জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, এম.কে হিমু, মেমারি, ২ জানুয়ারি ২০২৩:
রবিবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্নের অভিজ্ঞ নেতা, দক্ষ সংগঠক ও প্রাক্তন শহর সভাপতি অচিন্ত্য কুমার চট্টোপাধ্যায় অপমানিত ও মর্মাহত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতিকে চিঠি দিয়ে পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। তিনি তার চিঠিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবতারনা করেন-
১) কোন আলোচনা না করেই চার জন সাধারণ সম্পাদকের সাথে তার নামটি রাখা হয়েছে। সুপারিশ সম্বলিত শহর কমিটির প্যাডে বিধায়কের সাক্ষর আছে দেখলাম, বিধায়কও এ ব্যপারে আমার সাথে কোন আলোচনা করেননি।
২) ১৯৯৮ সাল থেকে ব্লক যুব প্রদেশ কমিটির সদস্য, জেল সম্পাদক, ব্লক ও মেমারি শহর তৃণমূলের সভাপতি, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট হিসাবে দলের দায়িত্ব পালন করার পর সামান্য শহরের সাধারণ সম্পাদক তাও আবার চার জনের সাথে – আমি অত্যন্ত অপমানিত ও মর্মাহত।
৩) এই কমিটি যে ভাবে তৈরি হয়েছে, তা দলের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়।
আরও পড়ুন – মেমারি শহর কমিটি যে ভাবে তৈরি হয়েছে, তা দলের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়ঃ অপমানিত ও মর্মাহত প্রাক্তণ শহর সভাপতি
এ প্রসঙ্গে মেমারি বিধানসভার বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, সুপারিশ পত্রে তার সাক্ষর আছে এটা ঠিকই কিন্তু তিনি বর্তমান শহর সভাপতিকে বলেছিলেন যে উনাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উপেদষ্টা কমিটিতে রেখে উনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তার পরামর্শ মতো সংগঠনকে আরও মজবুত করার জন্য। উনার ক্ষোভ স্বাভাবিক, তিনি এব্যপারে জেলা সভাপতির আলোচনা করবেন।
মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বপন ঘোষাল জানান, সাধারণ সম্পাদকের পরে আর কোন পদ আছে কিনা আমার জানা নেই যথাযোগ্য সম্মান দিয়েই বিধায়কের সাথে আলোচনার পরই উনাকে এই পদ দেওয়া হয়েছে। আর দলীয় নির্দেশে শহর কমিটিতে ৪জনে সাধারণ সম্পাদক রাখতে বলা হয়েছে এ ব্যপারে আমার কিছু বলার নেই দল যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই শিরোধার্য।
অন্যদিকে “কমিটি যে ভাবে তৈরি হয়েছে, তা দলের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়।” অচিন্ত্য চ্যাটার্জীর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মেমারি শহরের আর এক প্রাক্তণ শহর সভাপতি ও মেমারি পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ী জানান, তৃণমূলের জন্মলগ্নের সময় অচিন্ত্যবাবুর সাথে এক মোটরসাইকেলে চেপে রাজনীতি করেছেন মেমারির বুকে। তিনি দীর্ঘদিনের লড়াকু নেতা ও দক্ষ সংগঠক তিনি নিশ্চয়ই কিছু ভালো বুঝেছেন তাই এই মন্তব্য করেছেন। তবে পদত্যাগের ব্যপারটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত ব্যপার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল মেমারি শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্কলহের কথা। স্বপন ঘোষাল ও স্বপন বিষয়ীর অনুগামীরা প্রায়ই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে, বিধানসভা নির্বাচনের সময় তারা পাঁচিলের উপর বসে রাজনীতি করেছেন, দলকে হারানোর জন্য বিরোধী দলের হয়ে কাজ করেছেন।
আর অন্যদিকে বিগত বিধানসভা নির্বাচনের সময় দক্ষ সংগঠক ও বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে যেভাবে অচিন্ত্য চ্যাটার্জী সমস্ত নেতাদের মনোমালিন্যদূর করে একসাথে কাজ করে তৃণমূল প্রার্থী মধুসূদন ভট্টাচার্যকে জিতিয়েছিলেন তা কোন তৃণমূল নেতা কর্মীরা অস্বীকার করতে পারবেন না।
শুধু তাই নয় শহর সভাপতি থাকাকালীন মেমারি পৌরসভায় নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি নিয়েও সরব হয়েছিলেন তিনি। আর তারপরই তাকে শহর সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং নতুন সভাপতি হিসেবে স্বপন ঘোষালকে নিযুক্ত করা হয়। অপমানিত ও মর্মাহত হয়ে তিনি আজ তার দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বলে অনেকেরই ধারনা।