24/04/2024 : 9:45 AM
আমার দেশব্যবসা বণিজ্য

প্রসঙ্গ চীনঃ স্বদেশী পণ্য নির্ভর অর্থনীতি তৈরিতে একজন সাধারণ ক্রেতার ভূমিকা

একগুচ্ছ প্রশ্ন -
কেন চীনা জিনিস কিনব না, দেশীয় পণ্য কিনব?
লাইটার থেকে ব্রাশ সব কিছুই তো চীনে তৈরি। কীভাবে চীনা জিনিস ত্যাগ করব?
ইতিমধ্যেই কেনা চীনা জিনিসগুলো কি তবে ফেলে দেব?
তাহলে কীভাবে বয়কট হল?
সরকার কেন চীন থেকে জিনিস আমদানি করছে? কেন চীনা জিনিস ব্যান করছে না?

পার্থসারথি তাপস


কোনো দেশের শিল্প তখনই স্বনির্ভর হতে পারে যখন সেই দেশের ক্রেতাদের তা সমর্থন পায়। যে সমস্ত দেশ আজ শিল্পে অগ্রণী সেই দেশের ক্রেতাদের অকুণ্ঠ সমর্থনই শিল্পগুলিকে বিকশিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অবশ্যই এই কাজে দেশের সরকারেরও সমর্থন প্রয়োজন। সরকারকে সচেতন ভাবে অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটির সাহায্যে দেশের বাজারে শস্তা পণ্যে ভরে দিয়ে স্বদেশী শিল্পকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চেষ্টাকে রুখে দিতে হবে। চীনের মতো দেশ ডাম্পিং নীতির সাহায্যে অন্য দেশের বাজার সস্তা পণ্যে ভরে দিয়ে স্বদেশী শিল্পকে প্রথমে শুকিয়ে মেরে ফেলে তারপর সে দেশকে চিরতরে চীনা পণ্যের উপর নির্ভর করে তোলে। এ এক নয়া অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ। এটা রোখার জন্য সরকারের যেমন ভূমিকা রয়েছে তেমনি ক্রেতারও ভূমিকা রয়েছে। ক্রেতা যদি বলে স্বদেশী পণ্যই কিনব, তবে এই ষড়যন্ত্র সফল করা বিদেশী রাষ্ট্রের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়।

দুর্ভাগ্যের বিষয়,  স্বদেশী পণ্য কেনার প্রসঙ্গ এলেই এ দেশে স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও অনেক প্রশ্ন ওঠে। আর এই প্রশ্ন যখন এক কালে গ্যাট চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা ও বিশ্বায়নের বিরোধীতা করা তোলেন তখন তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

তো, স্বদেশী পণ্য কেন কিনব এবং চীনা পণ্য বর্জন কেন প্রয়োজন তা নিয়ে যে প্রশ্নগুলি করা হয় তার উত্তরগুলো ক্রেতাসাধারণের জানা প্রয়োজন। সেগুলি একের পর এক নীচে সাজিয়ে দিলাম-

১) কেন চীনা জিনিস কিনব না, দেশীয় পণ্য কিনব?

কারণ ভারতীয় পণ্য কিনলে দেশের অর্থনীতি মজবুত হবে। দেশে তৈরি কারখানায় দেশের ছেলেমেয়ে চাকরি পাবে। দেশের গবেষণা ও প্রযুক্তি মজবুত হবে। লাভের টাকা দেশে পুনর্বিনিয়োগ হবে। আপনার স্মরণে থাকতে পারে, সরকারের করোনা ফান্ডে দান করেছে কিন্তু ভারতীয় কোম্পানিগুলিই, কোনো বিদেশী কোম্পানি না।

মনে রাখতে হবে, চীনের নীতি হল সস্তা জিনিস ভারত এবং অন্যান্য দেশের বাজারে ডাম্প করে সে দেশের বাজারকে দখল করা এবং সেই দেশের শিল্পোদ্যোগকে পঙ্গু করে দেওয়া। আমরা চীনা জিনিস কিনলে লাভের টাকা চলে যায় চীনে। সেই টাকা চীনা সেনাবাহিনীর হাতে যাবে যারা আমাদের দেশের বেশ কিছু অংশ ইতিমধ্যে দখল করে রেখেছে এবং আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে আরও এলাকা দখল করতে চায়। আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়ে যারা সেনাবাহিনীতে কাজ করে তাদের আমাদের কাছে লুঠ করে নিয়ে যাওয়া টাকায় কেনা অস্ত্রেই হত্যা করবে। তাছাড়াও, চীন আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া মুনাফার টাকা পাকিস্তান সরকার এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে দেয় যারা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে হত্যা করার জন্য এবং দেশকে টুকরো করার জন্য ভারতবিরোধী সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেয় এবং অর্থসাহায্য করে। নিত্যনৈমিত্তিক সীমান্তের গুলি চালিয়ে আমাদের বাড়ির সন্তানদের হত্যা করে। পাকিস্তানের এই বর্বরতার সব থেকে বড় মদতদাতা চীন।

কীভাবে চীন ভারতে প্রোডাক্ট ডাম্প করে ভারতীয় অর্থনীতির সর্বনাশ করছে এই লিংকে পড়ুন।

https://www.business-standard.com/…/how-chinese-goods-are-c…

২) লাইটার থেকে ব্রাশ সব কিছুই তো চীনে তৈরি। কীভাবে চীনা জিনিস ত্যাগ করব?

সব কিছুই চীনে তৈরি নয়। তবে চীনা জিনিস যদিও টেকে কম তবু অপেক্ষাকৃত কম দামের বলে অনেকের প্রিয়। একটু খোঁজ করলেই বাজারে ভারতীয় প্রোডাক্ট যেমন পাবেন, তেমনি চীন বাদে অন্যান্য বিদেশী ব্র্যান্ডের জিনিসও বাজারে পাওয়া যায়। প্রচুর ওয়েবসাইট আছে যারা বিভিন্ন দেশীয় প্রোডাক্টের হদিশ দেয়।

নীচের লিংকে ক্লিক করে বহু স্বদেশী পণ্যের হদিশ পাবেন। যেগুলোর অনেকগুলি হয়তো আপনার চেনা কিন্তু জানতেন না স্বদেশী প্রোডাক্ট।

http://greatofindia.com/list-of-swadeshi-or-indian-products/

৩) ইতিমধ্যেই কেনা চীনা জিনিসগুলো কি তবে ফেলে দেব?

যেগুলো পয়সা দিয়ে ইতিমধ্যেই কিনেছেন সেগুলো ফেলে দেবেন কেন? ফেলে দিলে চীন কি আপনার টাকাটা ফেরত দেবে? তবে যাতে লোকসান তেমন নেই, যেমন বিভিন্ন চাইনিজ অ্যাপ ইত্যাদি আনইন্সটল করে দেশীয় অ্যাপ ইন্সটল করে নেওয়াই যায়। তাছাড়া চাইনিজ অ্যাপের ডেটা চুরি ইত্যাদির অভিযোগ তো আছেই।

৪) তাহলে কীভাবে বয়কট হল?

পরবর্তীকালে কিছু কিনতে গেলে দেশীয় বিকল্পের কথা বিবেচনা করে কেনা যায়। জাস্ট সামান্য কিছু সস্তা হচ্ছে বলে চাইনিজ প্রোডাক্ট নাই বা কিনলাম। এমন নয় বাজারে শুধু চীনা জিনিসই আছে। চীন ছাড়া অন্য দেশের সংস্থা যেমন দঃ কোরিয়া, জাপান, জার্মানির তৈরি জিনিসও মার্কেটে অ্যাভেলেবল এবং তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট ভারতেই রয়েছে। যেগুলোর গুণমান চীনা প্রোডাক্টের থেকে বহুগুণ ভালো। তবে ভারতীয় প্রোডাক্ট কেনা সবসময়ই বেস্ট চয়েস। তবে যতদিন না এই জিনিসগুলির ভারতীয় প্রোডাক্ট বাজারে না আসে মেড-ইন-ইন্ডিয়া বিদেশী প্রোডাক্ট দিয়ে চালান। কারণ সেই কারখানায় দেশের ছেলেমেয়ে কাজ করে। দেশের সরকার ট্যাক্স পায়।

৫) সরকার কেন চীনের বিকল্প তৈরি করছে না?

বর্তমানে বিকল্প অর্থনীতি তৈরির কথাই বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। তারজন্য সরকার প্রায় ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। মেক ইন ইন্ডিয়ার মাধ্যমে দেশীয় প্রযুক্তি এবং দেশে বিভিন্ন জিনিসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। স্বনির্ভর ভারত তৈরির উদ্যোগ তো স্বদেশী ইন্ডাস্ট্রিকে তৈরি করার উদ্যেশ্যেই। তাছাড়া অনেক বিদেশী কোম্পানি চীনে প্রোডাকশন লাইন গুটিয়ে ভারতে বিনিয়োগ করতে চাইছে। তাদের হাত ধরেও ভারতে বড় শিল্পোদ্যোগ তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে বিকল্প তৈরির জন্য স্বদেশী শিল্পোদ্যোগ যেমন দরকার তেমনি দরকার দেশের সাধারণ মানুষের স্বদেশী পণ্যের প্রতি ভালোবাসা। দেশীয় ক্রেতারা না কিনলে সমস্ত স্বদেশী শিল্পোদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। স্বদেশী ক্রেতার মনে জায়গা করে নিতে পারলে সেই পণ্য একদিন বিদেশী ক্রেতার মনেও জায়গা করে নিতে পারবে। দেশী ব্র্যান্ডই একদিন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডে পরিণত হবে।

৬) সরকার কেন চীন থেকে জিনিস আমদানি করছে?  কেন চীনা জিনিস ব্যান করছে না?

সরকার কোনো সময়েই চীন বা অন্য কোনো দেশের দ্রব্য জনসাধারণকে বয়কট করতে বলে নি। কারণ সরকারকে GATT এর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, নিয়মবিধি  ইত্যাদি মেনে চলতে হয়। তাই সরকার সরাসরি কখনোই একতরফা কোনো দেশের জিনিস ব্যান করতে পারে না। এতে দেশ আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা থেকে শুরু করে অনেক বড় সমস্যায় পড়তে পারে। তবে ক্রেতাই যেহেতু মার্কেটে শেষ কথা বলে তাই সাধারণ মানুষ যদি কোনো দেশে তৈরি জিনিস কিনব না বলে এবং বয়কট করে তবে কারোরই কিছু করার নেই। কারণ ক্রেতাই শেষ কথা বলে। তাই দেশের স্বার্থে চীনা পণ্য বয়কটের দাবী জনসাধারণের।

৭) স্বনির্ভর দেশীয় শিল্প তৈরিতে কতদিন লাগবে? তাতে আমার ভূমিকা ঠিক কী?

কোনো দেশেরই দেশীয় দ্রব্য ও তার উৎপাদনকারী সংস্থা স্বদেশী ক্রেতার সমর্থন না পেলে কিছুতেই ব্র্যান্ড হিসাবে দাঁড়াতে পারে না। চীনা সংস্থাগুলিও দাঁড়িয়েছে তাদের স্বদেশী ক্রেতাদের সমর্থনের কারণেই। তারা না কিনলে, না সমর্থন দিলে চীনা মোবাইল কোম্পানিগুলি কখনোই এর বড় ব্র্যান্ড হতে পারত না। চীনে গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক সবই নিষিদ্ধ। কিন্তু তারা এগুলোর বিকল্প সার্চ ইঞ্জিন, পোর্টাল ইত্যাদি তৈরি করে নিয়েছে। চীনা প্রোডাক্ট না কিনলেও কীভাবে স্বদেশী শিল্প এবং প্রযুক্তিকে প্রমোট করতে হয় তা চীনাদের কাছে শিক্ষণীয়। আমাদের দেশে ক্রেতাদের যদি সমর্থন থাকে তবে ২ থেকে ৩ বা ৫ বছরে স্বদেশী শিল্প ও অর্থনীতির বিকাশ আমরা অবশ্যই দেখতে পাবো বলে আমার বিশ্বাস।

৮)  সরকার কেন এত উপকরণ চীনের কাছে কেনে? কেন চীনা কোম্পানির কাছে সেনাবাহিনীর জ্যাকেট কিনেছে?

