জিরো পয়েন্ট প্রতিবেদন, ৩১ জানুয়ারি ২০২২:
সুরজ মন্ডল
পর্যায়ক্রমে নিম্ন মধ্যবিত্তদের শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। তাদের শিক্ষা গ্রহণ এবং সামাজিক উন্নয়ন বর্ণবাদী জাতিবাদীদের সহ্য হবে কেন? অর্থনৈতিক পুঁজিবাদ যাদের আরাধ্য তাঁরা কীভাবে মেনে নেবেন , নিম্ন মধ্যবিত্ত তথা নিম্নবিত্তের সন্তান শিক্ষা সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে আসুক? তাই যদি হয় তবে তাদের হয়ে বর্ণবাদের গোলামগিরি করবে কারা কায়িক পরিশ্রম করে তাদের ফ্যাক্টারি এগিয়ে নিয়ে যাবে কারা?
এজন্য খুব সুকৌশলে প্রথমে শিক্ষার বেসরকারি করন করা হলো, যত টাকা ঢালবেন তত উঁচু মানের শিক্ষা! নেহাত স্কুল চালাতে হয় এজন্য সরকারি কিছু স্কুল চললো, গদায় লস্করী চালে! ভিতরকার খবর কম বেশি সবার জানা! বলতে খারাপ লাগলেও আমি অনেক শিক্ষকের থেকে এমন অভিজ্ঞতা পেয়েছি, যেখানে তিনি মনে করেন শিক্ষার্থীরা সব অকেজো, ভাবটা এমন যে যদি ভালো অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যাকগ্রাউন্ডের হবে তবে সরকারি স্কুলে কেন পড়বে। সুতরাং নাক সিটকানো ভাবটা তাঁদের ছিল। ভাবতেও অবাক লাগে এঁরা ও “শিক্ষক”!
সে যাই হোক বর্ণবাদীরা দেখলে এতেও কিন্তু রক্ষা নেই। এর মধ্যে থেকেই অনেকে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। চাকরি করে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তখন তারা ভাবতে বসল , এবার কী করা যায়! আলোচনায় উঠে এলো প্রাইমারি এবং হাই স্কুলে এরা বেশি নিয়োগ পাচ্ছেন। সুতরাং, দাও চাবি দিয়ে। একে নিয়োগের কোনো ঠিক নাই, তার উপর তাকে গাদা টাকা খরচা করে করতে হবে, ঢপের “শিক্ষক প্রশিক্ষণ” ! তাতে সুবিধা হলো এই যেসব অতি নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা যাদের নুন আনতে পান্তা শেষ হয়ে যায়, তাঁরা বর্ণবাদীদের গোলামীর খাঁচায় অনায়েসেই চলে আসলো!
এরপর রায়বাহাদুর দেখলেন, যতোই হাতে মারি ভাতে মারি তবুও এরা শিক্ষা ছাড়ে না! সুতরাং শুভক্ষণ বুঝে দুগ্গা দুগ্গা করে একটা প্রজন্মকে ডুবালেই কেল্লা ফতে! না থাকবে বাঁশ আর না বাজবে বাঁশরী! সুতরাং , নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি কমাও, পরীক্ষায় গণ্ডগোল করো, রেজাল্ট আটকে দাও , কোর্টে ঝুলিয়ে রাখো কেস !
এরপর এলো করোনা বাবা! যার ফলে তাঁরা হাতে চাঁদ পেলেন! স্কুলের ঘরে তালা পড়ল ! দিন যায় মাস যায় বছর পেরোয়! অভিভাবকেরা অধৈর্য এবং বিরক্ত, শিক্ষিত (ডিগ্রিধারী ) অগ্রজদের বেকারত্ব দেখে তারা ব্যোম বলে বেরিয়ে গেল শিক্ষা জগৎ থেকে! বেড়িয়ে তো গেল এবং সাথে নিয়ে গেল অবচেতন মনে গেঁথে যাওয়া যুক্তিপূর্ণ ধারণা—”লেখা পড়া করে যে গাড়ি চাপা পড়ে সে!”
সুতরাং, নিম্ন মধ্যবিত্ত সংখ্যালঘু -দলিত -আদিবাসী কে গোলাম বানিয়ে রাখার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হলো! তাঁরা সুকৌশলে গেঁথে দিতে পারলেন, তুমি গরীবের ছেলে এজন্য লেখাপড়া তোমার জন্য নয়! ওটা বিত্তশালী ও বর্ণবাদীদের একচ্ছত্র সম্পত্তি!