02/05/2024 : 6:48 PM
জীবন শৈলীধর্ম -আধ্যাত্মিকতা

শ্রীকৃষ্ণের শ্রীরাসপূর্ণিমা: স্থায়ী ভালোবাসার যে আস্বাদন তারই নাম রাস

জিরো পয়েন্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ২৫ নভেম্বর ২০২৩:


“রাস” কথাটি এসেছে “রস” থেকে। রসেরই আস্বাদনই হল রাস। স্থায়ী ভালোবাসার যে আস্বাদন তারই নাম রাস। এই ভালোবাসা জগতে নেই। আর নেই বলেই শ্রীভগবান তার একটি আদর্শ দেখাবার জন্যে এসেছিলেন। মা যে ছেলেকে ভালবাসে তা হ’ল নির্দোষ। কিন্তু যখন মা বলবে “এটা আমার ছেলে”, তখনই সেই ভালোবাসায় দোষ প্রবেশ করে। এই “আমার” ভাব যতক্ষণ থাকে মনে সংকীর্ণতা থেকে যায়।
শ্রীকৃষ্ণ মা যশোদার নিজের ছেলে নন, দাদা বলরামও নন। কিন্তু তিনি দুই ভাইকে সমানভাবে ভালবেসেছিলেন। এমনকি শ্রীকৃষ্ণের বয়স্য রাখাল বালকদেরও তিনি সমানভাবে ভালবাসতেন। এইভাবে ভালোবাসা একমাত্র সম্ভব হয়েছিল কারণ এতে “আমার আমার” ভাব বিন্দুমাত্র ছিল না। শ্রীবৃন্দাবনে বাৎসল্যে, সখ্যে ও মধুরে এই তিনটি রসেই এই ভালোবাসার প্রকট ঘটেছিল। যে রসে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বসর্জন দেওয়া যায়, আত্মসুখবাঞ্ছা বিন্দুমাত্র থাকে না, সেটি হল উন্নত ও উজ্জ্বল। তা মধুর রসে আছে। জাগতিক প্রেম উন্নতও নয় উজ্জ্বলও নয়।
সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণে শ্রীকৃষ্ণকে যে ভালোবাসা সেটি “উন্নত উজ্জ্বল রস।” এই রসের সংবাদ ব্রজে আছে। ব্রজে এই লীলা হয়েছিল। আমরা ভাল করে জানতাম না, শ্রীমহাপ্রভু এসে ভালভাবে জানিয়ে দিয়ে গেছেন। নিজ জীবনে এই রস আস্বাদন করে। “উন্নত উজ্জ্বল রস” ব্রজলীলাতে অর্থাৎ শ্রীরাধাকৃষ্ণের লীলাতে আছে। এই যে একটি আদর্শ প্রেম, তার আস্বাদন সেটিই হল “রাস।”
রাধার যে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেম বা গোপীদের যে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেম তার ছিটে কণা আমাদের মধ্যেও আছে। সেই প্রেমবীজকে শ্রীকৃষ্ণপ্রীতির দ্বারা প্রস্ফুটিত করতে হবে। একটা ক্ষুদ্র বীজ ঠিক মতন আলো, বাতাস, জল পেলে যেমন একটা মহীরূহে পরিণত হয় ঠিক তেমন ভগবান প্রত্যেক মানুষের মধ্যে যে প্রেম দিয়েছেন তা ঠিক পথে গেলে জীবের শ্রীকৃষ্ণপ্রাপ্তি হয়। এ প্রেম ভগবান সবাইকে দিয়েছে, পশুপাখির মধ্যেও। প্রাণী মাত্রেই এক বিন্দু ভালোবাসা আছে, একমাত্র মানুষেই এত পরিপূর্ণতা ব্যক্ত হয়েছে।
