28/03/2024 : 7:33 PM
অন্যান্য

জিরো পয়েন্ট রবিবারের আড্ডা ~নির্মাল্য পাণ্ডে | অশোক কুমার ভট্টাচার্য | সেখ আব্দুল মান্নান | স্বপ্না চক্রবর্তী | মিরাজুল সেখ | করকাশ্রী চ্যাটার্জী ~

রহস্য গল্প


 নূপুরের শব্দ


 ✒ করকাশ্রী চ্যাটার্জী (শিলাবৃষ্টি)

সুনীতি দেবীর আজ আর মনে পড়েনা কবে থেকে তিনি কলম ধরেছেন !
 সামনে শারদীয়া সংখ্যার জন্য  পাবলিশার্সদের বায়নার শেষ নেই। লেখার জন্য নিজেকে নির্বাসন দেন তিনি  জয়পুর জঙ্গলের পাশের এই আস্তানায়, নাম “বনলতা”। ভীষন নির্জন জায়গা। এই বাংলোটা বাবা কিনেছিলেন  এককালে ।
                    গতকাল বিকেলে এসে পৌঁছেছেন। কেয়ারটেকার গঙ্গাধর আগেই সব সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছিল। বনলতার  দোতলার ব্যালকনিটা সুনীতি দেবীর খুব প্রিয় । সন্ধেবেলায় আরামকেদারায় বসে থাকেন।   কুয়াশা মোড়া অন্ধকার গাছগাছালি  মধ্যে জোনাকির মিটমিটে আলো। বেশ গা ছমছমে ভাব। নদীর ঢেউএর মৃদু শব্দ …এমন সময় কানে আসে শুকনো পাতার মচমচ আওয়াজ ।
-কে? গঙ্গাধর ? নাহ্ কেউ নয়।
                    পরের দিন সন্ধ্যা।  ব্ল্যাক কফির পেয়ালায় চুমুক দেবেন হঠাৎ আগের দিনের মতোই শব্দ !  যেন শুকনো পাতায় কেউ নূপুর পায়ে হেঁটে গেল । সচকিত হলেন ,শব্দটা দূরে মিলিয়ে গেল। রহস্যের গন্ধ ! ডিনারের সময় গঙ্গাকে জানালেন। সে বলে দিল –
– জন্তু জানোয়ার হবে !
                     সন্ধ্যায় বসে পরবর্তী উপন্যাসের কাহিনী ভাবছিলেন সুনীতি আর প্রতীক্ষায় ছিলেন  সেই পদশব্দের। তখন আটটা দশ ,  আবার শুনলেন শুকনো পাতার উপর নূপুরের সেই শব্দ । দেরী না করে দ্রুত নেমে এসে শব্দ অনুসরণ করে এগোতে থাকলেন।
অমাবস্যার ঘন অন্ধকারে শাল গাছটার পাশে হালকা আলোর আভাস দেখতে পেলেন । বুঝলেন ভুল হয়নি তাঁর। রহস্য ঘনীভূত। ভয় পেলেন খুব, তবু চিৎকার করে বললেন-
– কে ? কে ওখানে ? বেরিয়ে এসো।
সেই মুহূর্তে টর্চটাও বিট্রে করলো। ছুটে পালালো কেউ । শুকনো পাতার ওপর ঝুমঝুম শব্দটা দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে।
                       ফিরে এলেন বনলতায় । আশ্চর্য হলেন আরও। নীচের ভাঙা ষ্টোর রুমে আলো জ্বলছে ! একি ! এতো রহস্যের ওপর রহস্য ! ঘুম আসছেনা ।
 কে ছিল জঙ্গলে? রোজ শুকনো পাতার ওপর দিয়ে কে হেঁটে যায় নূপুর পায়ে ! ষ্টোর রুমে আলোই বা কিসের।  এ রহস্যের কিনারা করতেই হবে তাঁকে।
পরের দিন রাতে …
