29/03/2024 : 3:35 PM
আমার দেশ

কোভিড মহামারীর প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্হ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধনের বক্তব্য

জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, দিল্লী, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০:


কোভিড মহামারীর প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের গৃহীত পদক্ষেপগুলির বিষয়ে ১৪ই সেপ্টেম্বর লোকসভা/রাজ্যসভাকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন। তাঁর সেই স্বতঃপ্রবৃত্ত বক্তব্যটি হল :

১. এই পবিত্র সদনকে আমি ইতিপূর্বে গত ফেব্রুয়ারী এবং মার্চ মাসে কোভিড মহামারীর বিষয়ে জানিয়েছিলাম। মাননীয় সদস্যদের কোভিড-১৯ মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে এবং কেন্দ্র এই মহামারীর মোকাবিলায় কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছি।

২. আমার শেষ বক্তব্যের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯কে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং প্রতিটি রাষ্ট্রকে এই জনস্বাস্থ্য সংকটের বিরুদ্ধে দ্রুত ও সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

৩. ১১ই সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে ২১৫টি দেশ/অঞ্চল প্রভাবিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে সারা পৃথিবীতে ২ কোটি ৭৯ লক্ষেরও বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। ৯ লক্ষ ৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। মৃত্যুর হার ৩.২%।

৪. ১১ই সেপ্টেম্বরের হিসেব অনুযায়ী ভারতে ৪৫ লক্ষ ৬২ হাজার ৪১৪ জন সংক্রমিত হয়েছেন। ৭৬ হাজার ২৭১ জন মারা গেছেন। মৃত্যুর হার ১.৬৭ %। ৩৫ লক্ষ ৪২ হাজার ৬৬৩ জন (৭৭.৬৫ %) জন সুস্থ হয়েছেন। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লী, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, আসাম, কেরালা ও গুজরাট- মূলত এই সব অঞ্চল থেকে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ এবং মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই রাজ্যগুলিতে ১ লক্ষের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। কোভিড-১৯এর মোকাবিলায় সরকারি এবং সামাজিক স্তরে আমাদের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে ভারতে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার আটকানো গেছে। প্রতি ১০ লক্ষ জন সংক্রমিতের মধ্যে ৩ হাজার ৩২৮ জন মারা গেছেন। মোট জনসংখ্যার হিসেবে প্রতি ১০ লক্ষ জনের মধ্যে ৫৫ জন মারা গেছেন। সারা বিশ্বে অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে তুলনা করলে ভারতে মৃত্যুর হার সবথেকে কম।

৫. মহামারী সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়গুলি যেমন- কিভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, চিকিৎসার সময় মানুষ কিভাবে সংক্রমিত হচ্ছেন, এই ভাইরাস কতদিন সক্রিয় থাকছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভূমিকা কি হচ্ছে ইত্যাদি বিষয়গুলি এখনও গবেষণার স্তরে রয়েছে। যখন কেউ এই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসছেন, দেখা গেছে তার ১-১৪ দিনের মধ্যে অসুখ ধরা পরছে। এর প্রধান প্রধান লক্ষণগুলি হল- জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। আমাদের দেশে প্রায় ৯২ শতাংশ প্রভাবিতর মৃদু সংক্রমণ হয়েছে। ৫.৮%-র অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন হয়েছে। ১.৭%-কে ইন্টেনসিভ কেয়ারে থাকতে হয়েছে।

৬. এই মহামারীর প্রতিরোধে সক্রিয়, যথাযথ এবং সার্বিকভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার ও সামাজিক স্তরে গৃহিত সর্বাত্মক কৌশল নেওয়ায় এটিকে আটকানো গেছে। যারফলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে এবং এদেশের মানুষ সবথেকে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

৭. কেন্দ্র সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অঙ্গীকার নিয়ে এই মহামারীকে মোকাবিলা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকার দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করার মতো দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। এর আগে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে জনতা কার্ফু পালন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সারা দিয়ে দেশ একজোট হয়ে এই মহামারীকে মোকাবিলা করছে এবং এর আগ্রাসী বিস্তারকে সফলভাবে আটকাতে পেরেছে। ধারণা করা হয় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে ১৪-২৯ লক্ষ সংক্রমণ এবং ৩৭-৭৮ হাজার মৃত্যু আটকানো সম্ভব হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিগত ৪ মাসে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গঠন, মানব সম্পদ তৈরি এবং পিপিই, এন-৯৫ মাস্ক এবং ভেন্টিলেটরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী দেশে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, মার্চের হিসেব অনুসারে দেশে ৩৬.৩ গুন বেশি নির্ধারিত আইসোলেশন বেড এবং ২৪.৬ গুন বেশি নির্ধারিত আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি সময়ে ভারতে পিপিই তৈরি করা হতনা। আজ আমরা পিপিই তৈরিতে আত্মনির্ভর হয়েছি এবং তা বিদেশে রপ্তানী করতে পারছি। এই অবকাশে আমি সমস্ত দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানাই, যিনি ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