যেগুলো খুব বড় বড় আন্তর্জাতিক ওপেন টেন্ডার তাতে অন্যান্য দেশের মতোই চীনা কোম্পানিগুলোও যোগদান করতে পারে। তারা যদি টেন্ডারের শর্ত মেনে সর্বনিম্ন দাম রাখে এবং অন্যান্য শর্তাবলী মানে তবে সরকার আন্তর্জাতিক নর্ম অনুযায়ী সেই কোম্পানিকে ভারত সরকার অর্ডার দিতে বাধ্য। তবে উপযুক্ত ভারতীয় কোম্পানি যদি ভবিষ্যতে সর্বনিম্ন রেট দিতে পারে অবশ্যই তারাই টেন্ডার জিতবে। আর এক্ষেত্রে জ্যাকেট কেনা হয়নি জ্যাকেটের কাপড় সাপ্লাইয়ের টেন্ডার জিতেছিল চীনা একটি কোম্পানি।

ভারত সরকার সম্প্রতি বিদেশী কোম্পানি যোগ দিতে পারবে না এবং শুধু মাত্র দেশীয় কোম্পানিই টেন্ডারে যোগ দিতে পারবে এমন টেন্ডারের সীলিং বাড়িয়েছে। ফলে আরও বেশি পরিমাণ টেন্ডারে শুধুমাত্র দেশীয় কোম্পানিরাগুলিই প্রতিযোগিতা করতে পারবে। এতে দেশীয় শিল্প প্রোটেকশন পাবে।

৯)  ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ কি চীনে বানানো?

না, স্ট্যাচু অফ ইউনিটি চীনে বানানো হয়নি। এটা তথ্যগতভাবে ভুল। এটি সম্পূর্ণ ভারতেই তৈরি করেছে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো কোম্পানি। শুধুমাত্র বাইরের দিকের কিছু প্যানেল তৈরির অর্ডার একটি চিনা কোম্পানিকে দেয় এল অ্যান্ড টি এবং তারা সেগুলি সরবরাহ করে। এটি মূল মূর্তিটি তৈরির খরচের সামান্য একটি ভগ্নাংশ (৭%)মাত্র।

১০)  আমাদের দেশে ওষুধ কি সব চীন থেকে আমদানি করা হয়?

না, এটা একটা বিভ্রান্তিমূলক অর্ধসত্য প্রচার। সব ওষুধ সরাসরি চীন থেকে আমদানি করা হয় না। ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি অনেক রয়েছে। তারা এদেশেই ওষুধ তৈরি করে। বিদেশেও ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলি বহু হাজার কোটি টাকার ভারতীয় ওষুধ রপ্তানি করে। আয়ুর্বেদিক ওষুধের একটি বড় বাজারও সম্প্রতি তৈরি হয়েছে। ভারতীয় আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানিগুলিও বিদেশে বহু ওষুধ রপ্তানি করে থাকে। তবে আমাদের দেশে ওষুধের কাঁচামাল যেমন স্বদেশী কয়েকটি কোম্পানি তৈরি করে, তেমনি ওষুধ শিল্পের অনেক কাঁচামাল চীন সহ অন্যান্য দেশ থেকেও আমদানি করা হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এই কাঁচামালগুলি ভবিষ্যতে কখনোই আমাদের দেশে তৈরি করা সম্ভব না। এই কাঁচামালগুলি যাতে আমাদের দেশে তৈরি করা যায় তার উপযুক্ত পরিকাঠামো অবশ্যই সরকার এবং স্বদেশী উদ্যোক্তাদের গড়ে তুলতে হবে।

নীচের লিংকে ক্লিক করে দেখতে পারেন কীভাবে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট প্রতি বছর বাড়ছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষেই ভারত বিদেশে ১৯.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ রপ্তানি করেছে, যা সর্বকালীন রেকর্ড।

https://www.statista.com/…/india-value-of-pharmaceutical-e…/

১১)  তাহলে কি মরে গেলেও আজ থেকে কি কোনো চীনা জিনিসই কিনব না?

স্বদেশী দ্রব্যের বিকল্প হাতের কাছে থাকলে অবশ্যই ভালো। সেটাই প্রথমে খোঁজা উচিত। তারপর বিদেশী কোম্পানির মেড-ইন-ইন্ডিয়া প্রোডাক্ট। তবে যেগুলোর কারখানা দেশের বাজারে আপাতত একেবারেই নেই সেগুলি অন্য দেশের তৈরি হলেও বা এমনকি চীনে তৈরি হলেও কিনতে পারেন। এমন নয় যে এ থেকে জেড সমস্ত পণ্য সবই কয়েক বছরের মধ্যেই দেশে তৈরি হতে শুরু হবে। হয়তো সব পণ্য তৈরি করা পৃথিবীর কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়। চীনকে বা আমেরিকাকেও অন্য অনেক দেশ থেকে প্রোডাক্ট আমদানি করতে হয়। ভারত থেকেও প্রচুর কাঁচামাল চীনে রপ্তানি করা হয়।

১২) দামে এবং গুণমানে বিদেশী জিনিসের সমতুল্য না হয়ে উঠলে কি দেশীয় শিল্প আত্মনির্ভর হতে পারবে?

হ্যাঁ, এটা ঠিক ভারতীয় উৎপাদন গুলোকে দামে প্রতিযোগীতামূলক এবং নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে হবে। কিন্তু ভালো মানের ভারতীয় প্রোডাক্ট বাজারে একেবারে পাওয়া যায় না এটা ঠিক না। অনেক ভারতীয় জিনিসই আছে যেগুলো চীনা জিনিসের তুলনায় ভালো, মজবুত এবং টেকসই। তবে আমাদের অনেকেরই বিদেশী জিনিস না হলে মন ওঠে না এই যা! চীনারাও তাদের শিল্পদ্যোগ এবং তার গুণমান একদিনে তৈরি করেনি। দেশের মানুষের শ্রম, এবং দেশীয় প্রোডাক্ট কেনার বাধ্যবাধকতা দীর্ঘদিন ধরে চীনা শিল্পগুলোকে সংরক্ষণ দিয়ে তৈরি হতে সাহায্য করেছে। আমাদের ক্ষেত্রেও একই জিনিস প্রযোজ্য।

সব শেষে আমাদের নিজেদের মনকে প্রশ্ন করতে হবে, আমাদের দেশ থেকে থেকে লুঠে নিয়ে যাওয়া মুনাফার টাকাতে যারা আমাদের দেশের সন্তানকে, ভাইকে, বন্ধুকে হত্যা করছে,  দখল করছে আমাদের দেশের জমি, সেই দেশের সরকারের হাতে কি আমি আমার টাকা তুলে দেব যাতে তারা সেই টাকাতেই কেনা বুলেট দিয়ে আমাদের কারোর সন্তানকেই হত্যা করতে পারে? বাস্তাববাদী নীতির সাহায্যে দখল করে নিতে পারে আমার দেশেরই জমি? নয়া অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের সাহায্যে আমাদের ক্রীতদাস বানাতে পারে সেই দেশের পণ্যের এবং অর্থব্যবস্থার?

আজ সেনাবাহিনী জীবন দিয়ে দেশকে বিস্তারবাদী দেশের আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করার কাজ সীমান্তে করছে। আসুন, আমরা যাদের সীমান্তে লড়াই করার সুযোগ পাচ্ছি না, তারা অন্তত এটুকু  নিশ্চিত করি আমাদের টাকায় কেনা শত্রুর বুলেট যেন আমাদের দেশের সন্তানদের বিদ্ধ না করে। দেশের জন্য আমরা কি এটুকুও পারব না?  শহীদ রাজেশ ওরাং সহ ২০ জন জওয়ানের মৃতদেহ আমাদের দিকে তাকিয়ে এই প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করছে।

Related posts

স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকারের কৃষিতে ১.৬ লক্ষ কোটির প্যাকেজ

E Zero Point

৩৪ বছর পরে জাতীয় শিক্ষানীতিতে বদলঃ বিস্তারিত ভাবে জানুন

E Zero Point

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত রোগ নির্ণয় সরঞ্জাম আবিষ্কার করল আইআইটি খড়গপুর

E Zero Point

মতামত দিন