কাজের চাপ, আরো অন্যান্য চিন্তা সবকিছুর মধ্যে দিয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে গেলে মানসিক চাপ তো আসবেই। তবে সেটা ছাড়া আমাদের জীবন একেবারেই অসম্পূর্ণ। সে ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিজের পছন্দের কোনো কাজ ও অন্য কোন বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিয়ে সেটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক-
১. নিয়মিত শরীর চর্চা করুন
শরীরচর্চা শুধুমাত্র শরীরকে সুস্থ রাখার জন্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রেখে শরীর চর্চা করাটা খুবই জরুরী। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট নিজের শরীরের উপরে সময় ব্যয় করা জরুরী। শরীর চর্চা আমাদের শরীরের সমস্ত কোষ গুলিকে আরো বেশি সতেজ ও সচল রাখে। তার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটাও খেয়াল রাখে। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ধরে রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চা করাটা খুবই জরুরী। যদি প্রতিদিন সম্ভব না হয়, চার থেকে পাঁচ দিন শরীরচর্চা করতে একেবারেই ভুলবেন না।
২. ঘরে রাখুন সতেজ ফুল
ফুল খুবই সুন্দর যা দেখার ফলে মন খারাপ থাকলেও সেই মন ভালো হয়ে যায়। দিনশেষে যখন ঘরে আসবেন সেই ঘরে রাখুন তাজা ফুল। মন থাকবে সতেজ ও সুন্দর, ফুলের গন্ধে যেমন সারা ঘর ম ম করবে তেমনি সেই ফুলের কাছে বসে থাকলেও আপনার সারাদিনের ক্লান্তি ও মনমরা একেবারে নিমিষে গায়েব হয়ে যাবে।
৩. পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করুন
গায়ে দুর্গন্ধ কাটানোর জন্য পারফিউম ব্যবহার করা হয় এটা হয়তো অনেকেই ধারণা করেন। তবে মানসিক শান্তির জন্য বিভিন্ন ধরনের পারফিউম আপনি ব্যবহার করতেই পারেন। যার কারণে নিজের মধ্যে একটা ফ্রেশনেস ভাব আসে আর এর ফলে মনটাও সুন্দর থাকে।
৪. ঘরে সুগন্ধি মোমবাতি জ্বালান
মাঝে মধ্যে নিজের উপরে একটু সময় ব্যয় করার সাথে সাথে ঘরের সমস্ত ইলেকট্রিক লাইট বন্ধ করে সুগন্ধি মোমবাতি জ্বালাতে পারেন। নিজেকে ফ্রেশ রেখে এই সুগন্ধি মোমবাতির আলো ও গন্ধে আপনার মন, শরীর এবং ঘরের পরিবেশ সম্পূর্ণ বদলে যেতে বেশিক্ষণ সময় নেবে না।
৫. মনের ভালোলাগা কিছু করুন
সারাদিন কর্মব্যস্ত জীবনের পাশাপাশি নিজের কিছু পছন্দ অপছন্দ থাকেই। সেটার উপরে গুরুত্ব দিলে অনেকখানি মানসিক অবসাদ কাটিয়ে ওঠা যায়। নিজের পছন্দের কোন কাজ করতে পারেন। যেটা আপনার ভালো লাগে মন যা চায় সেটা করে নিজের মনটাকে সেই কাজের মধ্যে নিবেশ করতে পারলেই অনেকখানি মানুষের চাপ কাটিয়ে ওঠা যায়।
৬. সবচেয়ে প্রিয় কোন কাজ করুন
মানসিক চাপ কমানোর জন্য আপনার প্রিয় কোন কাজ করতে পারেন। সেটা হতে পারে আপনার পছন্দের কোন বই পড়া, মুভি দেখা, রান্না করা, আশেপাশে কোথাও ঘোরাঘুরি করা, ছোটখাটো কোন শপিং করা, যার মধ্যে আপনার মনে একটা আনন্দ ভাব কাজ করবে। এর ফলে মনে যখন আনন্দ জায়গা করে নেবে তখন মানসিক চাপ তো টাটা বাই বাই।
৭. নিজেকে সাজিয়ে রাখুন
রূপচর্চা, শরীর চর্চা এগুলোর কথা তো অবশ্যই রয়েছেই। তার পাশাপাশি নিজেকে সুন্দর করে সাজাতে ভুলবেন না। মাঝেমধ্যে এর ফলে মনটা অনেক বেশি ফুরফুরে থাকে। আর মানসিক চাপটাও দূরীভূত হয়। তাই সময় পেলে আয়নার সামনে নিজেকে সাজাতে ভুলবেন না।
৮. বাচ্চাদের সাথে সময় কাটান
বিভিন্ন কাজের মধ্যে দিয়ে আমাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ বিশেষভাবে কাজ করে। তবে এমন পরিস্থিতিতে সুযোগ পেলেই ছোট্ট শিশুদের সাথে খেলা করবেন। দেখবেন তাদের সাথে খেলা করলে আপনি এক নিমেষেই ছোটবেলায় ফিরে যাবেন। আর সাথে সাথে মানসিক চাপটাও অনেকখানি কমে যাবে। যদি নিজের সন্তান থাকে সেক্ষেত্রে নিজের সন্তানদের সাথে খেলা করুন। ছোট্ট শিশু হলে তাদেরকে জড়িয়ে ধরুন, দেখবেন অনেকখানি প্রশান্তি পাবেন মনে।
৯. নতুন কিছু শিখুন:
যদি কোন কিছু বিষয়ে আগ্রহ থাকে তাহলে সেটি শিখতে পারেন। এর ফলে সম্পূর্ণ মনোযোগটা সেদিকে চলে যাবে। আর যে কারণে আপনার মানসিক চাপটা আসছে সেটা কেটে যাবে বেশিরভাগ।এখন বর্তমানে ইউটিউব, ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে শেখানো হয়। সেখানে আপনি কিছুটা সময় নিজের জন্য ব্যয় করতে পারেন। এর ফলে নতুন কিছু শেখাও হলো আর মানসিক চাপ থেকে বেরিয়েও আসা হল।
১০. বাগান তৈরি করুন
গার্ডেনিং অথবা বাগান করা, নিজের হাতে যখন কোন ছোট্ট বীজ থেকে চারাগার জন্মায় অথবা ছোট্ট কোন চারা গাছ থেকে সেই গাছ বড় হয়ে ফুল দেয়, ফল দেয় তা আমাদের জন্য কতখানি আনন্দের সেটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তাই সুযোগ পেলেই, সময় পেলে বাগান করতে কোনভাবেই ভুলবেন না। ছোট্ট জায়গা হলেও সেখানে কিছু গাছ লাগান। তাদের যত্ন নিন, ফুল ও ফল আসলে নিজের মনের প্রশান্তি নিজেই বুঝতে পারবেন। সারাদিনের কাজের চাপ কাটিয়ে এই ছোট্ট বাগান টাই আপনার হতে পারে অবসর সময়ে মিষ্টি মধুর মুহূর্ত কাটানোর একটি বিশেষ জায়গা।
অহেতুক এই মানসিক চাপ নিয়ে চিন্তা করলে সেটা আরো জটিল হয়ে ওঠে। তাই এই সমস্ত সাধারণ বিষয় গুলির সাথে নিজের মানসিক চাপ কাটিয়ে সুস্থ, সুন্দর ও হাসি খুশি থাকার চেষ্টা তো করা যেতেই পারে, তাই না !