গঙ্গাধর খাওয়ার জন্য তাগাদা দিল একটু বেশি তাড়াতাড়িই। খেয়ে  দরজা বন্ধ করে ঘরের আলো নিভিয়ে দিলেন, তারপর অন্ধকার বারান্দায় সন্তর্পনে গিয়ে দাঁড়ালেন , হুমম – যা ভেবেছেন তাই। ষ্টোর রুমে আলো জ্বললো । সন্তর্পনে নেমে এলেন নীচে। ষ্টোর রুমের ভেতরে ফিসফিস করে কথা বলছে কারা ! সুনীতি দেবী ঘেমে উঠলেন ,দরজাটা ঠেলে দিলেন । একি ! গঙ্গাধর আর একটি শ্যামলা আদিবাসী মেয়ে খেতে বসেছে এক কোণে।
ততক্ষণে ওরাও ভয়ে কাঠ।
—খেয়ে নাও, তারপর ড্রইংরুমে এসো তোমরা‌।   গম্ভীর গলায় বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন।
গঙ্গাধরের মুখে যা শুনলেন –
এই মেয়েটি গঙ্গাধরদের পাশের গ্রামের , নাম দুগ্গা। গঙ্গাধর ভালোবেসে মন্দিরে বিয়ে করেছিল কয়েক মাস আগে, কিন্তু দুগ্গার দাদা বোনের বিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে দোজবরে বুড়োর সাথে পাকা করে ফেলেছিল । চার দিন আগে দুগ্গা ঘর থেকে পালিয়ে আসে। গঙ্গাধর উপায় না পেয়ে এই ভাঙা ষ্টোর রুমেই তাকে রাখে।
– কিন্তু তোমার বাড়িতে ওকে কেন নিয়ে গেলেনা ? আর ও রাতে কেন বেরোতো?
– না দিদিমণি। আমাকেও ওরা পাগলের মতো খুঁজছে। আমার ফোন থেকে ওর সইকে ফোন করতে রাতের বেলা দুগ্গা বেরোতো গ্রামের পরিস্থিতি জানার জন্য ।
বনলতায় টাওয়ার থাকেনা।
 এতক্ষনে সব রহস্যের জট খুললো । রাত দুটো বেজে গেছে। উঠলেন তিনি ।
– দিদিমণি কিছু তো কর্  আমাদের বাঁচা , খুঁজে পেলে উরা মোদের বলিটো দিবে । দুগ্গার আকুতিতে ফিরে তাকালেন ,নজর পড়ল তার পায়ের নূপুরে।
– না না ভয় পেয়োনা। আমি পুলিশ নিয়ে ঐ গ্রামে যাবো। বলি দেওয়া কী এতই সোজা ? যাও তোমরা।

            নিঝুম ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালেন তিনি । রাতজাগা একটা পাখি ডেকে উঠল শাল- সেগুনের জঙ্গলের ভেতর থেকে। তাঁর জীবনে ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি, কিন্তু দুগ্গা আর গঙ্গাধরের ভালোবাসাকে তিনি বাঁচাবেন। তাঁর পরবর্তী উপন্যাসের নাম হবে -” দুগ্গা “।।


রবিবারের আড্ডায় লেখা পাঠাতে হলে zeropointpublication@gmail.com
ইমেইল এড্রেসে টাইপ করে পাঠান। অবশ্যই লেখাটি অপ্রকাশিত হতে হবে।

পাঠকের মতামত লেখক ও প্রকাশকের পাথেয়, তাই অবশ্যই নীচের কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করুন ও শেয়ার করুন


 

 

Related posts

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আলোচনা

E Zero Point

প্রতি বছর ঋতু পরিবর্তনের সময় ফিরে আসতে পারে করোনা, প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

E Zero Point

রসুলপুর ও মেমারির করোনা সৈনিকদের সম্মানিত করলো WE R RASULPURIAN

E Zero Point

মতামত দিন