কিন্তু মানুষের যেখানে ভালোবাসা দেওয়া দরকার সেখানে সে দেয় না। যেমন একজনের অনেক অর্থ আছে, কিন্তু কোথায় দিলে যে, সমাজের কল্যাণ হবে, বিশ্বের কল্যাণ হবে তা সে নিজে জানে না। দেখুন, সামান্য পুজোয় লক্ষ লক্ষ টাকার বাজি মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। যে টাকা বাজিতে খরচ হয় সে টাকা দরিদ্র লোকদের দেবে না। ঠিক তেমন হৃদয়ের মধ্যে ভালোবাসা কোন দিকে দিলে যে তার সদ্ব্যবহার হবে সেটা আমরা বুঝতে পারি না। তাই তারই একটা আদর্শ আমরা দেখলাম শ্রীবৃন্দাবনে, যেখানে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি সমর্পিত ভালোবাসার পরিপূর্ণ রসের আস্বাদন হয়েছিল। এই ভালোবাসার কথা যদি আমরা ভাবনা করি, চিন্তা করি, শ্রবণ করি তাহলে আমাদের হৃদয়ে যে ক্ষুদ্র বীজ আছে তা আলোবাতাস পাবে। সেই বীজ কৃষ্ণকথা, কৃষ্ণলীলা, তাঁর সৌন্দর্য্য-মাধুর্য্য, তাঁর ভক্ত-বাৎসল স্মরণ-চিন্তন-আস্বাদন দ্বারা পরিস্ফুট হয়। আর তা না হলে সেই ভালোবাসা সংকীর্ণ হতে হতে হিংসায়ই পরিণত হয়। এর থেকে জন্ম নেয় বিদ্বেষ। এতে মানুষের ক্ষতি হয়, সংসারের ক্ষতি হয়। তাই মানুষ হৃদয়ের ভালোবাসা শ্রীকৃষ্ণকে অর্পণ করলেই তা সার্থক। আর শ্রীকৃষ্ণকে সেই ভালোবাসা উজাড় করে দেওয়ার উপায় হ’ল তাঁর রূপ, গুণ, তাঁর মাধুর্য্য, তাঁর সৌন্দর্য্য পুনঃ পুনঃ স্মরণ করা। অর্থাৎ ভক্তিপথের, সাধনপথের যতগুলি প্রণালী আছে এই সবগুলি যদি শ্রীকৃষ্ণার্থে হয় তাহলেই সেই ভালোবাসা পরিস্ফুট হবে। যা দেখা গিয়েছিল শ্রীবৃন্দাবনে।
শ্রীবৃন্দাবন হল আস্বাদন ভূমি, আর সব আস্বাদনের আস্বাদন। শ্রীরাধাভাবে আস্বাদনের সাধ ছিল শ্যামসুন্দরের। শ্রীভগবানের আনন্দ শক্তি শ্রীভগবান নিজে আস্বাদন করেন সেটাইহল “রাস”।
শ্রীকৃষ্ণকে আস্বাদন করবার জন্য শ্রীরাধা বহু হলেন, আবার শ্রীকৃষ্ণ বহু হলেন শ্রীরাধাকে আস্বাদন করবার জন্য। এই হ’ল “রাসলীলা”। “অঙ্গনামঙ্গনাম অন্তরা মাধবঃ।”
আনন্দশক্তির সঙ্গে আনন্দঘন পুরুষের যে চরমতম আস্বাদন, যার উপর আমরা আর কল্পনার মধ্যেও আনতে পারব না, যা বৃন্দাবনে ব্যক্ত হয়েছিল সে পূর্ণিমার রাত্রে, সেটাই হ’ল রাস। এটি নিত্য, লীলা-স্মরণ, লীলা-আস্বাদন ও লীলা-ভজন থেকে শ্রেষ্ঠ আর কিছুই নেই। হরে কৃষ্ণ।
(শ্রীমহানামব্রত ব্রহ্মচারীর “রাসলীলা” থেকে-সংগৃহীত)

Related posts

মহালয়া কিএবং কেন এই মহালয়া?

E Zero Point

জেনে নিন বুধবারের রাশিফল

E Zero Point

মেমারিতে মনসা পুজো

E Zero Point

মতামত দিন