পায়ে পায়ে মন্দিরের শহরের খোঁজে
অজয় কুমার দে
অম্বিকা কালনা (Ambika Kalna)
মধ্যযুগীয় স্থাপত্য ভাস্কর্য শিল্পের বহুবিধ নিদর্শন নিয়ে ভাগীরথীর তীরে (River Bhagirathi) আজও মাথা উঁচিয়ে বর্ধমানের ছোট্ট শহর অম্বিকা কালনা। কালনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি পৌর অঞ্চল তথা জেলার কালনা মহকুমার সদর। একসময় বর্ধমান রাজাদের গ্ৰীষ্মাবাসও ছিলো কালনা নগরী। ঐশ্বর্যপূর্ণ পোড়ামাটির মন্দির দ্বারা সমৃদ্ধ অম্বিকা কালনাকে আসলে “মন্দিরের শহর” বলা হয়। হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল হয়ে অম্বিকা-কালনা স্টেশন ৮২ কিলোমিটার। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কাটোয়া লোকাল ধরেও যাওয়া যায়। পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে এই স্থানটি উল্লিখিত হয়েছে আম্বুয়া বা অম্বুয়া মুলুক নামে। এ পাড়ে কালনা, ওপাড়ে শান্তিপুর। মাঝখানে ভাগীরথী । অনেকের অনুমান, অম্বুঋষির আশ্রমস্থল হিসাবে স্থানটি প্রসিদ্ধিলাভ করেছিল অম্বিকা নামে।একই সঙ্গে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ এবং জৈন সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। অবশ্য অধিকাংশ মসজিদই তৈরি হয়েছিল হিন্দু দেবালয়ের ভগ্নাবশেষ দিয়ে।আবার অনেকের বিশ্বাস, অম্বিকা দেবীর মন্দির আদিতে জৈন মন্দির ও এখানে জৈন দেবতা ছিলেন।কালনার ইসলামী যুগের নিদর্শনগুলি তুর্কি আফগান রাজত্বকালের। এই সময় ইসলাম সংস্কৃতির প্রসিদ্ধ কেন্দ্র হয়ে ওঠে কালনা। ৫০০ বছর আগে তৈরি ফিরোজ শাহের মসজিদ(Firoz Shah)। শিলালেখ অনুযায়ী, ১৫৩৩ সালে ফিরোজ শাহের আমলে তৈরি। মসজিদের মাথার গম্বুজ ও মিনারগুলি এখন ভেঙে পড়েছে। নসরৎ শাহের মসজিদ এবং মজলিশ সাহেবের মসজিদের খিলান স্থাপত্যশিল্পের উৎকর্ষ প্রমাণ করে মুসলিম সংস্কৃতির কথা। একই সময় কালনা বৈষ্ণব সংস্কৃতিরও প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে শ্রীচৈতন্য ও নিত্যানন্দের প্রভাবে। বর্ধমান রাজবংশের আরও বহু কীর্তি আছে কালনায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লালজির মন্দির ও তার কারুকার্য, কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির ও জলেশ্বর মন্দির। লালজির মন্দিরে রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ। লালজি মন্দিরের টেরাকোটার কাজ প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন। পঁচিশ চূড়া বিশিষ্ট শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরের টেরাকোটার কাজও অপূর্ব।
উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য-১০৮ শিবমন্দির, প্রতাপেশ্বর মন্দির, রাসমঞ্চ, লালজি মন্দির, কৃষ্ণচন্দ্রজি মন্দির, পঞ্চরত্নশিব মন্দির, শ্রীশ্রী অম্বিকা সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির৷ হাতে একটু বেশি সময় থাকলে ঘুরে নেওয়া যায় গোপালজি মন্দির, বিজয়বৈদ্যনাথ মন্দির, আমলিতলা, মহাপ্রভুবাড়ি, শ্যামসুন্দরবাড়ি, জগন্নাথমন্দির, অনন্তবাসুদেবমন্দির প্রভৃতি ৷ ফোটো তোলার জন্য আদর্শ প্রতাপেশ্বর মন্দিরের টেরাকোটার অলঙ্করণ এবং ১০৮ শিবমন্দিরের অনবদ্য গঠনশৈলী৷ মন্দিরগুলি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে ৷
সিদ্ধেশ্বরী মন্দির– ১১৪৬ বঙ্গাব্দের ২৬ জ্যৈষ্ঠ মন্দিরটি নির্মাণ করেন রাজা চিত্রসেন রায়। মন্দির নির্মাণশিল্পী ছিলেন শ্রীরামচন্দ্র মিস্ত্রি। বর্তমান মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা চিত্রসেন হলেও তার বহুপূর্ব থেকেই দেবী সিদ্ধেশ্বরী স্বয়ং অধিষ্ঠিতা অম্বিকা-কালনায়। চিত্রসেনের একশো বছর আগে ‘ধর্মমঙ্গল’ লিখেছিলেন রূপরাম চক্রবর্তী। তাঁর গ্রন্থে দেবী সিদ্ধেশ্বরীর প্রসিদ্ধির কথা উল্লিখিত হয়েছে এইভাবে “তোমার মহিমা মাতা কি বলিতে পারি।অম্বুয়ার ঘাটে বন্দো কালিকা ঈশ্বরী।।” আরও পাঁচটি শিবমন্দির আছে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরপ্রাঙ্গণে। এগুলিরও কৌলিন্যে এতটুকু মরচে ধরেনি। এরমধ্যে একটি ১৭৬৪খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন রাজা ত্রিলোকচাঁদের মাতা লক্ষীকুমারী দেবী। বর্ধমান রাজার অমাত্য ছিলেন রামচন্দ্র নাগ। ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনিও একটি শিবমন্দির নির্মাণ করেন মন্দির অঙ্গনে। এছাড়াও আর একটি আটচালা মন্দির আছে এখানে। সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরঅঙ্গন ছেড়ে একটু পূর্বমুখে এগোলেই অনন্তবাসুদেব মন্দির। টেরাকোটার অপূর্ব অলঙ্করণে সুসজ্জিত আটচালা মন্দির। গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত পাথরে নির্মিত বদ্রিনারায়ণের সুদর্শন বিগ্রহ। ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে (১৬৭৬ শকাব্দ) মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন রাজা ত্রিলোকচাঁদ। উৎসর্গ করেন পিতামহী ব্রজকিশোরী দেবীর নামে। সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের সামনে দিয়েই চলে গিয়েছে রাস্তা।মন্দিরের বিপরীতে কুবেরেশ্বর মহাদেব মন্দিরে। গর্ভগৃহে স্থাপিত বিগ্রহ কুবেরেশ্বর শিবলিঙ্গ। সাদামাটা অনাড়ম্বর মন্দির। নিত্যপুজো আর সারাবছরের বিভিন্ন তিথি উৎসবে যাত্রী সমাগমে ঘাটতি নেই সদাজাগ্রত গঙ্গাসংলগ্ন অম্বিকা-কালনার সিদ্ধেশ্বরী মায়ের মন্দিরে।
নবকৈলাশ বা ১০৮ শিবমন্দির– শহরের মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে ১০৮ শিবমন্দির। শিবমন্দিরগুলি দুটি বৃত্তে সাজানো। প্রথম বৃত্তে রয়েছে ৭৪টি মন্দির। ভিতরের বৃত্তে রয়েছে ৩৪টি মন্দির। ১৮০৯ সালে মহারাজ তেজচেন্দ্রর সময়ে নির্মিত মন্দিরগুলির ভিতরে রয়েছে শ্বেতপাথর ও কালো পাথরের শিবলিঙ্গ। আটচালা শৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরগুলিকে উচু জায়গা