জিরো পয়েন্ট নিউজ, এম. কে. হিমু, মেমারি, ৩০ নভেম্বর ২০২১:
বর্তমানে সময় ও খরচ বাঁচানোর জন্য রাজ্যের অধিকাংশ কৃষক মেশিনের দ্বারা ধান কাটার কাজ করছে। ফলে অধিকাংশ মাঠে পড়ে থাকছে ধানের অবশিষ্ট অংশ অর্থাৎ ধানের খড় বা নাড়া। আগে সেই খড় বিভিন্ন কাজে লাগতো কিন্তু মেশিনে ধানকাটার ফলে খড় বা নাড়া আর কোন কাজে লাগে না ফলে কৃষকেররা সেগুলি জ্বালিয়ে দেয়। এইসময় কৃষকদের যথেচ্ছভাবে ধান ক্ষেতের নাড়া কিংবা পোয়াল পোড়ানোর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হয় অপরদিকে বিশ্ব উষ্ণায়ণ বৃদ্ধি পায়। এমনকি জমির উর্ব্বরা শক্তিও কমে যায়।
অথচ এই নিয়ে দেশ ও রাজ্যে আইন আছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবেশ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি (En/242/10-10/2019 Date 05-02-2019) অনুসারে যথেচ্ছভাবে ধান ক্ষেতের অবশিষ্টাংশ খড় ও নাড়া পোড়ানো আইনত নিষিদ্ধ। এব্যপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচার করা হলেও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেমারি ১ ও ২ ব্লকের প্রায় সকল ধানক্ষেতে নাড়া পোড়ানো হচ্ছে অবাধে।
সম্প্রতি পশ্চিবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ মেমারি শাখার পক্ষ থেকে মেমারি ১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় এক সচেতনতামূলক প্রচার করা হয় এবং কৃষকদের বোঝানো হয় লিফলেটের মাধ্যমে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ থেকে তাপস পাল ও বৈদ্যনাথ হাঁসদা বলেন, কৃষকবন্ধুরা মাঠের নাড়া পোড়ানো বন্ধ না করলে একদিকে যেমন ধোঁয়া থেকে ধোঁয়াশা তৈরি হবে যার ফলে দমবন্ধকর অবস্থা তৈরি হবে, শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও স্বাভাবিক দৃশ্যমনতা কমে যাবার ফলে মানুষের জীবন যাত্রা ব্যহত হবে। পাঞ্জাব-হরিয়াণাতে নাড়া পোড়ানোর ফলে দিল্লী সহ পার্শবর্তী রাজ্যগুলিতে কি অবস্থা হয় তা আমরা জানি। অন্যদিকে কেঁচো ও মাটির উপকারী জীবাণুসহ ৫০-৭০ শতাংশ অনুখাদ্য পুড়ে নষ্ট হয়।
সম্প্রতি মেমারি পাওয়ার হাউস থেকেও জানানো হয়েছে যে মাঠে মাঠে ধান ঝাড়ার জন্য যে হুদহুদ বা হার্ভেস্টার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা থেকে নির্গত খড়কুটো হাইটেনশন বিদ্যুৎবাহী তারে আটকে গিয়ে ব্রাকডো হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে যেমন ঠিক তেমনই খড় পোড়ানোর আগুনের শিখা থেকেও মাঠ নিকটবর্তী বৈদ্যুতিন খুঁটিতে আগুন লেগে বিপত্তি ঘটতে পারে।
বিজ্ঞান কর্মী অমিত বিশ্বাস জানান যে, বিজ্ঞান ও পরিবেশ কর্মী হিসেবে নিজেদের খুব অসহায় লাগছে। এইভাবে পরিবেশ দূষণ করেই চলবে ? মেশিনে ধান কাটার পর জমিতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে চাষীরা। শুধু মেমারি ১ ও ২ ব্লক নয়, জেলার সর্বত্র প্রায় একই অবস্থা। অথচ বিকল্প আছে। দায়িত্ব যাদের তারা কিছু তো করুন।
কথায় আছে যত আইন তত ফাঁক। কোন অজানা কারণে মেমারি ১ ও ২ ব্লক আধিকারিক, কৃষি দপ্তর ও প্রশাসন নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের উচিৎ কঠোরভাবে এই আইন প্রয়োগ করা। শুধুমাত্র বিজ্ঞানমঞ্চের কর্মীরা নয় মেমারি ব্লকের সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে এ ব্যপারে কৃষকদের বোঝানো উচিৎ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে।