07/05/2025 : 1:42 AM
আমার বাংলাউত্তর ২৪ পরগনাদক্ষিণ বঙ্গ

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় আমাফানে ক্ষতির মোকাবিলা করতে সৃজন সুজন

রুপাঞ্জন রায়ঃ গত ৫ ই জুন শুক্রবার  “সৃজন সুজন” থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদ ব্লকের পাটলিখানপুর পঞ্চায়েতের এবং বিষপুর পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামে। গ্রামগুলির মানুষ কতটা বিপন্ন তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। চারিদিকে জল, কোথাও রাস্তার ওপর জল উঠে এসেছে , তার মধ্যেই “সৃজন সুজন”-এর ত্রাণের গাড়ি যখন যাচ্ছে, মানুষ বিভিন্ন জায়গায় কাতর আবেদন জানাচ্ছেন সাহায্যের জন্য।

সংস্থার পক্ষ থেকে সভাপতি অরূপ রায় জানান যে, নদী বাঁধের ওপর আমরা যখন উঠলাম , তখন বহু মহিলা , পুরুষ , বাচ্চা আমাদের গাড়ি আটকে দিলেন। না , কোনো গন্ডগোল নয়, শুধু তাদের চাই কিছু খাদ্য। প্রায় অনাহারে রয়েছেন। শুধু রেশনের চাল ছাড়া কিছু নেই। আমাদের পরিকল্পনার থেকে অনেকটাই বেশী খাবারের প্যাকেট নিয়ে যাওয়ায় আমরা সেখানেই ৪০ টি পরিবারকে শুকনো খাওয়ার দিলাম। আমাদের চিকিৎসকরা গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ওষুধ দিলেন বহু মানুষকে। আমাদের সাথে ছিল আরেকটি সাহায্যকারী সংগঠন। তারা গেলো কুমিরমারী নামে আরেকটি গ্রামে।

“সৃজন সুজন”-এর সম্পাদক অভিজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, আমরা যখন পাটলিখানপুর পঞ্চায়েতের দিকে রওনা হলাম রাস্তায় অবরোধে সম্মুখীন হলাম। গ্রামবাসীরা খাদ্যের দাবীতে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁরাই আমাদের সাহায্য করলেন অন্য রাস্তায় ঘুরে যেতে। কাছাকাছি পৌঁছে দেখলাম হাজার তিনেক বুভুক্ষু মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ভাঙচুর করে ঘিরে রেখেছেন। আমরা অসহায়। আমাদের কাজ করতেই হবে। আমরা চলে গেলাম ওই পঞ্চায়েতের অধীন লেপাড়া গ্রামে। বিধ্বস্ত গ্রাম। মানুষ উঠে এসেছেন একটু শুকনো জায়গায়। পলিথিনের ত্রিপল দিয়ে থাকার ব্যবস্থা নিজেরাই করেছেন। না, কোনো দূরত্ব রাখা ওঁদের সম্ভব ছিলোনা। আমরাও কিছুই বলতে পারিনি। শুধু বলে আসতে হলো অন্তত মুখে গামছা বেঁধে কথা বলুন। সেখানে আগে থেকে আমাদের তালিকা করা ছিল। আমরা প্রত্যেককে খাদ্যসামগ্রী , বাচ্চাদের দুধ, জিওলিন , ও.আর.এস, স্যানিটারি ন্যাপকিন , এবং প্রতি পরিবারে একটি ত্রিপল দিতে পারলাম।

সংস্থার কোষাধ্যক্ষ অভিজিৎ দত্ত জানান যে, আমাদের সদস্য চিকিৎসক ড. মৌসুমী বণিক ও ড.অরিত্র কোনার মাটিতে একটি প্লাস্টিক পেতে বসে পড়লেন মানুষের শারীরিক সমস্যা শুনে তাঁদের পরামর্শ দিয়ে ওষুধ দিতে। শতাধিক মানুষকে সেখানে ওষুধ দেওয়া হলো। এরপর ঘুনি ,বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ত্রাণ গেলো অঞ্চলের মানুষের মাধ্যমে। তখন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। ওখানকার মানুষ বললেন, আরেকদিন আপনারা আসুন। আজ রাত্রে ভরা কোটালে জল আরো বেড়ে যাবে। ভারত সেবাশ্রম সংঘ কদিন তাঁদের দুপুরের খাওয়ার দিয়েছেন। আর পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের একটি টিম কাছেই শিবির করে প্রতি রাত্রে তাঁদের খাওয়ার দিচ্ছেন। আমাদের সাথে থাকা দু একজন স্বেচ্ছাসেবক গামছা পরে নেমে গেলেন গ্রামের ভেতরে জলের মধ্যে মানুষকে কিছু খাওয়ার দিতে।

“সৃজন সুজন”-এর সদস্য সুদীপ্ত সাহা রায় জানান, স্থানীয় কয়েকজন যুবক আমাদের সাথে সবসময় ছিলেন। তারা ওখানেই জয়গ্রাম সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য। নানা বাধা অতিক্রম করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো প্রাণপণ কাজ করছে বলে মানুষ এখনো আশা নিয়ে আছেন। আমাদের সাথে ছিল ব্যাঙ্ক কন্ট্রাকচুয়াল ও কন্ট্রাক্ট ওয়ার্কমেন ইউনিয়ন এর তিনজন সদস্য , ব্যাঙ্ক এমপ্লয়ীজ ফেডারেশনের একজন , সুন্দরবনে সারা বছর শিক্ষা ও উন্নয়নের কাজে ব্রতী প্রামেয়া ফাউন্ডেশন ও হাবড়া হাই স্কুলের প্রাক্তনীদের কয়েকজন।


Advt

Related posts

একটি মানবিক আবেদনঃ জীবনযুদ্ধে লড়াই করছে মেমারি যুবক

E Zero Point

মেমারি কদমপুকুর এলাকায় পথ দুর্ঘটনা

E Zero Point

করোনা জয় করে বাড়ি ফিরলো চুঁচুড়ার এক শিক্ষক

E Zero Point

মতামত দিন