থেকে দেখলে মনে হবে পাপড়ি মেলা পদ্ম। প্রথমোক্ত বৃত্তের মন্দিরগুলিতে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গগুলি শ্বেত অথবা কষ্টিপাথরে , কিন্তু শেষোক্ত বৃত্তের মন্দিরগুলিতে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গগুলি কেবলমাত্র শ্বেত পাথরেই নির্মিত। মন্দিরের সুপরিকল্পিত নকশার কারণে সবকটি শিবলিঙ্গই মন্দির-চত্বরের কেন্দ্র থেকে দেখা যায়। সম্ভবত জপমালার প্রতীক হিসেবে মন্দিরগুলি উপস্থাপিত হয়েছে ।
রাজবাড়ি কমেপ্লক্স– ১০৮ শিবমিন্দেরর উল্টো দিকে রয়েছে রাজবাড়ি কমেপ্লক্স। এই কমেপ্লেক্সর মধ্যে রয়েছে ২২টি পুরনো মন্দির। এর মধ্যে কয়েকটি মন্দিরের টেরাকোটার কারুকাজ চোখ টানে।বিগত প্রায় চারশো বছরের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে সদর্পে মাথা উঁচিয়ে। অতীতে একসময় এই মন্দিরগুলিতে আসতেন বর্ধমানের মহারানি বিষ্ণু কুমারী, রাজকুমারী সত্যবতী, মহারাজা কীর্তিচন্দ্র, চিত্রসেন বা তিলকচাঁদ প্রমুখ। এখানে নিরেট পাথরের অন্তরে লেখা অতীতের রসসন্ধানে রয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তাঁদের হাত পড়েছে মন্দির সংস্কারে।
প্রতাপেশ্বর মন্দির– ওড়িশার রেখদেউলের আদলে তৈরি হয়েছে প্রতাপেশ্বর মন্দির। বর্ধমান মহারাজ প্রতাপচাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল। মন্দিরের গায়ে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা, রাবণের দুর্গাপুজো-সহ নানান পৌরাণিক দৃশ্য খোদিত।
কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির– ১৭৫১-৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত ২৫টি চূড়বিশিষ্ট কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির কালনার অপর জনপ্রিয় দ্রষ্টব্য। এই জমকালো ইঁটের তৈরি পঞ্চ-বিংশতি রত্ন মন্দিরটির সামনে সংলগ্ন রয়েছে অপূর্ব অলঙ্করণে সমৃদ্ধ ত্রিখিলান প্রবেশ পথ বিশিষ্ট ঢালা ছাদের প্রলম্বিত বারান্দা । মন্দিরের গা অলঙ্কৃত মহাকাব্য ও পুরাণের বিভিন্ন দৃশ্যসম্বলিত পোড়ামাটির ফলকে সমৃদ্ধ।
লালজি মন্দির– ১৭৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ২৫টি চূড়াবিশিষ্ট মন্দির লালজি মন্দির।। মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি নাটমণ্ডপ এবং আর একটি পর্বতাকৃতি মন্দির যা গিরিগোবর্ধন নামে পরিচিত । মূল মন্দিরটি পোড়ামাটির অলঙ্করণে মণ্ডিত । এই ছবিতে কিছু পোড়ামাটির কাজের নমুনা দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে উঁচু ভিত্তির উপর উত্থিত এক খিলান প্রবেশ পথ ও ঈষৎ বক্র শিখর সমন্বিত প্রতাপেশ্বর মন্দিরটি ঊনবিংশ শতকের রেখ দেউলের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ । মন্দিরের গায়ে রয়েছে পোড়ামাটির জমকালো অলঙ্করণ ।
শ্যামচাঁদ রাধারানি মন্দির– মাইজির বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৫২ সালে। এই বাড়িতেই প্রতিষ্ঠিত শ্যামচাঁদ রাধারানি মন্দির। এ বাড়ির ঐতিহ্য তিনশো বছরেরও বেশি পুরনো। আজও দোল পূর্ণিমা, রথযাত্রা, ঝুলন পূর্ণিমা, অন্নকূট ও রাস বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হয় এখানে। এই উপলক্ষে এখানে উপস্থিতও হন বর্ণ, ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরের মানুষ।
প্রজাপতি বাড়ি– প্রজাপতি বাড়িও বিশেষ পরিচিত। এই দর্শনীয় বিরাট বাড়িটির বৈশিষ্ট্য একটি বিরাটাকার প্রজাপতি প্রতীক। এই বাড়ির মালিক হেমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সুর ও সাথি সংগঠনেরও মালিক। তাঁর ভাই অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৪৭ সালে এই বাড়িতে কালীপূজার সূচনা করেন।
রাজবাড়ীর কামান – নবকৈলাস মন্দিরের ঠিক বিপরীতে রয়েছে কালনার টেরাকোটার মন্দির সমূহ যা রাজবাড়ির কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত। রাজবাড়ি কমপ্লেক্সের প্রবেশদ্বার পেড়িয়ে প্রথমেই আসবে রাজবাড়ির প্রাচীন কামান।
রাসমঞ্চ – প্রতাপেশ্বর শিবমন্দিরের পাশেই ১৭৫৮ সালে তৈরি রাসমঞ্চ রাজবাড়ির এক অন্যতম নিদর্শন। ছাদবিহীন এই মঞ্চের মধ্যে আছে ছোট এক ঠাঁকুর দালান যেখানে একসময় রাস উৎসব পালন করা হতো। বতর্মানে দাঁড়িয়ে যা এখন অতীতের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
নারায়নশিলা মন্দির – লালজী মন্দিরে প্রবেশদ্বারের ঠিক বাঁদিকেই রয়েছে নারায়নশিলা মন্দির। এখানে নারায়নের ১০৮টি শালগ্ৰাম শিলা রয়েছে।
গিরিগোবর্ধন মন্দির– লালজী মন্দিরে প্রবেশদ্বারের ঠিক বাঁদিকে নারায়নশিলা মন্দিরের পাশেই রয়েছে গিরিগোবর্ধন মন্দির। অন্য মন্দিরের থেকে এই মন্দিরের নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ আলাদা। মন্দিরের নিমার্ণকাজ হয়েছে গোবর্ধন পাহাড়ের অনুকরণে। মন্দিরের খাজে রয়েছে নানা মুনি ঋষি,দেবতা ও জীবজন্তুর মূর্তি। মন্দিরের ভেতরে বেশ কিছু চিত্রকলা ও অংকিত রয়েছে।
রুপেশ্বর শিব মন্দির – লালজী মন্দির থেকে বেড়িয়ে কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরে যাওয়ার পথে পড়বে রূপেশ্বর শিব মন্দির। ১৭৬১ সালে রানী রূপকুমারী দেবী এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত করেন। দালান আকৃতির এই মন্দিরে সামনের দিকে রয়েছে টেরাকোটার কাজ।
পঞ্চরত্ন শিব মন্দির – রূপেশ্বর শিব মন্দিরের পাশেই রয়েছে পঞ্চরত্ন শিব মন্দির। ছোট বিভিন্ন মাপের একচালার পর পর ৫টা মন্দির রয়েছে কোনো বিগ্ৰহ নেই মন্দির প্রাঙ্গনে। সময়ের বিবর্তনে মন্দিরগুলো আজ পুরানো স্মৃতিময় অতীতকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। উনবিংশ শতকে এই মন্দিরগুলো তৈরি হয়েছিল।
বিজয় বৈদ্যনাথ মন্দির –পঞ্চরত্ন শিব মন্দির থেকে বেরিয়ে কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরে যাওয়ার পথে পড়বে বিজয় বৈদ্যানাথ মন্দির। মন্দিরের সামনের দিকে রয়েছে টেরাকোটার কাজ। কালো পাথরের শিবলিঙ্গ রয়েছে এই মন্দিরে নিত্য পূজো হয়।
কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির –বিজয় বৈদ্যানাথ মন্দির ঘুরে চলে এলাম রাজবাড়ী চত্বরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরে। ১৭৫১-১৭৫৫ সালে বর্ধমানের মহারাজা কীতিচাঁদ বাহাদুরের আমলে তৈরি হয় এই মন্দির। তিনটি স্তরে রথের চূড়ার মত ২৫ টি চূড়া আছে এই মন্দিরে। মন্দিরটিতে রয়েছে টেরাকোটার এক অসাধারণ নিদর্শন। মন্দিরের ভেতরে প্রত্যেকটি বাতিস্তম্ভে রয়েছে টেরাকোটার কাজ যা অতীতের সেই সব শিল্পীরা দেউলরীতি সমৃদ্ধ অপরূপ কাজ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। মন্দিরের মূলগৃহে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের বিগ্ৰহ যেখানে নিত্য পূজো হয়। ভারতবর্ষের ৫টি পঁচিশরত্ন মন্দিরের মধ্যে কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির অন্যতম। মন্দিরের অন্যতম আকর্ষণ হলো পঞ্চবটি গাছ যেখানে রয়েছে ৫টি ভিন্ন গাছের মিলনক্ষেত্র। মন্দিরের মূলগৃহে প্রবেশের মুখে আছে গড়ুর বিগ্ৰহ।
বদ্রীনারায়ন মন্দির –কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরের ঠিক পাশেই রয়েছে বদ্রীনারায়ন মন্দির। মন্দিরের মূল আকর্ষণ হলো কালোশিলা পাথরের মধ্যে খোদাই করে অলংকিত করা হয়েছে নারায়নের ভাষ্কর্য যা এককথায় অনবদ্য।
রামসীতা মন্দির –বদ্রীনারায়ন মন্দিরের ঠিক বিপরীতে রয়েছে রামসীতা মন্দির। দালানরীতিতে নির্মিত এই মন্দিরে রয়েছে রামসীতাসহ বেশ কিছু দেবদেবীর বিগ্ৰহ।
শ্রী শ্রী গৌরীদাস পন্ডিতের শ্রীপাট –শ্রীপাটে প্রবেশদ্বার পেড়িয়ে নাটমন্দির যেখানে দাঁড়িয়ে মহাপ্রভুর দর্শন মেলে। অনেকেই বলে থাকেন যে নিম বৃক্ষতলে জন্ম হয়েছিল নিমাই এর সেই নিমগাছের কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে মন্দিরের বিগ্ৰহ। তবে কোনটি সত্যি সেটা আমার জানা নেই। একটা কথা সত্যি শ্রী চৈতন্যের বিগ্ৰহ প্রথম দর্শনেই যেন এক অদ্ভূত অনুভূতি কাজ করে। মন্দিরে মহাপ্রভুর বৈঠা ও হাতে লেখা পুঁথি রয়েছে। মন্দিরে বেশ কিছু দেবতার বিগ্ৰহ রয়েছে। আগে থেকে বলে রাখলে মন্দিরে ভোগপ্রসাদ খাওয়ার ব্যবস্থা হবে। মূল মন্দির প্রাঙ্গণে ছবি তোলা নিষেধ।
চৈতন্যদেবের বিশ্রামস্থল বা তেঁতুলতলা মন্দির –গৌরীদাস পন্ডিত ও শ্রী চৈতন্যদেবের মিলনক্ষেত্র হলো এই তেঁতুলগাছ। যা ৫০০ বছরের পুরনো। গাছের নিচে রয়েছে ছোট এক মন্দির যেখানে আছে বেলে পাথরের উপর মহাপ্রভুর পদচিহ্ন। অদ্ভূত ব্যাপার হলো বট গাছের মত এই তেঁতুল গাছটির ঝুড়ি মাটিতে নেমে শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছে। পুরো চত্ত্বর প্রাচীর দিয়ে ঘেরা নিত্য পূজো হয়। পুরো চত্ত্বরে রয়েছে অসাধারণ সব চিত্রকলা।
শ্যামসুন্দর মন্দির –মন্দিরে্র মূল আকর্ষণ হলো শ্রী নিত্যানন্দ প্রভূর বিবাহস্থল। মূল মন্দির থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে বাঁধানো একটি কুলগাছ যেখানে নিত্যানন্দের বিবাহ হয়েছিল। কুলগাছের পাশেই রয়েছে ছোট এক মন্দির যেখানে নিত্য পূজো হয়।
দাঁতনকাঠিতলা মসজিদ –পাঠান কালের মসজিদ যা এখন ধ্বংসাস্তূপে পরিনত হয়ে তার পুরোনো কিছু ঐতিহ্য বহন করছে শহর কালনাতে। যা ১৪৯০ সালে গৌড়ের সুলতান ২য় নাসির উদ্দীন মাসুদ শাহের আমলে তৈরি হয়। অতীতে একসময় ঈদগাঁও ময়দান ছিলো যেখানে দূরদূরান্ত থেকে পালকি তে করে মানুষ আসতেন।মসজিদ প্রাঙ্গনে রয়েছে শতবছরের পুরনো বিশালাকার এক বটবৃক্ষ। যার ছায়া ও মসজিদের নিরিবিলি পরিবেশ মনে যেন এক শান্তির ছোঁয়া এনে দেয়। মসজিদের রক্ষনাবেক্ষনে এখন যারা রয়েছে তাদের অমায়িক ব্যবহার সত্যিই মনে রাখার মতো।
মহিষমর্দিনী মন্দির –মহিষমর্দিনী তলায় রয়েছে টিনের শেড দিয়ে তৈরি বিশাল এক মঞ্চ। মঞ্চ পেরিয়ে যেতে হবে মহিষমর্দিনীর ঠাঁকুর দালানে। ঠাঁকুর দালানে রয়েছে কাঠামো। আর সেই কাঠামোতে দেবীমূর্তি তৈরি করে প্রতি বছর শ্রাবণের মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতে দুর্গাপূজো হয় মহিষমর্দিনীর ঠাকুর দালানে। এই পূজো উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে মহিষমর্দিনী তলায় যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। মহিষমর্দিনীর নিজস্ব ধর্মশালা মন্দিরের পাশেই রয়েছে।মহিষমর্দিনীর ধর্মশালার পাশেই রয়েছে কাঠের তৈরি নহবত খানা।
ভাগিরথী নদীর ঘাট –মহিষমর্দিনীর ঠাঁকুর দালান দর্শন করে চলে এলাম ভাগিরথী নদীর পাড় ধরে কিছুটা দূরে বাঁধানো ঘাটে। ভাগিরথী নদীর বেশ কিছু জায়গায় পলি জমে চর তৈরি হয়েছে আর সেখানে চলছে চাষাবাদ। অতীতে একসময় এই নদী দিয়ে বার্মা (বতর্মানে মায়ানমার) থেকে বড় জাহাজ,নৌকায় করে মাল আসত। আর বতর্মানে সেই অতীতকে সাক্ষী করে ভাগিরথী নদী আপন মনে বয়ে চলেছে।
ভবাপাগলার আশ্রম –পূর্ববাংলার ঢাকা জেলার অন্তর্গত আমতা গ্ৰামে জম্মগ্ৰহন করেন সাধক ভবা পাগলা। ভবা পাগলা দেবী ভবানীর সাধনা করতেন আর সাথে লিখে গেছেন অসংখ্য সুমধুর গান। যা এখন youtube সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রচারিত হচ্ছে। মন্দিরে মা ভবানীসহ অনেক দেব-দেবীর বিগ্ৰহ রয়েছে। আরো আছে বাবার অসংখ্য ছবি ও বানী। ১৩৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভবার-ভবরানী। ভবা পাগলার বিগ্ৰহ আছে মন্দিরে। মূল মন্দিরের উল্টো দিকেই আছে ভবা পাগলার সমাধি। বৈশাখের শেষ শনিবার মা ভবানীর মন্দিরে এক বিশেষ পূজোর আয়োজন করা হয়। কালনা আসলে একবার ভবা পাগলার আশ্রম দর্শন করতেই হবে। নয়তো মনে হবে যে কালনা ভ্রমনটা পুরো সফল হলো না। “মায়ের কাছে সবাই সমান। কি হিন্দু,কি মুসলমান”—ভবার বানী।
নামব্রক্ষ জীউ মন্দির –ঠাঁকুর রামকৃষ্ণের চরন ধরা সিদ্ধ সাধক ভগবান দাস বাবাজির আশ্রম ব্রক্ষবাড়ি। ১৮৭০ সালে বাবাজি এই ব্রক্ষবাড়িতে ঠাঁকুর রামকৃষ্ণের সাথে মিলিত হন। মন্দিরে ভগবান দাস বাবাজির সমাধি রয়েছে। সময়ের সাথে আশ্রমটি তার পুরনো স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নামব্রক্ষ জিউ মন্দিরের বিপরীতে রয়েছে রামকৃষ্ণ সারদা পাঠমন্দির।
পাতাল গঙ্গা -ব্রক্ষবাড়ি আশ্রমের মূল আকর্ষণ হলো পাতাল গঙ্গা। এটা অনেকটা চোরা কুঠুরির মতো সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামলেই জলের দেখা পাওয়া যাবে। ভগবান দাস বাবাজী বৃদ্ধা বয়সে গঙ্গাস্নানে অক্ষম হলে এই জলাধারে নেমে স্নান করতেন। সবচেয়ে অদ্ভূত হলো বর্ষাকালে ভাগিরথী নদীর জল বেড়ে গেলে এই জলাধারের জল ও বেড়ে যায় আর সাথে জলের রং ও পরিবর্তন হয়ে যায়।
গোপালজীউ মন্দির -Archaeological Survey of India এর অধীনে রয়েছে গোপাল বাড়ি। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে রয়েছে ছোট ২টি মন্দির। যেখানে রয়েছে ক্ষুদ্রাকৃতির শিবের বিগ্ৰহ।১৭৬৭ সালে কৃষ্ণচন্দ্র বর্মন নামক এক ক্ষত্রিয় রাজ কর্মচারি এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত করেন। মূল মন্দিরের পাশেই রয়েছে রথ। পুরো মন্দির জুড়ে রয়েছে টেরাকোটার কাজ। তবে মন্দিরের বেশ কিছু জায়গায় টেরাকোটার কাজ নষ্ট হয়ে গেছে। মন্দিরের মূলগৃহে রয়েছে কালো বর্নের নারুগোপালের বিগ্ৰহ সহ অন্যান্য দেব-দেবী। নিত্য পূজো হয় এই মন্দিরে। কালনার ২৫ চূড়া বিশিষ্ট মন্দিরের অন্যতম হলো গোপালজিউ মন্দির।
জগন্নাথতলা জোড়া মন্দির –১৭৫৩ সালে বর্ধমানের মহারাজা তিলকচাঁদের রাজত্বে ছন্দকুমারী দেবী ও ইন্দ্রকুমারী দেবী এই মন্দির দুটি প্রতিষ্ঠিত করেন। মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কাজ কালনার টেরাকোটা ঘরানার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। দুটি মন্দিরেই রয়েছে কালো পাথরের শিবলিঙ্গ যেখানে নিত্য পূজো হয়। তবে খারাপ লাগছে হয়তো একটু রক্ষনাবেক্ষন করলে মন্দির দুটি এক মহামূল্যবান সম্পদে পরিনত হতে পারতো। ভয় হয় অদূর ভবিষ্যতে না যেন টেরাকোটার অন্যতম নিদর্শন এই জোড়া মন্দির দুটি হারিয়ে যায়।জগন্নাথতলা জোড়া মন্দিরের নিকটে রয়েছে ধ্বংসাস্তূপে পরিনত হওয়া এক শিবমন্দির। মন্দিরে কালো পাথরের শিবলিঙ্গ আছে। হয়তো একটু রক্ষনাবেক্ষন করলে এই মন্দিরটি পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পারতো।
জগন্নাথ ঘাট –জোড়া মন্দিরের পাশেই রয়েছে জগন্নাথ ঘাট। অতীতের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে। নদীর জল শুকিয়ে পলি জমে এখন চরের আকার নিয়েছে সেখানে চাষাবাদ হচ্ছে।
জগন্নাথ মন্দির – যার নামে এই জগন্নাথতলা তাকে দর্শন করতে চলে এলাম জোড়া মন্দিরের কিছুটা দূরে পুরনো দালানরীতিতে তৈরি জগন্নাথ মন্দিরে। মন্দিরের মূলগৃহে রয়েছে জগন্নাথ,সুভ্রদা,বলরাম সহ বিভিন্ন দেব-দেবীর বিগ্ৰহ। মন্দির প্রাঙ্গনে রয়েছে রথ প্রতি বছর মহাসমারোহে পালন করা হয় রথ উৎসব। ঠিক করে রক্ষনাবেক্ষন করলে এই মন্দিরটি কালনার পর্যটনে বেশ আকর্ষণীয় হবে।
