08/05/2024 : 5:34 PM
আমার বাংলাদক্ষিণ বঙ্গপূর্ব বর্ধমানমঙ্গলকোট

সংখ্যালঘু বলয়ে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর প্রভাব কমছে? 

জিরো পয়েন্ট নিউজ – মোল্লা জসিমউদ্দিন, মঙ্গলকোট, ১ অক্টোবর, ২০২০:


আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট সব দলেরই কাছে ফ্যাক্টর হতে চলেছে। সুনিশ্চিত ভোটব্যাংক হিসাবে শাসকদলের সেই ভিক্তি বাস্তবে কতটা আছে?  তা নিয়ে দ্বিমত ক্রমশ বাড়ছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির অভাবনীয় বাড়বাড়ন্তে সংখ্যালঘু ভোটের একাংশ গেরুয়া শিবিরে পড়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি  কে বিজেপির এজেন্ট হিসাবে দাবি করে রাজ্যবাসী কে সতর্ক করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী এও অভিযোগ করেছিলেন ওই হায়দ্রাবাদের এমপির অনুগামীরা  নাকি টাকার ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ যাই উঠুক – পশ্চিমবাংলায় বিশেষত সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদ – মালদা সহ বেশ কিছু জেলায় শাখা প্রশাখা ক্রমশ বাড়াচ্ছে হায়দ্রাবাদের সংখ্যালঘু সংগঠনটি। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে এই রাজ্যের শাসক দল।

আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিচ্ছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম পার্টি। অপরদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকি  ভাইজানের উপর শাসকদলের হামলার অভিযোগ নিয়েও সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এই হামলার প্রতিবাদে শাসক দলের বিরুদ্ধে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার পীরজাদার অনুগামীরা অবস্থান বিক্ষোভ দেখান। একাধারে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম পার্টি অপরদিকে ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকী ভাইজান এই রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট কে অনেকটাই প্রভাবিত করতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মানছেন।

সর্বপরি মুকুল রায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হওয়াতেও সংখ্যালঘু ভোটে চিড় ধরবে। কেননা ব্যক্তি মুকুল রায় একদা তৃনমূলের সেকেন্ড ম্যান হিসাবে দীর্ঘদিন থাকায় তাঁর নিজস্ব একটা বলয় রয়েছে সংখ্যালঘুদের মধ্যে। কেননা তিনি একসময় বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনের সাথে তৃণমূলের যোগসূত্র হিসাবে কাজ করেছেন। তাঁর এহেন ভূমিকা বিজেপির পক্ষে লাভদায়ক হতে পারে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে। এই রাজ্যের শাসক দলের সংখ্যালঘু মুখ হিসাবে তেমন কেউ নেই বললেই চলে। রেজ্জাক মোল্লাদের মত যারা বাম ঘরোনায় থেকে তৃণমূলে এসেছেন। তাঁদের তৃণমূলের অন্দরেই নেই সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা!  এইরুপ দাবি দলের ভেতরেই।

মঙ্গলকোটের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী  সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তাঁর জমিয়ত উলেমা হিন্দের সংগঠন কে তৃনমূলের পক্ষে পরোক্ষভাবে ভোটব্যাংকে লাভদায়ক করলেও বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। সম্প্রতি জমিয়ত উলেমা হিন্দের ওয়ার্কিং কমিটি জানিয়েছে যে – আসন্ন বিধানসভা ভোটে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী দাঁড়াবেন কিনা তা ঠিক করবে এই কমিটি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর যে ইমেজ ছিল সংখ্যালঘুদের মধ্যে। তার সিকিভাগ বর্তমানে আছে কিনা তা নিয়ে উঠেছে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। ২০১৬ সালের আগে বীরভূমের সিউড়ির পুলিশ লাইন ( ব্রিগেডের মাঠের মতন)  এর মাঠে একক সংগঠনে কয়েক লক্ষ লোক এনেছিলেন। ইলামবাজার – লাভপুর – নানুরে যে দাপট ছিল বিশেষত মাদ্রাসাগুলিতে। তা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নানুরের বাসাপাড়া সংলগ্ন এক মাদ্রাসা যেভাবে সহযোগিতা করতো। তা বর্তমানে অনেকটাই ফিকে।  যেভাবে গত বিধানসভা ভোটে একশো আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করে মাত্র দুটিতেই সন্তুষ্ট থেকেছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তাও তৃনমূলের প্রতীকে প্রার্থীপদ । সরাসরি তৃনমূলে যোগদান কে জমিয়তের বড় অংশ সমর্থন করেনি। এই নিয়ে জমিয়ত উলেমা হিন্দের কর্মী সমর্থকরা দ্বিধাভক্ত হয়েছ। বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় এই নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে প্রতিবাদী জমিয়তের কর্মী সমর্থকরা। নিজ বিধানসভা কেন্দ্রে যেভাবে দলের স্থানীয় নেতাদের দ্বারা কালো পতাকা সহ অশ্রাব্য গালিগালাজ শুনেছিলেন মঙ্গলকোটের খতিয়ার মোড়ে তা নিয়ে যেমন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনরকম ব্যবস্থাগ্রহণ তো দুর অস্ত নিন্দা পর্যন্ত জানাইনি৷ তাতে জমিয়তের বড় অংশ ক্ষুব্ধ ছিল তৃনমূলের সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর উপর। কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের একদা ইমাম বরকতির উপর গাড়িতে  লালবাতি লাগানো নিয়ে সরাসরি মসজিদের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন কর্মসূচি নিয়েছিলেন। তাতে অনেকেই তৃনমূলের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ বলে মনে করেন।এই ঘটনায় সংখ্যালঘুদের বড় অংশ সিদ্দিকুল্লাহের ওই অবস্থান কে সমর্থন দেয়নি। গত পঞ্চায়েত ভোটে নিজস্ব অনুগামীদের দলীয় প্রতীক দিতে যেভাবে শীর্ষ নেতৃত্বর কাছে ‘প্রতারিত’ হয়েছিলেন তাতে মঙ্গলকোটের অনুগামীরা তো বটেই জমিয়ত উলেমা হিন্দের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। মঙ্গলকোটে শতাধিক কর্মী শাসক দলের ক্ষমতাসীন গ্রুপের ষড়যন্ত্রে মিথ্যা পুলিশ কেসে জেলবন্দি হয়েছিল। বেশিরভাগই গাঁজা মামলা। যদিও ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব ও  পুলিশের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহে আসানসোলে তৃনমুলের সংখ্যালঘু সংগঠনের এক সভায় সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন – ” হায়দ্রাবাদ থেকে এক পাখি উড়ছে তবে এখানে সে ডিম পাড়তে পারবেনা “। ওয়াকিবহাল মহল জানাচ্ছে – হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম পার্টি কে নিয়ে এই মন্তব্য করছেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী।সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে তৃনমূল খুবই চিন্তিত, তাই সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে মাঠে ময়দানে নামতে হচ্ছে বলে অনেকেই বলছেন। যাই হোক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী সাহেব জানান – ” করোনায় সারা রাজ্য জুড়ে জমিয়ত উলেমা হিন্দের পরিচালনায় কয়েক কোটির ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। হিন্দু মুসলিমদের সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করে জমিয়ত “। বাংলায় একাধারে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম পার্টির আগমন, অপরদিকে ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজানের কট্টর শাসক বিরোধিতা।সর্বপরি ব্যক্তি মুকুল রায়ের ভূমিকা এই রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটে অনেকটায় ফ্যাক্টর হতে চলেছে আগামী বিধানসভা ভোটে। ২০১৬ সালে জমিয়ত উলেমা হিন্দের পক্ষে একশো আসন থেকে কমে মাত্র দুইয়ে আসা তাও সরাসরি তৃনমূলে যোগদানের মাধ্যমে,এটা মানতে পারেনি জমিয়তের একাংশ । মঙ্গলকোটে পদে পদে অসহযোগিতা সহ বিভিন্ন ঘটনাবলি গুলি জমিয়তের বড় অংশ গুলি কে ক্ষুব্ধ করেছে। তাই সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সেই আগেকার দাপট বর্তমানে কতটা সংখ্যালঘুদের মধ্যে রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

Related posts

‘আনন্দমঠ’ আশ্রম দোল উৎসবে মেতে উঠল

E Zero Point

মেমারিতে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী

E Zero Point

রাজ্যের সকলকে বিনামূল্যে করোনার টীকাঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

E Zero Point

মতামত দিন