৮. কেন্দ্র এই মহামারীকে আটকানোর জন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমি প্রত্যহ পরিস্থিতির পর্যালোচনা করছি। রাজ্যগুলির সঙ্গে যথাযথভাবে কোভিড ব্যবস্থাপনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছেন। আমার নেতৃত্বে বিদেশ মন্ত্রী, অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, জাহাজ চলাচল প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী তেশরা ফেব্রুয়ারীর পর ২০ বার বৈঠক করেছেন। এছাড়াও ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্বে সচিবদের কমিটি নিয়মিত পর্যালোচনা করছে। এই কমিটিতে স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অসামরিক বিমান চলাচল, স্বরাষ্ট্র, বস্ত্র, ফার্মা, বাণিজ্য এবং রাজ্যগুলির মুখ্য সচিবরা রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২৯শে মার্চ কোভিড-১৯এর ব্যবস্থাপনার জন্য ১১টি ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী তৈরি করেছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি ব্যবস্থাপনা, হাসপাতাল, আইসোলেশন এবং কোয়ারেনটাইনের ব্যবস্থাপনা, অসুখে নজরদারি এবং নমুনা পরীক্ষা, জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের সহজলভ্যতা, মানব সম্পদ বৃদ্ধি, সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যবস্থাপনা, বেসরকারী ক্ষেত্রের সঙ্গে সহযোগিতা, আর্থিক এবং অন্যান্য জন-কল্যাণমূলক ব্যবস্থাপনা, তথ্য সম্প্রচার ও জন সচেতনতা গড়ে তোলা, প্রযুক্তি ও তথ্য ব্যবস্থাপনা, জন অভিযোগ এবং লকডাউনের সময় বিভিন্ন কৌশলগত বিষয় নিয়ে এই গোষ্ঠী কাজ করছে। চাহিদার কথা বিবেচনা করে ১০ই সেপ্টেম্বর গোষ্ঠীগুলিকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। আমার নিজের মন্ত্রক সব সময় পরিস্থিতির পর্যালোচনা করছে। রাজ্যগুলির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য বিষয়ক আধিকারিক এবং জেলা স্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে আমরা ৬৩টি ভিডিও কনফারেন্স করেছি। স্বাস্থ্য পরিষেবার মহানির্দেশকের পৌরহিত্যে যৌথ নজরদারি গোষ্ঠী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রককে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। এই সংক্রমনের ঝুঁকি, একে প্রতিহত করার প্রস্তুতি এবং চূড়ান্ত নীতি-নির্দেশিকা তৈরির জন্য এই গোষ্ঠী ৪০ বার বৈঠক করেছে।

৯. কেন্দ্র সফলভাবে মহামারীর মোকাবিলায় প্রাপ্ত বিভিন্ন অভিজ্ঞতা রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসকদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে। সংক্রমণ প্রতিহত করার পরিকল্পনা, সাধারণ নাগরিকের আচার-আচরণ, বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা, মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্য, পরীক্ষাগারগুলির ব্যবস্থাপনা, হাসপাতালের পরিকাঠামো, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের যথাযথ ব্যবহার ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

১০. কেন্দ্র কোভিড-১৯ মহামারীর সংক্রমণ আটকাতে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। ১৭ই জানুয়ারী প্রথম ভ্রমণ সংক্রান্ত পরিমর্শ জারি করা হয়। এই পরামর্শ পরবর্তীতে নানা সময়ে পরিমার্জিত করা হয়েছে। ২৩শে মার্চ পর্যন্ত সব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের (অর্থাৎ যতদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমান দেশে আসছিল) পরীক্ষা করা হচ্ছিল। বিমান বন্দরগুলিতে ১৪ হাজার ১৫৪টি বিমানের ১৫ লক্ষ ২৪ হাজার ২৬৬ জন যাত্রীকে পরীক্ষা করা হয়। বিমান বন্দর ছাড়াও ১৬ লক্ষ ৩১ হাজার যাত্রীকে স্থল বন্দরে এবং ৮৬ হাজার ৩৭৯ জন যাত্রীকে ১২টি প্রধান এবং ৬৫টি ছোট বন্দরে পরীক্ষা করা হয়েছে।

১১. বর্তমানে কেন্দ্র পরামর্শ দিয়েছে ২২শে মার্চ থেকে কোনো আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহি বিমান ভারতে আসবেনা। তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিভিন্ন দেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের আনার জন্য ৭ই মে থেকে বন্দে ভারত মিশনের আওতায় বিমান চলাচল করছে। ভারত এবং ৯টি দেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার নিরিখে সাময়িকভাবে বাণিজ্যিক যাত্রী পরিষেবা বিমান সংস্থাগুলি শুরু করেছে। ২টি দেশই যাতে  এক্ষেত্রে সমানভাবে উপকৃত হয়, এ ধরণের পরিস্থিতিতেই এই বিমানগুলি চলাচল করছে। ২৪শে মে আন্তর্জাতিক বিমানের যাত্রীদের বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, যেটি দোশরা আগস্ট সংশোধন করা হয়েছে।

লকডাউন-১এর আগে কেন্দ্র চীনের উহান, ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজ জাপান, ইরান, ইতালী এবং মালয়েশিয়া থেকে ভারতীয়দের নিয়ে এসেছিল। বন্দে ভারত মিশনের মাধ্যমে ১১ই সেপ্টেম্বর মোট ১২ লক্ষ ৬৯ হাজার ১৭২ জন যাত্রীকে নিয়ে আসা হয়েছে।

১২. ভ্রমণ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে এলাকাগতভাবে নজরদারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে একটি সুসংহত ব্যাধি নজরদারি ব্যবস্থাপনার সাহায্যে সংক্রমিতদের বিষয়ে জানানো হয়েছে। ১১ই সেপ্টেম্বরের হিসেব অনুযায়ী মোট ৪০ লক্ষ মানুষকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। সংক্রমিতদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা হয়েছে যাতে সংক্রমণ শৃঙ্খল ভাঙা যায়।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক সংক্রমণ প্রতিহত করার পরিকল্পনা দোশরা মার্চ এবং চৌঠা এপ্রিল ঘোষণা করেছিল। এই পরিকল্পনাটি বিভিন্ন সময়ে সংশোধন করা হয়েছে। কন্টেনমেন্ট এবং বাফার এলাকার সংজ্ঞা নির্ধারণ, কঠোরভাবে বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি চালানো, সন্দেহভাজন মানুষদের আইসোলেশনে রেখে নমুনা পরীক্ষা করা, যারা সংক্রমিতদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের কোয়ারেনটাইনে রাখা, নিবিড়ভাবে জন সচেতনতামূলক প্রচার চালানো, দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কন্টেনমেন্ট এবং বাফার এলাকায় ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্রবল শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত মানুষদের নজরদারিতে রাখার মাধ্যমে সংক্রমণ শৃঙ্খল ভাঙার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

১৩. পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী দেশে পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। জানুয়ারী মাসে যেখানে সারা দেশে মাত্র একটি পরীক্ষাগারে কোভিড পরীক্ষা করা যেত, আজ ১৭০৫টি পরীক্ষাগারে এই পরীক্ষা করা যাচ্ছে। লাদাখ, সিকিম, অরুণাচলপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড সহ অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য লাক্ষ্মাদ্বীপ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিক্ষাগার গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ১০ লক্ষ নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রত্যহ মোট জনসংখ্যার নিরিখে ১০ লক্ষ জন পিছু ৭২০টি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ থেকে যা অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১০ লক্ষ জন পিছু দৈনিক ১৪০টি নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছে। ১১ই সেপ্টেম্বরের হিসেব অনুযায়ী ৫ কোটি ৯১ লক্ষ ৮৯ হাজার ২২৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। একটা সময় দেশে কোভিডের জন্য পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি বা অন্যান্য উপাদান তৈরি করা হতনা। আজ আমরা প্রত্যহ ১০ লক্ষ কিট দেশে তৈরি করছি।

১৪. কোভিড-১৯এর মোকাবিলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থাপনা নেওয়া হয়েছে। যাদের মৃদু সংক্রমণ হয়েছে বা কোন লক্ষণ নেই তাদের জন্য কোভিড কেয়ার সেন্টারে আইসোলেশন বেড, যাদের সংক্রমণ মাঝামাঝি তাদের জন্য অক্সিজেনের সুবিধাযুক্ত নির্ধারিত কোভিড স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আইসোলেশন বেড এবং যাদের সংক্রমণের মাত্রা খুব বেশি তাদের জন্য কোভিড নির্ধারিত হাসপাতালে আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একাজে ইএসআইসি, প্রতিরক্ষা, রেল, আধা সামরিক বাহিনী, ইস্পাত মন্ত্রক ইত্যাদির হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১২ই সেপ্টেম্বরের হিসেব অনুযায়ী ১৫ হাজার ২৮৪টি কোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে ১৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৪৬টি আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৯৩টি আইসোলেশন বেডে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩২ হাজার ৫৭৫টি ভেন্টিলেটর বেড ও ৬২ হাজার ৭১৭টি আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন উন্নত দেশে বড় ধরণের কোভিড সংকট মোকাবিলায় যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, ভারতে যাতে সেরকম পরিস্থিতি না হয় তার জন্য প্রতি মুর্হুতে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে পরিকাঠামো তৈরিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এগুলির পাশাপাশি ১২ হাজার ৮২৬টি কোয়ারেনটাইন কেন্দ্রে ৫ লক্ষ ৯৮ হাজার ৮১১টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১৫. কোভিড-১৯এর চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব নীতি-নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে সেগুলি বিভিন্ন সময়ে সংশোধন করা ও প্রচার চালানো হচ্ছে। সংক্রমণের বিভিন্ন পর্যায়ের সংজ্ঞা নির্ধারণ, সংক্রমণ প্রতিহত করার পদ্ধতি, গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা, বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতির মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত এই ভাইরাসের মোকাবিলায় কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। জ্বর, কাশি, শরীর থেকে জল বেরিয়ে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ যুক্ত সমস্যার ক্ষেত্রে যেরকমভাবে চিকিৎসা করা হয়, এখানেও তাই করা হচ্ছে। আমাদের দেশে  হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে কম ও মাঝারি সংক্রমিতদের প্রয়োগ করা হচ্ছে। সীমিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের মাধ্যমে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু দেশে এই ওষুধ প্রয়োগে যথাযথ সুরক্ষাবিধি মেনে ভালো ফল পাওয়া গেছে।

এছাড়াও যাদের সংক্রমণের মাত্রা বেশি তাদের চিকিৎসকদের নজরদারিতে রেমডেসিভির, প্লাজমা থেরাপি এবং টোসিলিজুমাব দেওয়া হচ্ছে।

এই ধরণের ওষুধগুলির প্রচার চালানো এবং সংক্রমণের ফলে মৃত্যুর হার কমানোর জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিচালকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি  করোনা হেল্পলাইন 9971876591 চালু করা হয়েছে। দিল্লীর এইমস কোভিড-১৯ জাতীয় টেলি কনসালটেশন সেন্টার চালু করেছে যেখানে দেশের যেকোন প্রান্তের চিকিৎসকরা +91-9115444155 নম্বরে ডায়াল করে পরামর্শ পেতে পারেন। জনসাধারণও এই নম্বরের সুবিধা নিতে পারেন। অহেতুক ভিড় এড়াতে সংক্রমিতরা তাঁদের অসুখের বিষয়ে টেলিফোনের মাধ্যমে পরামর্শ নিতে পারেন। ২৫শে মার্চ থেকে চালু হওয়া এই ব্যবস্থার ফলে যেসব অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ কম সেখানকার জনসাধারণ উপকৃত হচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক,  দিল্লীর এইমস-এর সঙ্গে একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। রাজ্যস্তরেও এ ধরণের কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে যেখান থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য স্তরের উৎকর্ষ কেন্দ্রগুলিকে সাপ্তাহিক ওয়েবিনারের সাহায্যে এইমস থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে রাজ্যস্তরের উৎকর্ষ কেন্দ্রগুলি জেলাস্তরে এই পরামর্শগুলি জানিয়ে দেবে।

কোভিড এবং কোভিড ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের সুবিধার্থে টেলি-মেডিসিন ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে এবং বিচ্ছিন্ন এলাকায় ইসঞ্জীবনী౼ একটি ওয়েবভিত্তিক সর্বাঙ্গীন টেলি ব্যবস্থাপনায় ২৩টি রাজ্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আইসিএমআর, কোভিডের বিষয়ে একটি জাতীয় রেজিস্ট্রি তৈরি করেছে। যেখান থেকে এই ভাইরাসে সংক্রমিতদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

