আলেক শেখ, কালনা, ১১ ই জুনঃ তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক যখন পূর্বস্থলী থেকে চল্লিশ কিমি দূরে কালনা শহরে ছুটে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন। তখন পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভার বাম বিধায়ক প্রদীপ কুমার সাহা প্রতিদিন কোয়ারান্টিন সেন্টারগুলোতে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। তাঁদের খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। প্রদীপ কুমার সাহার জীবনে কোন লকডাউন বা আনলকের প্রভাবই পড়েনি। লকডাউন খায় না মাথায় দেয় তিনি বুঝে ওঠেননি এখনো। তাঁর জীবনের একটাই মিশন– আর্ত মানুষের পাশে থাকা। সেই কাজটিই সুচারুভাবে করে চলেছেন এই করোনা আবহেও। এই মানুষটির জীবনে ছোট্ট একটা ইতিহাস আছে। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি পূর্বস্থলী কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন তোলা নিয়ে এসএফআই ও টিএমসিপি-র মধ্যে সংঘর্ষ হলে তিন জন সমর্থক আহত হয়। আহতদের নবদ্বীপ ষ্টেট জেরেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওই দিন রাত্রি ১১ টা নাগাদ তৃণমূলের পূর্বস্থলী অঞ্চল সভাপতি সজল ঘোষ খুন হন। কোনরকম কালবিলম্ব না করে ওই রাত্রেই পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সাহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজল ঘোষ হত্যা মামলায় প্রদীপ কুমার সাহাকে ২ বছর ১০ মাস ১৩ দিন জেলে থাকার পর তিনি বেকসুর খালাস পান। গত ১২-১০-২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির এক সম্মেলনে প্রদীপ কুমার সাহা বলেন– দীর্ঘদিন জেলখানার বন্ধ কুঠিতে বসে বসে অন্য ভাবনা মনে জন্ম নিয়েছিল। ভেবেছিলাম জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর রাজনৈতিক জীবন থেকে সন্ন্যাস নিয়ে শিক্ষকতার মধ্যেই ডুবে যাবো। কিন্তু কৃষ্ণনগর জেল থেকে পূর্বস্থলী ফেরার পথে সাধারণ মানুষের যে শ্রদ্ধা- ভালোবাসা পেয়েছি তা মুখে বর্ণনা করার নয়। অন্তরে উপলব্ধি করার বিষয়। তখনই ভাবলাম জেলে গিয়ে মানুষের আপনজন হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। সেই মানুষকে ছেড়ে কি পালানো যায় ? পারেনি, যতদিন বেঁচে থাকবো, মানুষের পাশেই থাকবো। সেই থেকে পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক প্রদীপ কুমার সাহা মানুষের পাশেই আছেন। এক কথায় বলা যায় সেই ট্রেডিশন সমানে চলেছে।