স্কদের সামলে রাখবেন – এই বিষয়গুলি বারবার আপনাদের মনে করাচ্ছি। আজ আপনাদের মাঝে এসেছি, আরেকবার মনে করাচ্ছি, আমি আরেকবার আপনাদের মাঝে আসার সুযোগ পেয়েছি। সেজন্য রাজ্য সরকারকে, আমাদের গিরিরাজজিকে এবং উপস্থিত সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Related posts

“পিএম সূর্যঘর”: এবার বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্য

E Zero Point

অসহায় বিচারব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষ

E Zero Point

এনসিআরপিবি ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি একাধিক প্রকল্পের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ মঞ্জুর করেছে : দুর্গাশঙ্কর মিশ্র

E Zero Point

মতামত দিন