শ্রীমন্ত ঘোষ
“রবি শশী তারা প্রভাত-সন্ধ্যা তোমার আদেশ কহে-
এই দিবা রাতি আকাশ বাতাস নহে একা কারো নহে।
এই ধরণীর যাহা সম্বল,-
বাসে-ভরা ফুল, রসে-ভরা ফল,
সু-স্নিগ্ধ মাটি, সুধাসম জল,
পাখীর কন্ঠে গান,-
সকলের এতে সম অধিকার, এই তাঁর ফরমান!’
ভগবান! ভগবান!”
বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামের ‘ফরিয়াদ’ আজও শোনেননি আমাদের রাষ্ট্রনেতারা। আসলে সামাজিক অসাম্য সেদিনই শুরু হয়েছিল, যেদিন থেকে মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবনতা তৈরি হয়েছিল। যখন বিনিময় প্রথা চালু ছিলো, অর্থাৎ একজনের কষ্টার্জিত ফসল, শিল্প বা কাজের বিনিময়ে অন্যের কষ্টার্জিত ফসল, শিল্প বা কাজ আমরা ভাগ করে নিতাম, তখন সমাজে ধনী দরিদ্রের প্রভেদ ছিলোনা। কেউ আলাদাভাবে ধনী বা দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিতই ছিলো না। সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত ছিল তখন। ধীরে ধীরে মূদ্রার প্রচলন শুরু হলো এবং সেইসঙ্গে শুরু হলো সঞ্চয় প্রবণতা। কে বেশি মুদ্রা সঞ্চয় করতে পারে তার কাজ, বুদ্ধি বা চালাকির দ্বারা তার প্রতিযোগিতা শুরু হলো সমাজে। কারণ মুদ্রার বিনিময়ে যাবতীয় দ্রব্য ক্রয় করার রীতি চালু হলো। এমনকি শারীরিক শ্রমও কিনে নেওয়া গেল মুদ্রার বিনিময়ে।খুব স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক মানুষের মধ্যে তৈরি হলো অপরকে বঞ্চিত করার প্রবণতা। কত কম মুদ্রার বিনিময়ে, কত বেশি দ্রব্য বা শ্রম কেনা যায় তার প্রতিযোগিতা শুরু হলো। তৈরি হলো সামাজিক অসাম্য, যা বর্তমানে মানবজাতির জন্য সবথেকে বড়ো অভিশাপ সারা বিশ্বজুড়ে।
এর আগেও আমার দেশ তথা সারা বিশ্বজুড়ে একাধিক মন্বন্তর এবং সিভিল ওয়ার দেখেছে। দূর্ভাগ্যবশতঃ আবারও হয়তো সেরকমই কোনোকিছুর সম্মুখীন হতে চলেছি আমরা, যদি আমরা সচেতনভাবে সেটার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জনমত গড়ে তুলতে না পারি। জাতিসংঘের সমীক্ষা অনুযায়ী আগামী পৃথিবীতে, প্রতি বছর, প্রায় তিন লক্ষ মানুষ অনাহারে মারা যাবে। কিন্তু একদল মানুষ কেবলমাত্র এই যুক্তিতে তখনও টিকে থাকবে, যেহেতু তাদের পূর্বপুরুষেরা বা তারা নিজেরা পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পেরেছে তাদের বুদ্ধি, শ্রম বা চালাকির মাধ্যমে। তৈরি হবে অভিযোজনের নতুন নিয়ম এবং অবশ্যই যেটা অমানবিক। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা যারা এটাকে অমানবিক মনে করছি তারা কি করতে পারি এই ভবিষ্যতের কথা আন্দাজ করে ….??
অনেককিছুই করতে পারি ঐক্যবদ্ধ ভাবে। জনমত গড়ে তুলে, আবারও রাষ্ট্রশক্তিকে বাধ্য করতে পারি সাম্যবাদ ফিরিয়ে আনতে। নূন্যতম বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু গনবন্টনের মাধ্যমে বিনামূল্যে যোগান দিতে বাধ্য করতে পারি শাসককে। এই দাবিসমূহ তুলে ধরা যাদের দায়িত্ব ছিলো সেই গনমাধ্যমগুলি দূর্ভাগ্যবশতঃ বিক্রিত এবং বিকৃত হয়ে গেছে। অগত্যা, সমাজসচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আমরাই তুলে আনবো সকল দূর্দশাগ্রস্থ প্রান্তিক মানুষদের দুঃখের কথা। ছড়িয়ে দেবো সেই অসাম্যের দৃশ্য সমাজের প্রতিটি স্তরে। আমাদের যাদের কাছে এন্ড্রোয়েড ফোন আছে, তারা প্রত্যেকেই হয়ে উঠবো এক একজন সাম্যবাদী রিপোর্টার। শ্রদ্ধেয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাজদর্শন অনুযায়ী,”ক্ষতে ভরা নিজের মুখখানিকে অতি সুন্দর মনে করার ভ্রান্তিটা, নিষ্ঠুরের মতো মুখের সামনে আয়না ধরে ভেঙে দিতে পারলে, সমাজ চমকে উঠবে …… মলমের ব্যবস্থা করবে”।আর মলমের ব্যবস্থা যদি না হয়, তাহলে তা ছিনিয়ে নেওয়ায় জন্য বিপ্লব গড়ে তুলতে হবে।
আমরা যেটা খুব সহজেই করতে পারি সেটা হলো, নিজ নিজ অঞ্চলের দূর্দশাগ্রস্থ মানুষদের অবস্থা ছবি, ভিডিও বা প্রতিবেদনের আকারে ছড়িয়ে দিতে পারি সোসাল মিডিয়ায়। এটা করার জন্য আমরা একটা ফেসবুক গ্রুপ এবং একটা ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছি। সেখানে আপনারা স্বাধীনভাবে আপনাদের ছবি এবং ভিডিও পোষ্ট করতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও পোষ্ট করার জন্য আমরা একটা Whatsapp নম্বর দেবো, যেখানে আপনারা সরাসরি ভিডিও সেন্ড করতে পারেন। সেই ভিডিও আমরা ইউটিউবের মাধমে ছড়িয়ে দেবো। ফেসবুকের ক্ষেত্রে, যত বেশি মানুষকে সম্ভব যুক্ত করুণ এই গ্রুপে। যেকোনো পেশার, যেকোনো মানুষ যুক্ত হতে পারেন। ইউটিউবের ক্ষেত্রে, আপনার সাধ্যমতো ছড়িয়ে দিন লিঙ্কগুলিকে এবং বেশি বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিন ভিডিও গুলিকে। চ্যানেলটাকে Subscribe করুন এবং এই লড়াইয়ে যুক্ত থাকুন।
আসুন, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে এই লড়াইয়ের সৈনিক হই এবং রাষ্ট্রশক্তিকে বাধ্য করি এই অসাম্য দূর করার ব্যপারে পদক্ষেপ নিতে। আমাদের এই প্রয়াসই হয়তো আবারও আমাদের শাসকদের বাধ্য করবে সাম্যবাদী চিন্তাভাবনা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে।
আমাদের ফেসবুকে পেজের লিঙ্ক :- https://www.facebook.com/groups/251877486182166/
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের লিঙ্ক :- https://youtu.be/FvPG8wbdo8U
হোয়াটসএপ নম্বর : ৯৯৩৩৫২৫২২৪
শিক্ষক ও সমাজকর্মী মইদুল ইসলাম (৯৮৭৪৬০৭৭৩১) ও শ্রীমন্ত ঘোষ(৭৬০২৬৫০২০০)
সুমন কল্যাণ হাটী(৯৭৩৪৮৪৬১৭১)