১৬. এই সংক্রমণে চিকিৎসার জন্য ১৩টি ওষুধকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সাহায্যে প্রচলিত বিভিন্ন পন্থা প্রয়োগ করা হচ্ছে। সেপসিভ্যাক-এই রোগ প্রতিরোধী ওষুধটি দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফলভাবে শেষ করেছে। এসিকিউএইচ-এরও সফলভাবে দ্বিতীয় পরীক্ষা পর্ব শেষ হয়েছে। অশ্বগন্ধা এবং গুলঞ্চ+ পিপুল, জষ্ঠি মধুর তিনবার পরীক্ষামূলক ব্যবহার এবং আয়ুষ-৬৪ ওষুধটিকে মাঝারি সংক্রমিতদের ওপর প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

নিঃসন্দেহে এই সংক্রমণকে আটকাতে হলে একটি কার্যকরী টিকা অত্যন্ত জরুরি। সারা বিশ্বে ১৪৫টি টিকা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। ভারতে ৩৫টি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। ৩০টির বেশি টিকাকে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে। ৩টি টিকা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্তরের অগ্রবর্তী পর্যায়ে রয়েছে। আরও ৪টির বেশি টিকা প্রাক-চিকিৎসার পর্যায়ে আছে।

কোভিড-১৯এর জন্য জৈব প্রযুক্তিগত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এরজন্য ৪০ হাজারের বেশি নমুনা নিয়ে গবেষকরা কাজ করছেন যেগুলির সাহায্যে রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং টিকা তৈরির কাজে সুবিধা হবে।

৭ই আগস্ট কেন্দ্র কোভিড-১৯এর টিকা প্রয়োগের জন্য একটি জাতীয় বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী তৈরি করেছে। নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সদস্য এই কমিটির চেয়ারম্যান।

১৭. আয়ুষ মন্ত্রক কোভিড-১৯এর ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রক রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য নীতি-নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধির জন্য এবং সংক্রমণ প্রতিহত করতে ৮টি বিদেশী ভাষায় আয়ুষ মন্ত্রক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন দেশের ভারতীয় দূতাবাসগুলিতে তা প্রচার করা হচ্ছে। আয়ুষ হাসপাতালগুলিকে কোয়ারেনটাইন সেন্টার, আইসোলেশন সেন্টার, কোভিড কেয়ার সেন্টার এবং কোভিড হেল্থ সেন্টারে পরিনত করা হয়েছে। covidwarriors.gov.in এই ওয়েবসাইটে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার আয়ুষ চিকিৎসক নাম নথিভুক্ত করেছেন। আয়ুষ মন্ত্রক গবেষণা ও উন্নয়ন গোষ্ঠী তৈরি করেছে , যেখানে  কোভিড সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজ করা হচ্ছে। কোভিড-১৯এর চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধের জন্য আয়ুষ-সিএসআইআর যৌথ উদ্যোগে ওষুধ তৈরি করছে। আয়ুষ গবেষণা পরিষদ এবং মন্ত্রকের অধীনস্থ বিভিন্ন জাতীয় সংস্থা কন্টেনমেন্ট এলাকায় থাকা মানুষদের ওপর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। আয়ুষ মন্ত্রক আয়ুষের বিভিন্ন পরামর্শ এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানাতে আয়ুষ-সঞ্জীবনী অ্যাপ চালু করেছে।

১৮. রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে তারা যেন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সহ অন্যান্য সামগ্রী যথেষ্ট পরিমানে সংগ্রহ করে রাখে। কেন্দ্র ১ কোটি ৯২ লক্ষ পিপিই কেনার আবেদন করেছে। মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৩৯ লক্ষ পিপিই কিট এবং ৩ কোটি ৪৩ লক্ষ এন-৯৫ মাস্ক রাজ্যগুলিকে দিয়েছে (১১ই সেপ্টেম্বরের হিসেব অনুযায়ী)।

ফার্মাসিউটিক্যাল দপ্তর হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের উৎপাদন বহুগুন বৃদ্ধি করেছে। ১১ই সেপ্টেম্বরের হিসেব অনুসারে ১০ কোটি ৮৪ লক্ষ ট্যাবলেট রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে দেওয়া হয়েছে। ভারত বিশ্বের ১৪০টির বেশি দেশকে এই ওষুধ সরবরাহ করেছে।

