18/04/2024 : 11:32 PM
আমার বাংলাদক্ষিণ বঙ্গপূর্ব বর্ধমানমেমারি

মেমারি প্ল্যাটফর্মে মধ্যরাতে পাশবিকতার শিকার এক পথবাসী বৃদ্ধা

এম.কে. হিমু ও নূর আহামেদঃ আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে বর্তমান সময়ে ধর্ষণ শব্দটি আর মনে দাগ কাটে না, কারণ প্রতিদিন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পুরুষ দ্বারা নারী শারীরিক ও মানসিক ভাবে ধর্ষিত হচ্ছে। মানসিক ধর্ষণের বিচার ব্যবস্থায় কোন আইন নেই কিন্তু শারীরিক ধর্ষণের আইন থেকেও নেই। তাই ধর্ষকরা আজও আমাদের সমাজে ঘুরে বেড়ায় বুক ফুলিয়ে।

আমরা আরও এক সমাজে বাস করি যেখানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক শ্রেণীভেদের তুলাদন্ডে প্রচারের আলো পায়, অপরাধের গুরুত্ব। কিন্তু পৃথিবীতে কিছু মানুষের মানবিকতার জন্যই আজও আশার আলো দেখে শোষিত, নিপীড়িত মানুষের চোখ।

আর এখানে সে তো চোখেই দেখতে পায় না। অপরাধীকে চিনবেন কি করে। তার উপর তিনি পথবাসী, দুমুঠো অন্নের জন্য তাকে ঘুরতে হয় দুয়ারে দুয়ারে। ৭৬ বছরের এই বৃদ্ধা শিকার হলো এক পাশবিক ও অমানবিক ঘৃণ্য পুরুষের।


পীড়িতার সাথে কথা বলে জানা যায় যে, মেমারি ষ্টেশনের আপ প্ল্যাটফর্মে ষ্টেশন মাষ্টারের ঘরের পাশে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে জীবন কাটান। করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউনের সময়ও তিনি সেখানেই থাকতেন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অন্নসেবায় তার দুবেলা চলে যেত।  গত ৬ জুন রাত ১টা থেকে ১টা ৩০ নাগাদ এক মদ্যপ ব্যক্তি তার শরীরের চাদর খুলে দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তার গলা টিপে ধরে। এমনিতেই মাঝ রাত তার উপর দীর্ঘ ৩ মাসের লকডাউনের ফাঁকা রেলওয়ে ষ্টেশনে কয়েকজন পথবাসী ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। ব্যক্তিটি যেভাবে তার গলা টিপে ধরেছিল চিৎকার করে কাউকে ডাকার ক্ষমতা ছিল না। তার পর তাকে জোড় করে টানতে টানতে প্লাটফর্মের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহক ট্রেনের অন্যপাশে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণ করার পর তাকে আবার যেখান থেকে নিয়ে গিয়েছিল সেখানে রেখে চলে যায়। তখন রাত প্রায় ৩-৩০ টা হবে কারণ কিছুক্ষণ পরই ভোরের আযান শুনতে পান তিনি। উক্ত ব্যক্তি যাবার সময় বলে যায় যে, কাউকে জানালে তার শাড়ী দিয়েই গলায় ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলে দেবে। অসহায় বৃদ্ধা শারীরিক আঘাত ও যন্ত্রণা নিয়ে স্তব্ধ হয়ে যান।

পরের দিন সকালে তিনি এক জিআরপি পুলিশকে ঘটনাটি জানান। কিন্তু হয়ত পথবাসী ভিক্ষাজীবি বলে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু কোন এক মানবিকগুণের ব্যক্তি ঘটনাটি জানার পর, সোস্যাল নেটওয়ার্কে সম্পূর্ণ বিবরণ দিয়ে পোষ্ট করা হয় ন্যায় বিচারের আশায়। গত ১৭ জুন মেমারি শহরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঁচলের মানবিক প্রচেষ্টায় এবং সংস্থার সদস্যা কবিতা চক্রবর্ত্তী বর্ধমান জি.আর.পি. পুলিশ ষ্টেশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং রাতেই জি.আর.পি. এসে বৃদ্ধাকে বর্ধমান নিয়ে যান। সেখানে মেডিক্যাল টেষ্ট করার পর তার গোপন জবানবন্দী নেওয়া হবে এবং তার পর ধর্ষনের কেস করা হবে বলে সংবাদসূত্রে জানা যায়।

জিরো পয়েন্ট-এর সাংবাদিক তার সাথে কথা বলার সময় জানতে পারে যে, চোখের জ্যোতি না থাকায় তিনি অপরাধী সম্পর্কে কিছু তথ্য দিতে পারেননি কিন্ত উক্ত ব্যক্তি হিন্দীভাষী ছিলেন ও বুটের শব্দ তিনি শুনতে পান।

পীড়িতা বৃ্দ্ধার গলা এখনো ফুলে আছে ও মাথার পিছনে কেটে যাওয়ার ক্ষতও এখনো স্পষ্ট। তার মনের ক্ষত কোনদিন মিটবে কি না জানা নেই কিন্তু তিনি অপরাধীর কঠোর শাস্তি কামনা করেন।

আঁচলের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, এই লকডাউন সময়ে তারা প্রতিদিন ষ্টেশনের পথবাসীদের অন্নসেবা করেন কিন্তু এহেন ঘটনা খুবই লজ্জাজনক ও অমানবিক। আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছি এবং বৃ্দ্ধাকে নিরাপদে রাখার জন্য অনুরোধ করেছি।

উক্ত ফেসবুক পোষ্টে বলা হয়েছে যে, “এটাই আমাদের সমাজ। এখানে যদি ওই মহিলার জায়গায় ১টা বড়ো বাড়ির কোনো মেয়ে থাকতো, তাহলে এতো দিনে এর ছবিটা অন্য রকম হতো। সবই তাকে নিয়ে অনেক কিছু  লেখালেখি, পোষ্ট, সহানূভূতির ঝড় বয়ে যেতো সোস্যাল নেটওয়ার্কে। কিন্তু যেহেতু উনি একজন পথবাসী তাই তার কথা কেউ জানে না। আমি জানি না সেই হিংস্র পশুটি কে। কিন্তু আমি এটা জানি সোস্যাল মিডিয়ার অনেক ক্ষমতা। তাই আমি চাই এই পোষ্ট অপরাধীর কাছেও যেন পৌঁছে যায়। নিজের করা কাজের শাস্তি সে নিজেই পাবে।”

জানি না আর পাঁচটা ধর্ষণের কেসের মতই এই বৃদ্ধা ন্যায় বিচার পাবে কিনা। কিন্তু এটা নিশ্চিত মানবিক অবক্ষয়ের শিকার উক্ত পাশবিক ব্যক্তির শাস্তির আশায় বাকী জীবনটা কাটাবেন পীড়িতা বৃদ্ধা।

 

Related posts

মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এককভাবে ধর্ণায় বসলেন

E Zero Point

ভাতার স্টেট জেনারেল হসপিটালে করোনার টিকাকরন শুরু

E Zero Point

ঔপনিবেশিক সময়ের সাক্ষীবহনকারী এক অখ্যাত ফাঁসির মঞ্চ! নতুন রূপে “ফাঁসি ডাঙা”

E Zero Point

মতামত দিন