26/04/2024 : 5:32 PM
বিদেশ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনঃ ভোটাধিকার বঞ্চিত কৃষ্ণাঙ্গরা

জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০:


যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বর্ণবাদ বিলোপের কথা বলা আছে। দেশটির সব নাগরিক রাষ্ট্রের চোখে সমান এমনটাই বলা আছে মোটা দাগে। কিন্তু সংবিধানে থাকা আর সামাজিক পর্যায়ে তা মানার ক্ষেত্রে রয়েছে আকাশ পাতাল ফারাক। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও অনেক সময় কৃষ্ণাঙ্গরা ভোটাধিকার পান না। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়ার কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে ১৯৬৫ সালের ২৫ জানুয়ারির আলাবামার একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ডালাস কাউন্টির কোর্টহাউজে ভোটার হিসেবে নাম লেখাতে এসেছেন অ্যানি লী কুপার। শুধু তিনি নন, লাইনে দাঁড়িয়ে আরও বহু কৃষ্ণাঙ্গ। তারা সবাই ভোটার হতে চান। আলাবামা রাজ্যে ভোটার হওয়ার জন্য এটিই অ্যানি লী কুপারের প্রথম চেষ্টা নয়। এর আগেও তিনি বহুবার এই কাউন্টি অফিসে এসেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। সেলমা শহরের প্রায় অর্ধেক লোক ছিল কৃষ্ণাঙ্গ, কিন্তু তাদের মধ্যে তখন ভোটার হতে পেরেছিল মাত্র ১ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলন এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সেলমা এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে আছে। ভোটার হওয়ার জন্য জানুয়ারির ব্যর্থ চেষ্টার পর সেখানে এক গণমিছিলের কর্মসূচি নেওয়া হয়। এই মিছিল যাবে সেলমা থেকে আলাবামা রাজ্যের রাজধানী মন্টোগোমারি। পথের দূরত্ব ৫৪ মাইল। ১৯৬৫ সালের ৭ মার্চ মিছিল শুরু হলো সেলমার এক চার্চ থেকে। ছয়শোর মতো কৃষ্ণাঙ্গ নারী-পুরুষ সেই মিছিলে। আলাবামার গভর্নর জর্জ ওয়ালেস এরই মধ্যে এই মিছিলকে বেআইনি ঘোষণা করেছেন। রাজ্যের পুলিশ বাহিনীকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে মিছিলে বাধা দেওয়ার জন্য।

ধরা যাক, যুক্তরাষ্ট্রে কেউ ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে গেছেন। রাজ্য নির্বাচন অফিসের কেরানি তাকে বললেন, ‘সংবিধানের এই ধারাটির ওপর একটি রচনা লিখে আনুন। তারপরই আপনাকে ভোটার করা হবে।’ এই ব্যক্তির ভোটার হওয়ার সম্ভাবনা কতটা? নেই বললেই চলে। কোন দেশের ভোটারই দেশের সংবিধান মুখস্থ রাখেন না। সংবিধান যে ভাষায় লেখা হয়, তার মর্ম সাধারণের পক্ষে উপলব্ধি করাও কঠিন।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে এমন নানা রকম নিয়মই চালু করা হয়েছিল। এসব নিয়মের লক্ষ্য ছিল মূলত কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা। ভোটার হতে গেলে এ রকম নানা বাধা-বিপত্তি আর হুমকির মুখে পড়তে হতো কৃষ্ণাঙ্গদের। যেসব নিয়ম-কানুনের বেড়াজাল দিয়ে তাদের ভোটার তালিকার বাইরে রাখা হতো সেগুলো মূলত তৈরি করত প্রতিটি রাজ্য নিজের মতো করে। এই আইনগুলো পরিচিত ‘জিম ক্রো’ আইন নামে।

১৯৬২ সালে মিসিসিপিতে যত কালো মানুষ ভোটার হওয়ার উপযুক্ত, তাদের মাত্র ৫ শতাংশ ছিল ভোটার। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মিসিসিপির ১১টি কালো সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্টিতে একজনও কালো ভোটার নেই। একই চিত্র ছিল দক্ষিণের বেশিরভাগ রাজ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের পথে বাধা সৃষ্টির ইতিহাস অনেক পুরনো। দেশটির ক্ষমতাবানরা শুরু থেকেই ভোটাধিকার কেবল তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বাকিদের এ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা গণতন্ত্রে তাদের আস্থা রেখেছিলেন, কিন্তু একই সঙ্গে তারা ভোটাধিকারের ওপর মারাত্মক সব বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। কে ভোট দিতে পারবে আর কে পারবে না, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ছেড়ে দেওয়া হয় রাজ্যগুলোর ওপর।

Related posts

চারটি ধাপে চালু হচ্ছে পবিত্র ওমরাহ

E Zero Point

প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে চিন্তা করতেনঃ শেখ হাসিনা

E Zero Point

ফের মা হচ্ছেন ১৫ সন্তানের জননী!

E Zero Point

মতামত দিন