04/05/2024 : 11:46 PM
আমার বাংলাদক্ষিণ বঙ্গপূর্ব বর্ধমানমেমারি

মেমারি পৌরসভা শুধু ইঁট-কাঠ-পাথরের জন্য নয়, মানবিক বিকাশের আর এক নামঃ চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ী

জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, এম.কে হিমু, মেমারি, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩:


৮ নং ওয়ার্ডের শিখা বসু, কনক দাস হোক কিংবা ১৬ নং ওয়ার্ডের ৮০ বছরের সেখ আতিউর রহমান, ১১ নং ওয়ার্ডের সবুরা বিবি, ৪ নং ওয়ার্ডের রত্না সরকার, ৭নং ওয়ার্ডের গোপাল পাত্র, স্বপন ঘোষ, সন্ধ্যা চট্টোপাধ্যায় মনিরুল ইসলাম,  ১৬ নং ওয়ার্ডের নুরজাহান বিবি, মাসুরা বিবি সহ ১৬০ জন প্রবীণ নাগরিকের মুখে একটাই কথা মেমারি পৌরসভার এই বনভোজনের উদ্যোগ অভিনব। তাদের জীবনকালে কোন দল, সরকার কিংবা পৌরসভা এই ধরনের উদ্যোগে নিয়েছেন তাদের জানা নেই।

সম্প্রতি ৭ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি পৌরসভার উদ্যোগে ঐতি্হ্যশালী গ্রাম আমাদপুরে প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে একটি বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই বনভোজনে ১৬টি ওয়ার্ডের ১৬০ জন প্রবীণ নাগরিকরা অংশগ্রহণ করে।

মেমারি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিয় সামন্ত জানান প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকে ১০ জন প্রবীণ নাগরিক কাউন্সিল দ্বারা নির্বাচিত করা হয়। এখানে কারোর বয়স ৬০ কারো ৭০ থেকে ৮০ বছর। এমন বয়সে নাতি নাতনির সাথে সময় কাটে ঘরের চারদেওয়ালের মধ্যে। ইচ্ছা থাকলেও উপায় থাকে না। তাই মেমারি পৌরসভার সেইসব প্রবীণ মানুষের নিয়ে এই বনভোজনের আয়োজন করলো।

তিনি আরও জানান, খুব কমসময়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তিনি ধন্যবাদ জানান পৌরসভার সমস্ত কাউন্সিলদের ও পৌরকর্মীদের। এব্যপারে পৌরকর্মী শক্তি আচার্য আমাদপুরের আমবাগানে বনভোজন পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকার কথা বলেন।

জানা যায় এদিন সকালে ৪০টি স্থানীয় টোটো নিয়ে প্রত্যেক ওয়ার্ডে থেকে প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে আসা হয় আমাদপুর। টিফিনে ছিল লুচি আলুর দম, চা, কফি। দুপুরে ছিল ভাত, ডাল, এঁচোরের সবজি, পাবদা মাছ, মুরগির মাংস, দই, রসগোল্লা, চিত্তরঞ্জন এবং বিকালে আপেল, শশা, লেবু।

শুধু হরেকরকম খাওয়াদাওয়ায় নয় ঐতিহ্যশালী মন্দির ও রাজবাড়ির আমাদপুর গ্রামের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখানো হয়। বিশ্রামের জন্য চেয়ার, খাট, স্বাস্থ্যের কোনরকম অবনতি হলে তার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী যেমন ছিল তার সাথে সাথে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী বৈদ্যনাথ রায় ও ফুড ইন্সপেক্টর কমল সরকারের সঙ্গীত বনভোজনের পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে।

