আলেক শেখ, কালনাঃ প্রথমে করোনা ভাইরাস, পরে আমফান ঝড় শেষে কালবৈশাখীর তান্ডবে কালনার তাঁতশিল্প ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে গেছে | সম্প্রতিকালে কালনার মহকুমার বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকগুলিতেও মানুষের বাড়ি-ঘর, কৃষি ফসল সহ তাঁত শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার কথাও উঠে এসেছে | এই নিয়ে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছে বলে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের মুখে উঠে এসেছে | যন্ত্রদানব পাওয়ারলুমও কালনার হস্তচালিত তাঁত শিল্পকে ধ্বংস করতে পারেনি | বর্তমানে কালনা মহকুমায় এখনো ষাট হাজার মানুষ এই হস্তচালিত শিল্পের সাথে যুক্ত আছেন | কিন্ত করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এই শিল্প একরকম লন্ডভন্ড হয়ে যায় | তাঁতের মাকুর আওয়াজ অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে | তাঁতঘরে শুধু প্রায় ফাঁকা তাঁতগুলো সারি সারি পড়ে থাকে |
সে চিত্র দেখা যায় কালনা মহকুমা কালনা শহর, ধাত্রীগ্রাম, কাদিপাড়া, নশরতপুর, সমুদ্রগর, মাজিদা, শ্রীরামপুরের মতো তাঁতশিল্প নিবিড় এলাকা গুলিতে | পাওয়ারলুম এসে ইতিপূর্বেই হস্তচালিত তাঁতের সঙ্গে যুক্ত একাংশ মানুষের কাজ হরণ করে নিয়েছিল | তারপরেও যারা এই পেশায় কোনরকমে টিকে ছিলেন, করোনা ভাইরাস নামক মহামারী বর্তমানে তাদের কাজও প্রায় কেড়ে নেয় | সাধারণত এখানে ঢাকাই জামদানি শাড়ি বেশি উৎপাদন হয় | আর এই শাড়ি বেশির ভাগই বোনেন– উত্তরবঙ্গ থেকে আসা পরিযায়ী তাঁত শ্রমিকরা | লকডাউনে তাঁত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়ে যান পরিযায়ী তাঁতশ্রমিকরা | তাঁদের খাবারে টান পড়তেই রাতারাতি সাইকেল সংগ্রহ করে লুকিয়ে কালনা মহকুমা ছেড়ে চলে যান | অন্যদিকে তাঁতের মালিকরা যেসব কাপড় তৈরি করে বাড়িতে মজুত করে রেখেছিলেন বিভিন্ন উৎসবে বিক্রি করবো বলে | তাঁদের সেই মজুত করা শাড়ির কোন বেচাকেনা নেই |
চৈত্র সেলের বাজার, ঈদের বাজার তো ইতিমধ্যেই গেছে, যা পরিস্থিতি বড় পুজোর বাজার পাওয়া নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে | করোনা আবহের মধ্যে আবার নতুন করে উৎপাত এসে হাজির আমফান, কালবৈশাখীর ঝড় | পূবেই কাপড় বেচাকেনা না থাকার করনে তাঁত ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক ধ্বংস শুরু হয়ে যায় | শেষে দুই ঝড়ে পরিকাঠামোরও ধ্বংসপ্রাপ্তি ঘটেছে | তাঁতঘরের চালা উড়ে গিয়ে তাঁতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে | তাঁতযন্ত্র সহ সমস্ত জলে ভিজে গিয়ে একাকার | ফলে তাঁত শিল্পী থেকে তাঁত ব্যবসায়ী সবাই এখন বিপাকে | এই শিল্পের ভবিষ্যৎ কি তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে |