জিরো পয়েন্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ১২ জুন ২০২২:
অভিজিৎ সিনহা
যুদ্ধ, যুদ্ধ আর যুদ্ধ। মৃত্যু, রক্তপাত। কত না ছলে। যুদ্ধে লাভবান হয় অস্ত্র-কারবারীরা আর ক্ষতি সমগ্র বিশ্বের। এ সবাই জানলেও অনিবার্যভাবে হয় যুদ্ধ। হতে থাকে। এখনই চলছে ইউক্রেন আর ইয়েমেনে। ইউক্রেন নিয়ে গাদাগাদা নিউজপ্রিন্ট আর ফুটেজ খরচ হলেও ইয়েমেন নিয়ে মুখে কুলুপ সবারই।
ইয়েমেনে যুদ্ধ চলছে সাত বছর ধরে। ইয়েমেনের সরকার না কি সন্ত্রাসবাদী, এই অভিযোগে তার উপর চড়াও হয়েছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। কারা আছে এই জোটে? আছে আমিরাত, বাহারাইন, কাতার আর কুয়েইত। মানে যেসব দেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। অথচ যাদের নিজেদের দেশেই গণতন্ত্র নেই। সৌদি-সহ বেশ কয়েকটি দেশেই রাজতন্ত্র। নেই বিরোধী দলের অস্তিত্ব। নেই বহুদলীয় নির্বাচন পদ্ধতি। অনেক দেশেই বিচার হয় শরিয়ত বিধানে। বরং এইদিক থেকে দেখতে গেলে ইরান এইসব দেশ থেকে অনেক উন্নত। ইরানে বহুদলীয় গণতন্ত্র রয়েছে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্বাচন হয়। প্রথম তালিবান সরকারের বিরোধিতা করেছে ভারতেরই মতো। এই দেশ রসূল ইস্যুতে অন্য আরব দেশগুলোর পাশে থাকলেও জানিয়েছে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা আগের মতোই চালিয়ে যেতে চায় তারা। বর্তমানে এই দেশের বিদেশমন্ত্রী ভারত সফরে রয়েছেন। ইরানের সঙ্গে অন্য আরব দেশের কোনো তুলনাই হয় না।
এনডিটিভির বয়ান মোতাবেক, ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে আলোচনা কালে রসূল ইস্যু তুলে ধরেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী। এবং দোভালের উত্তরে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি তা করলেও ড্যামেজ যা হবার তা হয়েইছে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ সহ ভারতের নানা প্রান্তে। এবং আরো আশ্চর্যের, যে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ প্রিয়াঙ্কা বাল্মীকি কাণ্ডে দেড় বছরেও অপরাধী ধরতে পারে না, তারা ২৪ ঘন্টার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১০৯ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় মিম নেতা।
আমরা জানি, ভারতের সব রাজ্যেই এই মিম দলটি দায়িত্ব নিয়ে বিজেপিকে জিতিয়ে দেয়। সম্প্রতি এক বড় জয় পেয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। তিনিই নরেন্দ্র মোদী-পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর আরেকটি প্রশ্নও উঠছে। ২০২৪-এ নরেন্দ্র মোদীকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্যই কি এই আয়োজন? আর সে-কারণেই কি আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে মিম?
আমরা সকলেই জানি, ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন ঘটানোই বিজেপি রাজনীতির মূল ভিত্তি। বিভাজন সাকসেসফুলি ঘটানো গেলে বিজেপি জিতবে। নচেৎ নয়। অর্থনৈতিক দিক থেকে এই সরকার পুরো ফেলিওর। কিছুই গর্ব করে বলার মতো নেই এই সরকারের পক্ষে। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী হাত তুলে নিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জিততে গেলে বিভাজন ঘটানো ছাড়া উপায় নেই। আর সেটাই করে দিল রেয়াজি পাঁঠার দল।
অনেকে আবার অবরোধে মানুষের দুর্দশার কথা বলে বিষয়টাকে লঘু করে দিতে চাইছেন। অবরোধ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অন্যতম অস্ত্র। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এর প্রয়োগ ঘটিয়েছেন সার্থকভাবে। কিন্তু এখন তো অপপ্রয়োগ হচ্ছে। আর সরকার এগুলি ঘটতে দিচ্ছে নিজস্বার্থেই। ক’দিন আগেই ইউএপিএ বিরোধী সভা হতে দিচ্ছিল না পুলিশ। কিন্তু এটা হতে দিচ্ছে। শুধু বাংলায় নয়, বিজেপি শাসিত রাজ্যেও। কেন? ভাবতে হবে।
(জিরো পয়েন্ট ওয়েব পোর্টালে প্রকাশিত নিবন্ধগুলির বক্তব্য লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত)