30/04/2024 : 11:52 PM
আমার বাংলা

আপনার অধিকারঃ কোন রাজনৈতিক দল চায় না, সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক ভাবে সচেতন হন


♦ হেমলতা কাজ্ঞিলাল


জিরো পয়েন্ট প্রতিবেদন


ভারতীয় সংবিধান বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান। এই সংবিধান হল দেশের মৌলিক ও সর্বোচ্চ আইন এবং সরকারের যাবতীয় ক্ষমতার উৎস। সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা আছে‌। প্রস্তাবনাকে সংবিধানের মুখবন্ধ বা ভূমিকা বলা হয়। প্রস্তাবনায় ভারতকে” সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্ম নিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক সাধারণ তন্ত্র” হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব ভোট দোরগোড়ায় উপস্থিত। তাই গণতন্ত্রের উপর বিশেষ ভাবে আলোকপাত করছি। ভারতের শাসন ব্যবস্থা গনতান্ত্রিক। সার্বিক প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভারতের শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। “আমরা ভারতের জনগন” শব্দ গুচ্ছ দিয়ে প্রস্তাবনাটি শুরু হয়েছে, অর্থাৎ ভারতের জনগনই হলো সংবিধানের উৎস ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।

বাস্তব কিন্তু সেই কথা বলে না। জনগন তাদের রাষ্ট্রনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত। যেসকল জন প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন তারাই হয়ে উঠেন প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। সাধারণ মানুষ হন শোষিত এবং শাষিত, নিপীড়িত ও অত্যাচারিত।

সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকার এবং চতুর্থ অধ্যায়ে নির্দেশমূলক নীতি গুলিকে একযোগে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে ভারতীয় সংবিধানের রচয়িতারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক গনতন্ত্রের সমন্বয়ের ভিত্তিতে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থা, সাধারণ মানুষের নিজের অধিকার সম্বন্ধে অজ্ঞতা সেই জনকল্যাণমূলক রাস্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি নাড়িয়ে শুধু জনপ্রতিনিধিদের কল্যানকর ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বাধীনতার এত বছর পরও সাধারণ মানুষকে খুব সুচতুর ভাবেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তথা শিক্ষা থেকে দূরে রাখা হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দলই চায়নি সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক ভাবে সচেতন হন, যুক্তিবাদী হন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হন, নিজের বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করে সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচিত করুন, যাতে জনগনের সার্বিক উদ্দেশ্য সাধিত হয়, তথা কল্যানকর রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই ক্ষেত্রে উল্লেখ্য প্রথম শ্রেনী থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের কোন অংশ পড়ানো হয় না। ফলে ছাত্রাবস্থা থেকে তাদের মধ্যে ভারতীয় সংবিধানে বর্নিত কোন অধিকারবোধ জাগরিত হয় না। এই ভোট তাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়। দেশের সাধারণ মানুষ ততক্ষণ না পর্যন্ত রাজনৈতিক ভাবে সচেতন হচ্ছেন, অবগত হচ্ছেন, সর্বোপরি শিক্ষিত হচ্ছেন ততদিন ভারতবর্ষে প্রকৃত গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। তাই ভারতে বসবাসকারী প্রতিটি ব্যক্তির সংবিধান জানা অত্যন্ত আবশ্যক বলে আমি মনে করি।

পঞ্চায়েত, পৌরসভা, বিধানসভা, লোকসভার মাধ্যমে জনগন কী কী পরিষেবা পেতে পারে, কী তাদের অধিকার, কতজন জানেন বলুন তো? এই বিষয়টি জানা কী আবশ্যিক নয়? কাউন্সিলর, এম এল এ, তথা এম পি পদপ্রার্থীর কী কী যোগ্যতা, গুনাবলী বা দোষ ত্রুটি আছে সেই সম্পর্কে দেশের জনগণকে অবহিত করা কী নির্বাচনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?

সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রে নূন্যতম মাস মাইনের একটি চাকরী পেতে গেলে সাধারণ মানুষকে একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। অথচ এই দূর্ভাগা দেশে যারা পঞ্চায়েত, পৌরসভা, রাজ্য তথা দেশ চালাচ্ছেন তাদের কোন কিছুরই যোগ্যতা মানের প্রয়োজন হয় না। এই দেশ তারাই শাসন করছেন যারা বিওবান, সম্পদশালী পেশি শক্তি প্রদর্শনে বলীয়ান, দেশের আইনকানুন নিয়ে ছেলেখেলায় সিদ্ধহস্ত, নানা প্রকার অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত, তাছাড়া নানা অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত, মারামারি, খুনোখুনি, হানাহানিতে তারা সর্বশেষ্ঠ, এক কথায় সমাজবিরোধী। তাদের হাতেই আছে পঞ্চায়েত, পৌরসভা, রাজ তথা দেশের নিয়মনীতি, আইনকানুন নির্ধারন তথা পরিচালনার ভার।

ফলে দেশের এই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় সংবিধান সম্বন্ধে জন মানসে যথেষ্ট ধারণা না থাকায় কিছু বাহুবলী সমাজবিরোধী এই সুযোগে দেশকে ক্যান্সারের ন্যায় আক্রান্ত করেছেন। জাগো গ্রাহক জাগো গ্রাহক বিজ্ঞাপন আমরা প্রায়শই দেখে থাকি কিন্তু জাগো ভোটার ভোটার জাগো তোমরা তোমাদের জন প্রতিনিধি বেছে নাও, এমন বিজ্ঞাপন দেখা যায় না। সাধারণ মানুষের এই অজ্ঞতা ও নিজের অধিকার সম্পর্কে ধারণা জাগিয়ে তোলবার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হবে।

বিভিন্ন বিষয়ে ভারতীয় সংবিধান শতাধিক বার সংশোধিত হওয়া সত্ত্বেও ঘুষখোরী, তোলাবাজি দূর্নীতি পরায়ন এই রকম নানারকম অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত কোন কাউন্সিলর, এম এল এ তথা এম পি দের ভোট প্রার্থী প্রার্থী করা যাবে না, এমন সংশোধনী কেন আসবে না। মনে রাখতে হবে গর্ভমেন্ট অফ দ্য পিউপিল,বাই দ্য পিউপিল,ফর দ্য পিউপিল। দেশের আপামর জনসাধারণ যখন আক্ষরিক অর্থ বুঝবে, সেই দিন কিন্তু মানুষ ঐক্যবদ্ধ ভাবে গর্জে উঠবেন,প্রতিটি অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আবার ও বিপ্লব সংগঠিত হবে। অনেক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইংরেজদের গোলামী থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে।কিন্তু প্রকৃত স্বাধীনতা আসেনি।

আমি সেই নতুন ভোরের অপেক্ষায় যেদিন সাধারণ মানুষ আবার ও এক বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়াজ তুলবে, অত্যাচারি শোষক-শাসকের বল পূর্বক গদি থেকে টেনে নামাবে। হীরক রাজার দেশের ন্যায় জনগন সংগঠিত হয়ে বলতে পারবে “দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান। “এ পেন‌ ইস এ মাইটার দ্যান আ শোর্ড, এটা আজও প্রাসঙ্গিক কীনা এই লেখ বন্ধনীর মাধ্যমে তা বিবেচনাধীন।

Related posts

তৃণমূলের কর্মী সম্মেলন পূর্বস্থলীতে

E Zero Point

দিন মজুরের কাজ করে কাটোয়ার মিনা টুডুর ৮৪% নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ

E Zero Point

জেনে নিন মেমারি ১ পঞ্চায়েতের বাগিলা অঞ্চলের বিস্তারিত ফলাফল

E Zero Point

মতামত দিন