জিরো পয়েন্ট নিউজ, মঙ্গলকোট, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪
কালীপুজোর আগে বেহুলা লখিন্দরের বিয়ে উপলক্ষ্যে শনিবার উৎসবে মেতে উঠেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের জালপাড়া-গণপুর গ্রাম। ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যের এই দুই চরিত্রের প্রতীকী বিয়ে নিয়ে উৎসবে মাতোয়ারা স্থানীয় বাসিন্দারা।
বেহুলা-লখিন্দরের বিয়ের এই প্রথাকে গ্রামবাংলার এক বিশেষ লোক উৎসব বা লোক সংস্কৃতির অঙ্গ বলা চলে। প্রতি বছর কার্তিক মাসের দ্বিতীয় শনিবার অথবা মঙ্গলবার আয়োজন করা হয় প্রতীকী বিয়ের। বিয়ের সাতদিন আগে থেকে স্থানীয় লোকশিল্পীরা মনসা মন্দিরে অষ্টপ্রহর খোল-করতাল সহযোগে মনসার পালাগান পরিবেশন করেন।
পাঁচালিধর্মী মনসামঙ্গলের মোট ন’টি অধ্যায় এখানে উত্থাপিত হয়। মনসার আর্বিভাব থেকে শুরু করে বেহুলা লখিন্দরের বিবাহ ও তার করুন পরিণতি, চাঁদ সদাগরের সর্বনাশ ও সবশেষে মনসার পুজো এবং বেহুলা-লখিন্দরের বিবাহের অষ্টমঙ্গলা পর্যন্ত গাওয়া হয় এক এক করে।
অষ্টম দিনে গ্রামের এক মহিলা দেবী মনসার ঘট নিয়ে মনসা মন্দির থেকে গ্রামেরই আর এক মনসার থানে যান। সেখানে রীতি অনুযায়ী পুরোনো বটগাছের সামনে বেহুলা-লখিন্দরের প্রতীকী বিয়ে হয়। বটগাছের চারদিকে সাতপাক ঘুরে একটি সাদা সুতো বেঁধে দেওয়া হয়। বটগাছকে সাক্ষী রেখে চলে বেহুলা-লখিন্দরের বিবাহ পর্ব। তারপর আবার মূল মন্দিরে এসে চলে মনসা পুজো।
গনপুর এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী পার্থ সারথি মন্ডল জানান, ৪০০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে গ্রামে এই অনুষ্ঠান চলে আসছে। তবে কেন জালপাড়া, গণপুরে এই অনুষ্ঠান হয় তার সঠিক কারণ জানা যায় না। মঙ্গলকাব্য অনুযায়ী চম্পাইনগরের ব্যবসায়ী চাঁদ সওদাগরের ছেলে লখিন্দরের সঙ্গে বিয়ের ঠিক হয় উজানিনগরের এক ব্যবসায়ীর কন্যা বেহুলার। কিন্তু সর্প দেবী মনসার কোপে পরে বেহুলাকে যে দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত যে ভাবে নিজের স্বামীর প্রাণ ফেরান বেহুলা তা কারও অজানা নয়।
বেহুলার বাবার বাড়ি উজানিনগর হল অধুনা মঙ্গলকোটের কোগ্রাম। কোগ্রাম থেকে জালপাড়া কিছুটা দূরে। বিয়ে উপলক্ষ্যে প্রাচীন লোকসংস্কৃতিকে যে ভাবে ধরে রাখা হয়েছে সেটাই এই অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য।
জালপাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক সঞ্জয় মন্ডল বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে আমাদের গ্রামে এই প্রথা চলে আসছে। বেহুলা আমাদের ঘরের মেয়ে, তার বিয়ের উৎসবই আমরা বছর বছর পালন করে আসছি। আট দিন ধরে গোটা গ্রাম মেতে থাকে এই উৎসবে। এটা আমাদের গ্রামের ঐতিহ্যও।’
জালপাড়ার বাসিন্দা সুজয় মন্ডল জিরো পয়েন্টের প্রতিনিধিকে বললেন, মনসা পুজো উপলক্ষে গ্রামের হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। ৫ দিন ধরে মেলা ও যাত্রাপালা, সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠাননের আয়জন করা হয় গ্রামবাসীদের উদ্যোগে।
স্থানীয় বাসিন্দা পরাগজ্যোতি ঘোষ বলেন মনসা পুজো উপলক্ষে শতাধিক ঢাকি মায়ের প্রতি শব্দঅঞ্জলি অর্পণ করেন, মহিলা পুরুষ দন্ডি কাটেন মানত করে, রয়েছে বলিপ্রথা সহ অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান।