02/05/2024 : 7:53 PM
জীবন শৈলীধর্ম -আধ্যাত্মিকতা

মহালয়ার সঙ্গে মাতৃ আরাধনার কোনও যোগ নেই : প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী

ভোর বেলা মা এসে কড়া নেড়ে গেল উঠে পড় শুরু হয়ে যাবে…ও দিকে বাবার গলার আওয়াজ পেয়ে লক্ষ্মী ,বুধি গলা ছেড়ে হাম্বা হাম্বা করে আমাদের জানান দিলো এবার ওঠার সময় হয়েছে…আস্তে আস্তে আমরা ভাইরা উঠে পড়লাম।যদিও বড়দা কে কিরে উঠলি উঠলি করে ঠেলে তোলার দায়িত্ব টা আমার ওপরই ছিল…এর মধ্যে মা ঠাকুর ঘরে গিয়ে ধুনো দিত।গোটা বাড়ি ধুনোর গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠতো।সে দিন কাকভোরে রেডিও থেকে বর্ষিত হতো মঙ্গলধ্বনি শঙ্খ।তিনবার।আমাদের টালির চালের ঘর পেরিয়ে সেই শঙ্খের আওয়াজ সবুজ মাঠে ধ্বনিত হতো।শরতের ভোরে শিশিরভেজা বাতাস মেখে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র শুরু করতেন, ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জরী।’ অমনি দুলে উঠত কাশবন।
নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ আর ভোরের শিশিরমাখা শিউলি খবর পাঠিয়েছে— তিনি আসছেন। আমরা কর গুনতাম দুর্গাপুজো আসতে আর কত দিন বাকি। সহজ হিসেবটা হল ‘মহালয়ার’ সাত দিন পর পুজো। আর মেজদার কাছে ছিল ফাইনাল পরীক্ষার সাতদিন আগের করুন অবস্থা। ওই দিন থেকে ও রঙ তুলি নিয়ে বসে পড়তো ঠাকুর তৈরি করতে।আর কার্তিক গণেশ তৈরির ভার পড়তো নিতাই এর ওপর।বাড়িতে তখন বিশাল ব্যাপার।
অথচ, মহালয়ার সঙ্গে মাতৃ আরাধনার কোনও যোগ নেই। তবু আমরা এ ভাবেই মহালয়া ও দুর্গাপুজোকে একই উৎসবে রূপ দিয়েছি। পণ্ডিতেরা কেউ কেউ বলছেন ‘মহালয়া’ যা মহা-আলয় বা পিতৃপুরুষের বাসভূমি থেকে এসেছে। যেমন, দেবলোকে দেবতাদের বাস তেমনই এটি পিতৃলোক, সেখানে পিতৃপুরুষেরা বাস করেন। অমাবস্যায় তাঁদের জল দান করা আমাদের কর্তব্য। তাই মহালয়ার দিনটি আমাদের পিতৃ উপাসনার দিন রূপে চিহ্নিত। পিতৃ উপাসনার মধ্যে দিয়েই তৈরি হয় ধর্ম ভাবনা। আর সেই ভাবনার পূর্ণতা মাতৃ আরাধনায়। মা মহামায়া, জগজ্জননী, দুর্গা আসবেন আমাদের ঘরের কন্যা হয়ে কৈলাশ থেকে ঠিক সাত দিন পর। কিন্তু কী ভাবে এই দু’টি অনুষ্ঠান এক হলো হল, তা বলা খুব কঠিন। অমাবস্যায় গঙ্গা বা অন্য কোনও নদীতে নেমে করজোড়ে মন্ত্রচ্চারণের মধ্যে দিয়ে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে জল দান করাই রীতি। একুট খেয়াল করলে বোঝা যায় যে, কেবল মাত্র আমাদের পিতৃপুরুষই নয়, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরকে তৃপ্ত করে সপ্তর্ষি ও পিতামহ ভীষ্মকেও জলদানের রীতি প্রচলিত। দেবতা এবং ঋষিদের উদ্দেশে জল দান করার পর পিতৃতর্পণ বা তাঁদের উদ্দেশে জল দান করা হয়। কৃষ্ণপক্ষের অবসান ঘটে শুক্লপক্ষ শুরু হয়। একে আমরা বলি দেবীপক্ষ। অর্থাৎ, মাতৃ আরাধনার কাল।কিন্তু এই মহালয়া নিয়ে নানা গল্প আছে তারই গল্প আজ আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব।
