18/04/2024 : 8:25 PM
আমার বাংলাকৃষ্টিবিনোদন

প্রানের মানুষ কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য

জিরো পয়েন্ট নিউজ – রূপাঞ্জন রায়, পান্ডুয়া, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০:


কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য একজন ভারতীয় বাঙালি লোক সঙ্গীত শিল্পী ও লোকসঙ্গীত গবেষক। তিনি আসামের শিলচরে জন্মগ্রহণ করেন ১১ই সেপ্টেম্বর১৯৭০সালে। আসামের শিলচরে ভট্টাচার্য বাড়িই ছিল তার সঙ্গীত জীবনের প্রাথমিক অংশ। তিনি তাল এবং সুরের মধ্যে বেড়ে উঠছেন। তবলা বাজানোর মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে তিনি সুরের জগতে প্রবেশ করেন। তবলার পরে ধাপে ধাপে অন্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখেন।

তিনি কণ্ঠ্য সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। গান তার গভীর আগ্রহের বিষয় ছিল।অবশেষে তিনি উত্তর বঙ্গের ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। এরপরেই ঐতিহ্যবাহী লোকগানের সন্ধান শুরু করে যা স্পন্দনশীল, সুমধুর এবং সর্বজনীন লোকসুর, যা ছিল অনেকের অচেনা এবং অজ্ঞাত। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন।তার সঙ্গীতের অনুপ্রেরণা ছিলেন তার কাকা অনন্ত ভট্টাচার্য।হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান শুনে বড় হওয়া। ছোট বেলা থেকেই মন ছুটত টুসু,ভাদু,ভাওয়াইয়ায়,ভাটিয়ালি সুরের উজান বাওয়া গান শুনতে শুনতে একসময় মনে হল জোট বাধা দরকার। ১৯৯৮ সালে “India foundation for the arts” থেকে শিল্প লোকসঙ্গীত এর উপর গবেষণার জন্য অনুদান পেয়ে ব্যাঙ্গালরে চলে যান। ১৯৯৯ সালে, তিনি উত্তরবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গের পল্লীগান ও লোকায়ত গানের ঐতিহ্যকে পুনর্জাগরণের উদ্দেশ্যে লোকগানের ব্যান্ড তৈরি করলেন “দোহার” ।এটি একটি লোকসঙ্গীত দল, লোক গানগুলি তার সৃষ্টিশীল দিক নিয়ে, অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি কাজ করেছিলেন।কালিকা প্রসাদের আদিবাড়ি আসামের শিলচর হলেও পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের প্রতি তার ছিল অকৃত্রিম টান ও ভালোবাসা। বাংলাদেশের যে কোন অনুষ্ঠানে ডাক পেলেই ছুটে গেছেন,মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন দুই বাংলার।দোহার এর উপস্থাপনা ছিল স্বতন্ত্র। তাদের কর্মক্ষমতায় আছে আশ্চর্যজনকভাবে শহুরে অনুভূতি একত্রিত করার ক্ষমতা। তার গানগুলো একই সাথে গবেষণা এবং বিনোদন। দোহার ইতোমধ্যে কালিকার পরিচালিত লোক গানের অনেক রেকর্ড প্রকাশ করেছে। কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য হিন্দি ও বাংলা চলচ্চিত্রে কয়েকটি প্লেব্যাক গান গেয়েছিলেন। অশোক বিশ্বনাথের পরিচালিত হিন্দি চলচ্চিত্রে গুমশূদাতে তার গান ছিল।

২০০৭ সালে তিনি সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত বাংলা চলচ্চিত্র চতুরঙ্গয়ে জন্য গান গেয়েছিলেন।২০০৮ সালে, তিনি বাংলা চলচ্চিত্র মনের মানুষ (সোনালি ময়ূর পুরস্কার বিজয়ী) এর জন্য গান গেয়েছিলেন, যা গৌতম ঘোষের পরিচালিত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রকল্প।এটি ফকির লালন শাহের জীবন ও দর্শন নিয়ে সুনিল গঙ্গোপাধ্যায় উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া চলচ্চিত্র। বাংলা চলচ্চিত্র জাতিশ্বর একটি জাতীয় পুরস্কার (রজত কামাল) বিজয়ী চলচ্চিত্র ছিল, এটি শ্রীজিত মুখার্জির পরিচালনায় চলচিত্র, যেখানে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য ২০১৪ সালে গান গেয়েছিলেন।তার শেষ ছায়াছবির কাজ ছিল ভুবন মাঝি।২০১৩ সালে কালিকাপ্রসাদ তার অনন্য সৃষ্টি এবং বাদ্যযন্ত্র শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার “সংগীত সম্মানের পুরস্কার” দেন। তিনি ২০১৩ সালে গুয়াহাটি ব্যতিক্রম গ্রুপ থেকে উত্তর পূর্ব পুরস্কারের সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রদূত পান। তবে শুধু শিল্পী কালিকা প্রসাদ নন, ব্যক্তি হিসাবেও কালিকাপ্রসাদ ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ। নিজগুণেই তিনি তাঁর কর্মজীবনে,বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষের মনের গভীর কখন যে গেঁথে গিয়েছিলেন, তা তিনি হয়ত নিজেও জানতেন না। তিনি ২০১৭ সালের ৭ই মার্চে হুগলী জেলার গুরাপ গ্রামের কাছে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।

Related posts

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ও আমরাঃ থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রেখে লাভ নেই

E Zero Point

‘সোজা বাংলায় বলছি’ – তৃণমূল কংগ্রেসের ভিডিও প্রচার

E Zero Point

ঈদের নামাজ মেমারি কেন্দ্রীয় ঈদগাহে হবে না, শহরের বিভিন্ন মসজিদে সামাজিক দূরত্ব মেনে নামাজ হবে

E Zero Point

মতামত দিন