কেন্দ্র ৬০ হাজার ৯৪৮টি ভেন্টিলেটর কেনার বরাত দিয়েছে। ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩২ হাজার ১০৯টি ভেন্টিলেটর রাজ্যগুলির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ৩০ হাজার ১৭০টি ভেন্টিলেটর ইতিমধ্যেই সরবরাহ করা হয়েছে। দেশ অক্সিজেন এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার তৈরির বিষয়ে স্বয়ং সম্পূর্ণ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এ পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যে ১ লক্ষ ২ হাজার ৪০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেছে। এর পাশাপাশি অক্সিজেন কনসেনট্রেটারও দেওয়া হয়েছে।

১৯. কোভিড যোদ্ধাদের বিপুল সংখ্যায় চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ করাও জরুরি। এ কারণে প্রতিরক্ষা, আয়ুষ, এনসিসি, এনএসএস, এনওয়াইকে, রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা এবং বেসরকারী সংস্থা থেকে কর্মীদের নেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কোভিড যোদ্ধারা সব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে মানব জাতির জন্য সেবা করে চলেছেন। আমাদের দেশের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সামনের সারির কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, পুলিশ, সাফাই কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবক এবং সাংবাদিক- যাঁরা নিরলসভাবে দেশবাসীকে কোভিড থেকে রক্ষা করে চলেছেন,  সারা দেশ তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি এই মহান সদনকে অনুরোধ করবো তাঁদের পরিষেবাগুলির জন্য প্রশংসার ব্যবস্থা করতে।

নানা জায়গায় স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করা, হয়রানি এবং তাদের জীবন সংশয়েরও ঘটনা ঘটেছে। এর মোকাবিলা করতে এবং তাঁরা যাতে তাঁদের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে পারেন কেন্দ্র তার জন্য ২২শে এপ্রিল ২০২০র মহামারী ব্যধি সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করেছে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে মানব সম্পদ বৃদ্ধির জন্য আইগট- দীক্ষা নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। জন প্রশাসন দপ্তর এই উদ্যোগ নিয়েছে। এর সাহায্যে হাসপাতালে সংক্রমিতের চিকিৎসা এবং তৃণমূল স্তরের কমীদের নজরদারি সহ নানা কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আঞ্চলিক ভাষায় এই প্রশিক্ষণের মডিউলগুলি তৈরি করা হয়েছে। ৫ হাজার ৬৯৯ জন চিকিৎসক ৮৬ হাজার ১৮ জন আয়ুষ পেশাদার, ৪ হাজার ১০২ জন নার্স, ৯৬৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ৫ হাজার ৮৮১ জন সম্মুখ সারির যোদ্ধা, ২ লক্ষ ৭০ হাজার ৭৩৬ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং ২৫ লক্ষ ৪২ হাজার ৮৯২ জন অন্যান্য অংশগ্রহণকারী সহ প্রায় ২৯ লক্ষ ১৫ হাজার কর্মী আইগট দীক্ষার বিভিন্ন পাঠক্রমে নাম নথিভুক্ত করেছেন। ইতিমধ্যেই ১৮ লক্ষ ৯৬ হাজার জন নানা পাঠক্রম শেষ করেছেন।

আমরা এখন ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের দিকে নজর দেব। যেসব ক্লাস্টারে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন সেইসব শহর, আধাশহর এবং গ্রামাঞ্চলে বিপুল সংখ্যায় সংক্রমণ আটকাতে এবং মৃত্যুর হার কমাতে জনসাধারণের সহযোগিতায় সরকার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। একইসঙ্গে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য, টিকার মাধ্যমে যেসব অসুখ প্রতিহত করা যায়, সংক্রমিত নয় এমন ব্যধি, যক্ষ্মা, কালাজ্বর এবং ম্যালেরিয়ার মতো ভেক্টর বাহিত অসুখ প্রতিহত করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই কোভিড ছাড়া অন্যান্য অসুখের বিষয়েও সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

২০. কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক দেশে প্রতিদিন কোভিড-১৯এর সংক্রমণের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য দিয়ে থাকে। এছাড়াও নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সচেতনতার জন্য প্যামফ্লেট, পোস্টার, অডিও-ভিস্যুয়াল মাধ্যমে প্রচারের উপকরণ এবং শব্দচিত্র তৈরি করে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে পাঠানো হয়। কোভিড-১৯এর বিষয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ওয়েবসাইট সহ সামাজিক মাধ্যমে প্রচার কর্মসূচি চালানো হয়। কোভিডের জন্য কি কি করা উচিত নয় সে সংক্রান্ত নানা পরামর্শ এসএমএস করে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যেই ৫৫০ কোটি এসএমএস পাঠানো হয়েছে। ১৩টি ভাষায় টেলিকম সংস্থাগুলিকে কলার টিউন মেসেজ পাঠানো হয়েছে। যা ১১৭ কোটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে গেছে।

1075 হেল্পলাইন নম্বর ব্যবহার করে শুরুর থেকে নাগরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪১ লক্ষ ৪ হাজার ফোনকল এই নম্বরে এসেছে।

২১. জৈব প্রযুক্তি দপ্তর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর, সিএসআইআর এবং স্বাস্থ্য গবেষণা দপ্তর কোভিড-১৯এর জন্য নানা ধরণের গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজ করছে। শিক্ষাবীদ, গবেষণা ও উন্নয়নমূলক পরীক্ষাগার, শিল্প সংস্থা, নতুন উদ্যোগ এবং অসরকারী সংগঠনগুলিকে একাজে সামিল করা হয়েছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে বিভিন্ন বিজ্ঞান সম্মত গবেষণা, গাণিতিক মডেলের সাহায্যে তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের ভেন্টিলেটর, নমুনা পরীক্ষার কিট, টিকা, ওষুধ, ভাইরাস প্রতিরোধী নানা সরঞ্জাম, ভাইরাস মুক্ত করার উপাদান, পিপিই কিট, মাস্ক, ভ্রাম্যমান নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্র, কৃত্রিম মেধাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা সহ তথ্য প্রচারের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

একাজে নতুন উদ্যোগের সংস্থাগুলিকে চিহ্নিত করে ১১০টি এ ধরণের সংস্থা সহ ২০টি শিল্প সংস্থাকে বিভিন্ন পণ্যের বাণিজ্যিক উপাদনে সাহায্য করা হচ্ছে। ১৫০টির বেশি প্রকল্প এরজন্য চালু করা হয়েছে।

২২. কেন্দ্র নিয়মিতভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তর, আঞ্চলিক দপ্তর সহ ভারতের অফিসে সমন্বয় বজায় রেখে চলেছে। এর মাধ্যমে এই সংক্রমণের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ভারত অন্যান্য দেশগুলিকে কোভিড মোকাবিলায় সাহায্য করছে। জি-২০ এবং ব্রিকস দেশগুলিতে ভারত কোভিডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির প্রতি প্রয়োজনীয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

২৩. কেন্দ্র সক্রিয়ভাবে যেসব জায়গায় ঘাটতি রয়েছে সেগুলিকে চিহ্নিত করছে এবং এ ধরণের মহামারী, অতিমারী এবং বিপর্যয় ভবিষ্যতে দেখা দিলে তার মোকাবিলায় আত্মনির্ভর ভারত গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর সুস্থ ভারত যোজনার আওতায় ৬৫ হাজার ৫৬০ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকার একটি প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে যেখানে গবেষণা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২৪. আমি সংসদের মাননীয় সদস্যদের জানাচ্ছি যে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই এখনও অনেকটা লড়তে হবে। অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা আনলকের ব্যবস্থা করেছি এবং এক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখে কোভিড মহামারীকে আটকাতে ও সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন।

কোভিডের জন্য যথাযথ আচার-আচরণের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে আপনাদের নিজেদের কেন্দ্রে আপনাদের সাহায্য অত্যন্ত জরুরি। মাস্ক এবং ফেস কভার ব্যবহার করা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় যথাযথ নিয়ম মেনে চলা এবং ২ গজ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো সাধারণ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাগুলি এক্ষেত্রে সামাজিক টিকার ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা যদি এগুলিকে মেনে চলতে পারি তাহলে এই মহামারীর মোকাবিলা করা আমাদের পক্ষে সহজ হবে।

২৫. আমি এই সদনকে জানাতে চাই যে ভারতে কোভিড প্রতিহত করার জন্য সরকার সব রকমের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

Related posts

ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস ও ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞপ্তি

E Zero Point

তেলেঙ্গানা চা চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩

E Zero Point

কারগিল বিজয় দিবসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর শ্রদ্ধা

E Zero Point

মতামত দিন