25/04/2024 : 11:32 AM
আমার বাংলা

খাদ্য সংকটের মুখে পশ্চিমবঙ্গ?

জিরো পয়েন্ট নিউজ – জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, ২৫ জুলাই ২০২২:


মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আহার, বস্ত্র ও বাসস্হানের প্রয়োজন। গাছের ছাল বা পাতা ছিল আদিম মানুষের বস্ত্র। নির্দিষ্ট বাসস্হান বলে কিছু না থাকলেও বেঁচে থাকার জন্য আহারটা নিয়মিত ছিল। হয়তো সবসময় পুষ্টিকর খাদ্য জোটেনি। তখন তো যাযাবর জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষ খাদ্য সংগ্রহের জন্য বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত। মানুষ ধীরে ধীরে সভ্য হয়েছে। বস্ত্র ও বাসস্হান গড়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত আধুনিক হতে গিয়ে মনে হচ্ছে নিকট ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গ, কার্যত গোটা দেশ, আজ ভয়ংকর খাদ্য সংকটের মুখে।

অত্যধিক হারে জন্মহার বৃদ্ধি এবং সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ার জন্য বাঁধভাঙা বন্যার ঢেউয়ের মত অনুপ্রবেশ – এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে পশ্চিমবঙ্গ আজ অত্যধিক জনঘনত্ব পূর্ণ রাজ্য হলেও পশ্চিমবঙ্গের জমির আয়তন কিন্তু বাড়ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই বাসস্হানের জন্য দখল হয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি। আবার সারের মূল্যবৃদ্ধি সহ চাষের অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ার জন্য উৎপন্ন ফসল বিক্রি করে চাষের খরচ উঠছে না। এই অজুহাতে এবং আরও অন্যান্য কারণে অনেকেই অতিরিক্ত মূল্য পেয়ে চাষের জমি বিক্রি করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে বেকারত্ব দূর করতে হলে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে। তার জন্যও জমি দরকার। শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। অর্থ বিনিয়োগের আগে যেকোনো শিল্পপতি অন্যান্য শর্তের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়। এরফলে কারখানার কর্ণধারদের যাতায়াতের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে।

স্বাভাবিক ভাবেই শিল্পপতিদের নজর থাকে জাতীয় সড়ক বা রেললাইনের ধারের জমি। সেক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত খরচ অনেকটা কমে যাবে। এখন তো আবার রেললাইনের প্রায় কাছেই জাতীয় সড়ক বা রাজ্য সড়ক অবস্হিত। ডবল যোগাযোগের সুবিধার ফলে সেইসব জমিগুলো ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে শিল্পপতিদের দখলে।

হাওড়া-বর্ধমান মেন বা কর্ড লাইন শাখার রেললাইনের দু’ধার, একইভাবে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে, বর্ধমান-বোলপুর এন.এইচ ২বি সহ বিভিন্ন জেলায় রাজ্য অথবা জাতীয় সড়কের দু’পাশের কৃষিজমির অধিকাংশ আজ অন্যের দখলে। নবাবহাট থেকে এন.এইচ ২বি রোড ধরে বলগোণা মোড় পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশের কৃষিজমি আজ কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয় না।কোথাও নির্মাণ হচ্ছে বসতবাটি, কোথাও বা শিল্প। এইভাবে কৃষি জমিতে কৃষি ছাড়া যদি অন্য কাজ হয় তাহলে খাদ্য সংকট অনিবার্য।

একটা সময় এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছোটবড় অসংখ্য শিল্প কারখানা ছিল। পরে রাজনৈতিক দাদাদের নিম্নমানের রাজনীতির সৌজন্যে অনেকগুলো বন্ধও হয়ে গ্যাছে। বাম আমল থেকে বন্ধ কারখানার জমিতে নতুন কারখানা গড়ার দাবী উঠলেও সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হতো আইনি জটিলতার জন্য জমি হস্তান্তর করা নাকি সম্ভব নয়। অথচ পরবর্তীকালে সেইসব জমি চলে যায় প্রোমোটারদের হাতে। গড়ে ওঠে উঁচু উঁচু আকাশ ছোঁয়া বিল্ডিং। এক্ষেত্রে জমি হস্তান্তরের সময় আইনি সমস্যা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

কথা হচ্ছিল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুশান্ত ব্যানার্জ্জীর সঙ্গে। তিনি বললেন – কারখানা গড়তে গেলে অবশ্যই জমির দরকার। কারখানা যেমন শূন্যে হবেনা তেমনি কৃষিকাজও শূন্যে হবেনা। সুতরাং সরকার ও শিল্পপতি উভয়কেই বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। শিল্পের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলে যতটা সম্ভব অনুর্বর জমিতে শিল্প গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে। এটা ঠিকই বেকারত্ব দূর করতে হলে অবশ্যই কারখানা গড়ে তুলতে হবে। খাদ্যের অভাবে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব যদি চরম সংকটে পড়ে যায় তাহলে কারখানার গুরুত্ব কোথায়? সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে সবাইকে আলোচনা করে একটা পথ বের করতেই হবে।

Related posts

পূর্ব বর্ধমানে একদিনে করোনায় আক্রান্ত ১৪১ জনঃ নিজে ভাবুন কি করবেন…

E Zero Point

মেমারি পৌরসভার বিবেক চেতনা উৎসব পালন

E Zero Point

স্বামীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা স্ত্রীর

E Zero Point

মতামত দিন