মহাভারতের একটি গল্প এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। কর্ণ যত বড় বীর যোদ্ধা ততটাই দাতা হিসেবে খ্যাত ছিলেন। কর্ণের স্বর্ণ দান বিখ্যাত ছিল। কিন্তু এই স্বর্ণদানের জন্য তাঁর শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়াকর্ম ঠিকমতো হয়নি। ঘটনাটি হলো—কর্ণের মৃত্যুর পর তাঁর আত্মা স্বর্গে গেলে তাঁকে আবাহন করে খাদ্যস্বরূপ সোনা ও নানারকম রত্ন খেতে দেওয়া হয়। আত্মারূপী কর্ণ অবাক হলেন এমন খাদ্য দেখে। তিনি এই আয়োজন দেখে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন সেইসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইন্দ্রদেব (অনেকে বলেন ইন্দ্র নন, যম)। তিনি বললেন, সারা জীবন ধরে কর্ণ শুধু সোনাদানাই দান করেছেন। পিতৃপুরুষের উদ্দেশে কখনও জল পর্যন্ত দান করেননি। তাই স্বর্গে তাঁকে খাদ্য হিসেবে স্বর্ণই খেতে দেওয়া হয়েছে।
কর্ণ জানালেন, সোনাদানা কখনও খাদ্য হতে পারে না। তিনি আরও বললেন, নিজের পিতৃপুরুষ সম্পর্কে সঠিক কোনও ধারণা ছিল না। সেই কারণে তর্পণ বা ক্রিয়াকর্মের কোনও প্রশ্নই ছিল না। তাই এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রতি যেন সুবিচার করা হয়।
তখন দেবগণ নির্দেশ দিলেন—কর্ণকে আবার পৃথিবীতে যেতে হবে ষোলো দিনের জন্য। ওই ষোলো দিন তাঁকে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন-জল নিবেদন করতে হবে। কর্ণ তাই করলেন এবং এই ষোলো দিনের পক্ষটিই পিতৃপক্ষ হিসেবে খ্যাতিলাভ করে।
অন্যদিকে দেবীপক্ষ হল শুক্লপক্ষ, তাই ওই সময় দেবকার্য করতে হয়। এখানে একটি প্রশ্ন উঠতে পারে,কেন এই পক্ষের শেষ দিনটিকে ‘মহালয়া’ নামে চিহ্নিত করলেন?অনেকে বলেন, ‘সূর্যের আলো আশ্বিন মাসে বিষুবরেখার ওপরে লম্বভাবে অবস্থান করে এবং জলবিষুব সংক্রান্তির পর সূর্যের দক্ষিণায়ন গতি শুরু হয়। শাস্ত্রের হাত ধরে বহুকাল ধরে চলে আসা একটি কিংবদন্তি আছে। সেটি হল, সূর্যের উত্তরায়ণের সময় যমলোকের দ্বার বন্ধ থাকে। আর এই একই সময় বিষ্ণুলোকের দ্বার খোলা থাকে। সেইজন্যে উত্তরায়ণের সময় সাধু-সন্তরা মৃত্যুর সময় নির্বাচন করেন।
এর প্রমাণ মেলে মহাভারতে। পিতামহ ভীষ্ম তখন কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধে শরশয্যায় শায়িত। তাঁর ছিল ইচ্ছামৃত্যুর বর। তিনি যখন প্রাণত্যাগ করার কথা চিন্তা করলেন তখন সময়টা ছিল দক্ষিণায়ন। পিতামহ তিথির গণনা শুনে দেখলেন এই সময়টা দেহত্যাগের উপযুক্ত নয়। তখন তিনি দক্ষিণায়নের সময় প্রাণত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ না করে উত্তরায়ণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলেন। যথারীতি উত্তরায়ণ এলে তিনি প্রাণত্যাগ করেন। বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছে ভীষ্মের মুখে কাশীরাম দাসের সেই বিখ্যাত বর্ণনা—
‘রবির উত্তরায়ণ হইবে যখন।
জানিহ তখন আমি ত্যজিব জীবন’।
বাংলা সাহিত্যে আগমনী পর্যায়ে (একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীতে ও পরবর্তী সময়ে স্নাতক স্তরে ) মা মেনকার আর্তি, যা আমাদেরও মনের কথা, প্রাণের সুর দেখতে পাই—
কবে যাবে বলো গিরিরাজ গৌরীরে আনিতে,
ব্যাকুল হয়েছে প্রাণ উমারে দেখিতে।
গৌরী দিয়ে দিগম্বরে আনন্দে রয়েছ ঘরে,
কী আছে তব অন্তরে না পারি বুঝিতে…।
আমরা বলি দুর্গাপুজো। অর্থাৎ, দুর্গার রূপকে আমরা কি ভাবে পুজো করে থাকি। পুরাণমতে, যিনি দুর্গম নামে অসুরকে বধ করেছেন, তিনিই দুর্গা। অথচ, আমরা বলছি মহিষাসুর বধ হয়েছেন। কারণ, শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠ দুর্গাপুজোর অন্যতম অঙ্গ। সেখানে দেবী দুর্গার রূপ বর্ণনা নেই। আছে মহিষাসুরমর্দিনীর স্তবগাথা। দেবী দুর্গার কাহিনি দেবী ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে রুরু অসুরের পুত্র দুর্গম ছিলেন মহা পরাক্রান্ত এবং মহাতপস্বী। দুর্গম বেদ করায়ত্ত করার জন্য হিমাচলে তপস্যা শুরু করেন। উদ্দেশ্য একটাই, দেবকুল ধ্বংস করা। দুর্গমের মহা তপস্যা হাজার বছর অতিক্রান্ত হলে মহাতেজে জগৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠল। অবশেষে ব্রহ্মা তাঁকে দেখা দিলেন এবং বর দানে সম্মত হলেন। দুর্গম চতুর্বেদ প্রার্থনা করলেন এবং সেই সঙ্গে দেবকুলকে পরাস্ত করার বরও চেয়ে নিলেন। ব্রহ্মা তথাস্তু বলে প্রস্থান করলেন। দুর্গম অসুর সুযোগ বুঝে অমরাবতী আক্রমণ করলেন এবং জয় করে নিলেন। দেবতারা স্বর্গচ্যুত হয়ে পাহাড়ে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। মর্তে অনাবৃষ্টি দেখা দিল। বহু মানুষ এবং গৃহপালিত পশুদের মৃত্যু হল। শুরু হল মানব এবং দেবতাদের করুণ প্রার্থনা— রক্ষা করো, রক্ষা করো।
দেব দ্বিজকে রক্ষা করতে এক অদ্ভুত রূপে আবির্ভুতা হন দেবী দুর্গা। তাঁর মুখমণ্ডল শতনেত্রযুক্ত, চতুর্ভুজা। দেবীর শতনেত্রের অশ্রুতে বৃষ্টিপাত হল। ধরণি হল শস্যশ্যামলা। সকলেই প্রাণ ফিরে পেল। এই দেবী শতনেত্রযুক্ত বলে তাঁর নাম ‘শতাক্ষী’। দূত মারফত এই খবরপেয়ে দুর্গম আর স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি দেবী শতাক্ষীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। দেবী সে জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তাই প্রবল যুদ্ধ শুরু হল দুর্গমের সঙ্গে দেবী শতাক্ষীর। দেবী এই যুদ্ধে দুর্গমাসুরকে বধ করে চতুর্বেদ উদ্ধার করলেন, যা ছলে-বলে-কৌশলে দুর্গম অসুর ব্রহ্মার কাছ থেকে করায়ত্ত করেছিল। দেবী দুর্গমাসুর বধ করে হলেন দুর্গা।
এবার আসা যাক আমাদের মহালয়ার কথায়…
পুণ্য মহালয়ার ভোরে যে সুর, যে সঙ্গীত, যে ভাষ্য না হলে আমাদের পুজোটাই শুরু হয় না তার নাম ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। আকাশবাণী কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানটি পুজোর আবহাওয়া বয়ে আনে। এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত প্রবাদপ্রতিম তিনজন মানুষ হলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক, বাণীকুমার, এবং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। রেডিয়োর কোনও অনুষ্ঠান যে কতটা জনপ্রিয় হতে পারে, এই অনুষ্ঠানটিই তার প্রমাণ। কিন্তু এই অনুষ্ঠানটির মধ্যেও লুকিয়ে আছে অনেক ইতিহাস।
১৯৩০ সালের ১ এপ্রিল ভারতীয় বেতারের সরকারিকরণের পর নাম হয় “ইন্ডিয়ান স্টেট ব্রডকাস্টিং সার্ভিস”। এই সময় সঙ্গীত নির্ভর অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৯৩২ সালের মার্চ মাসে বাণীকুমার মার্কন্ডেয় চণ্ডীর বিষয়বস্তু অবলম্বনে “বসন্তেশ্বরী” নামের একটি চম্পু রচনা করেন। পণ্ডিত হরিশ্চন্দ্র বালী, পঙ্কজকুমার মল্লিক এই অনুষ্ঠানের সুর সংযোজন করেন। রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গীত পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানটি নির্মিত হয়। নাট্যকথাসূত্র ও গীতাংশ গ্রহণ করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং বাণীকুমার চণ্ডীর কয়েকটি শ্লোক আবৃত্তি করেন। এটি সে বছর অষ্টমীর দিন বাজানো হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানটির মতো করে ১৯৩২ সালে অন্য একটি অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। মহিষাসুর বধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি গীতিআলেখ্য। তখন অবশ্য এই অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয়নি। ‘বিশেষ প্রত্যুষ অনুষ্ঠান’ হিসেবে এর প্রচার হয়। ১৯৩৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মহালয়া তিথিতে সকাল ৬টা-৭টা এই অনুষ্ঠান প্রথম প্রচারিত হয়। মহিষাসুরমর্দিনীর সঙ্গীত পরিচালক পঙ্কজকুমার মল্লিক হলেও ‘অখিল বিমানে’, ‘আলোকের গানে’- এই গানগুলির সুর দেন হরিশ্চন্দ্র বালী। ‘শান্তি দিলে ভরি’র সুর দেন সাগির খাঁ।
অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয় যেমন হয়েছিল তেমনি এটিকে ঘিরে একটি বিতর্ক তুলেছিলেন তৎকালীন গোঁড়া ব্রাহ্মণসমাজ। তাঁরা বলেছিলেন, পুণ্য মহালয়ার ভোরে অব্রাহ্মণের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শোনানোর কোনও যৌক্তিকতা নেই। এই ঘটনার পর অনুষ্ঠানটিকে সরিয়ে ষষ্ঠীর ভোরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শ্রোতাদের বিপুল চাপে ১৯৩৬ সাল থেকে পুনরায় অনুষ্ঠানটিকে মহালয়া তিথিতেই বাজানো শুরু হয়।
এ ভাবে যখন অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে সেইসময় ১৯৭৬ সালে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠানটি বাতিল করে একটি অন্য অনুষ্ঠান বাজানো হবে মহালয়া তিথিতে। এই অনুষ্ঠানটির নাম ‘দেবীদুর্গতিহারিণীম্’। এটি লিখেছিলেন ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তী। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। গান লিখেছিলেন শ্যামল গুপ্ত। নির্বাচিত কিছু ভাষ্যপাঠ করেছিলেন উত্তমকুমার। এ অনুষ্ঠান দর্শকেরা একেবারেই গ্রহণ করেননি। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে বাদ দেওয়ার জন্য ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল সাধারণ মানুষ। তৎকালীন আকাশবাণীর জনপ্রিয় উপস্থাপক মিহির বন্দ্যোপাধ্যায় এক জায়গায় লিখেছেন, ‘দেবীদুর্গতিহারিণীম্’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারের মধ্যপথেই টেলিফোনে শ্রোতাদের অবর্ণনীয় গালিগালাজ আসতে শুরু করে অকথ্য ভাষায়। অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই আকাশবাণী ভবনের সামনে সমবেত হয় বিশাল জনতা। ফটকে নিয়োজিত প্রহরীরা সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যান। ফটকের গেট ভেঙে ঢুকে পড়তে চায় উত্তাল মানুষের দল’। শোনা যায়, পরবর্তী কালে উত্তমকুমারও তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন।এই অনুষ্ঠান শ্রোতাদের প্রত্যাখ্যানের পর উত্তমকুমার স্বয়ং বলেছিলেন, ‘ঠাকুরঘরকে ড্রয়িংরুম’ বানালে যা হয়, তাই হয়েছে।
এই ভাবে মহিষাসুরমর্দিনীকে সরিয়ে দেওয়ায় মর্মাহত হয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং পঙ্কজকুমার মল্লিক। একটা অনুষ্ঠানের প্রতি মানুষের কী রকম ভালবাসা থাকলে এ রকম প্রতিক্রিয়া সম্ভব, তা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। সে বছর ষষ্ঠীর দিন এ অনুষ্ঠান বাজানো হয় এবং ১৯৭৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মহালয়ার ভোরেই বাজানো হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি।
শুধু মাত্র এই দিনটার জন্য আমরা বসে থাকি … শিউলির গন্ধ , ঘাসের আগায় শিশিরের কণার সঙ্গে কান ফাটানো বুক কাঁপানো বাজির শব্দ না হলে মহালয়ার ভোর হয় না ।…আর তার পর সেই বাঙালির গায়ে কাটা দেয়া …গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসা স্বর…যা চিরকাল বাঙালির রক্ত সঞ্চালন কে ত্বরান্বিত করে/করবে…
রক্ষাংসি যত্রোগবিষাশ্চ নাগা
যত্রারয়ো দস্যুবলানি যত্র ।
দাবানলো যত্র তথাব্‌ধিমধ্যে
তত্র স্থিতা ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্‌ ।।
বিশ্বেশ্বরি ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্‌
বিস্বাত্মিকা ধারয়সীতি বিশ্বম্‌ ।
বিশ্বেশবন্দ্যা ভবতী ভবন্তি
বিশ্বাশ্রয়া যে ত্বয়ি ভক্তিনম্রাঃ ।।
দেবি প্রসীদ পরিপালয় নোঽরিভীতেঃ
নিত্যং যথাসুরবধাদধুনৈব সদ্যঃ ।
পাপানি সর্বজগতাঞ্চ শমং নায়াশু
উৎপাতপাকজনিতাংশ্চ মহোপসর্গান্‌ ।।

ঋণ স্বীকার:
শ্রীশ্রীচণ্ডী,
শ্রীশ্রীমহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্রম্
উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন পত্র পত্রিকা
লেখকঃ প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী

Related posts

জেনে নিন বুধবারের রাশিফল

E Zero Point

জিরো পয়েন্ট লিটল ম্যাগাজিন

E Zero Point

কেমন যাবে আজ? জেনে নিন দৈনিক রাশিফলে

E Zero Point

মতামত দিন