এ প্রসঙ্গে মেমারি পৌরসভার চেয়ারম্যান জানান, মেমারি পৌরসভা মানে শুধু ইঁট-কাঠ-পাথর দিয়ে রাস্তা, ড্রেন, লাইট, বাড়ী নির্মাণের পৌরসভা নয়। মেমারি পৌরসভার মানবিক বিকাশের উন্নতি সাধনের পৌরসভা। আমাদের চারপাশে একদিকে যেমন প্রবীণ নাগরিকরা তাদের বার্ধক্যের কারণে ঘরের চারদেওয়ালকে বেছে নেন, যৌবনে পরিবারের কর্তব্য পালন করতে করতে ক্লান্ত মন চায় খোলা আকাশের নীচে শ্বাস নিতে ঠিক তেমনই নিম্ন আয়ের প্রবীণ মানুষদের অভাবের দৃশ্য দেখে আমরা অভ্যস্ত।

খুব কম মানুষই এসব কষ্ট সহমর্মিতার সঙ্গে দেখেন। কিছুটা হলেও সমাধানের চেষ্টা করেন। সাধ্য আর সাধের সমন্বয় ঘটিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করেন। একদিকে বয়স্ক এবং নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া প্রবীণ মানুষের মুখে এক টুকরো হাসি দেখার জন্য দল-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে পৌরসভার এই বনভোজনের উদ্যোগ।

এপ্রসঙ্গনে তিনি আরও জানান এবছর খুব তড়িঘড়ি এই বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছে আগামী বছর পৌরসভার সব ওয়ার্ড থেকে আরও বহুসংখ্যক প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করা হবে।

যদিও বনভোজন নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। বামনেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল শহর সভাপতি এক হাত নিয়েছে মেমারি পৌরসভার এই উদ্যোগকে। ১২ টি তৃণমূল কাউন্সিলর ও ১জন কংগ্রেস কাউন্সির উপস্থিত থাকলেও ১৩, ১৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর উপস্থিত ছিল না।

সিপিআইএমের জেলা কমিটির নেতা সনৎ ব্যানার্জী বলেন, পৌরসভার এক একটি ওয়ার্ডে অসংখ্য বয়স্ক মানুষ আছেন তাহলে কিভাবে ১০ জন করে নির্বাচন করা হল। এ ব্যপারে মানুষ জানতে চায়ছে। এইভাবে মানুষের ট্যাক্সের টাকা মেমারি পৌরসভা নয়ছয় করছে। বামেরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

তৃণমূল শহরকংগ্রেসের সভাপতি স্বপন ঘোষল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী অপচয় রুখতে চাইছেন মেমারি পৌরসভা বনভোজনের নামে অপচয় করছে। শহরে অনেক কিছু উন্নয়ণ বাকী আছে সেগুলিতে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

শুক্রবার মেমারি একটি ক্রিকেট খেলার উদ্বোধনী মঞ্চ বক্তব্য রাখতে গিয়ে থেকে মেমারি পৌরসভার চেয়ারম্যান বিরোধ স্বপন বিষয়ী বলেন মেমারি পৌরসভা বয়স্ক নাগরিকদের বনভোজনের জন্য এক লক্ষ, দেড় লক্ষ টাকা খরচ করতে পারে কিন্তু মেমারি পৌরসভা তার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে গরীব মানুের জন্য বাড়ি তৈরি করার জন্য, আর্থিক দুর্বল মানুষদের ২৯ লক্ষ টাকা প্রতি বছর ভাতার মাধ্যমে প্রদান করেন।

তাই কতিপয় দলীয় লোক অথবা বিরোধীরা এই কথা বলছেন কারণ তারা অনভিজ্ঞ তাই তাদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার জন্য অনুরোধ করেন। পৌরসভা কোন খারাপ কাজ করলে আমাদের বলুন, অযথা কোন বিতর্ক করবেন না।

 

 

Related posts

গুরু পূর্ণিমা পালন কল্পতরু ভবনে

E Zero Point

আনন্দ মেলার উদ্বোধনে পৌরসভার চেয়ারম্যান

E Zero Point

সমানে চলছে নাড়া পোড়ানোর কাজ – কবে সচেতন হব!

E Zero Point

মতামত দিন