অনন্ত বাসুদেব মন্দির –১৭৫৪ সালে ব্র্জকিশোরী দেবী কতৃক তৈরি হয় অনন্ত বাসুদেব মন্দির। এই মন্দিরের বিশেষ আর্কষন হলো বিশালাকার একচালা মন্দির। মন্দিরের আমূল সংস্কারের ফলে আগের সেই টেরাকোটার কাজ অনেকটাই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তারপরও মন্দিরের সামনে রয়েছে টেরাকোটার বেশ কিছু কাজ যা সবাইকে মুগ্ধ করবে। মন্দিরের মূলগৃহে রয়েছে বাসুদেবসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর বিগ্ৰহ।
সাধন কালী মন্দির –মন্দিরটি ৭০ বছর পূর্বে সাধক ভদু ঠাঁকুর প্রতিষ্ঠিত করেন। মন্দিরে কালীমাতা সহ বেশ কিছু দেব-দেবীর বিগ্ৰহ রয়েছে।অনন্ত বাসুদেব মন্দির,সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির,সাধন কালী মন্দির এই তিনটে মন্দির একদম পাশাপাশি রয়েছে।
পীর বদর সাহেবের মাজার –মাজারটি ভাগিরথী নদীর ধার ধরে বিশাল এক বটবৃক্ষের তলায় অবস্থিত। প্রতি মঙ্গলবার মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচুর লোক মাজার জিয়ারত করতে আসেন।
বৌদ্ধ মন্দির – কালনার বড় মিত্র পাড়ার বৌদ্ধ মন্দির “কালনা মহাবোধি ধর্মানকুর বৌদ্ধ সমিতি” আরেক দর্শনীয় স্থান। প্রধান আকর্ষণ হলো ৬ ফুটের সোনার প্লেটে মেটাল বৌদ্ধমূর্তি (থাইল্যান্ড) ও পুরোনো পাথরের বৌদ্ধমূর্তি (মায়ানমার)।
পুরনো গির্জা – ১৮২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এক গির্জা রয়েছে শহর কালনাতে। যা পুরানো গির্জা বলে পরিচিত।
সমাজ বাড়ী – এই বাড়িতে রয়েছে বর্ধমানের মহারাজা ও রানীদের সমাধি। আমাদের টোটো চালক দাদা বললেন রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে বাড়িটি ধ্বংসাস্তূপে পরিনত হয়েছে। বতর্মানে বাড়িটিতে স্কুল ভবন রয়েছে।
শ্যামচাঁদ মন্দির (মাজীর বাড়ি) – ১৭৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাজীর বাড়ি,আর এই বাড়িতে রয়েছে শ্যামচাঁদ মন্দির। এই বাড়ির ঐতিহ্য তিনশো বছরেরও বেশি পুরনো। মন্দিরে দোল,ঝুলন ও রাস উৎসব হয়।
রাজপ্রাসাদ – ১৮১০ সালে বর্ধমানের মহারাজা তেজচন্দ্র বাহাদুর কালনায় রাজপ্রাসাদটি প্রতিষ্টিত করেন। প্রাসাদটিতে একসময় ১১০টি ঘর ছিল। বতর্মানে রাজপ্রাসাদটিতে সরকারি অফিস রয়েছে।
রামেশ্বর শিবমন্দির – ১৭৮৩ সালে মহারানী বিষনকুমারী দেবী এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত করেন। টেরাকোটার কাজে সমৃদ্ধ এই মন্দিরে কোন বিগ্ৰহ নেই।
জলেশ্বর ও রত্নেশ্বর শিবমন্দির – ১০৮ শিবমন্দিরের পাশেই রয়েছে টেরাকোটার এই মন্দির সমূহ।
অদ্বৈত ভবন – এই মন্দিরে রয়েছে ৫০০ বছরের পুরনো রাধাকৃষ্ণের বিগ্ৰহ।
সাধক কমলাকান্তের কালীবাড়ি – বিদ্যাবাগীশপাড়ায় রয়েছে সাধক কমলাকান্তের জম্মভিটা।
কালনার মিষ্টি –আরেকটা কথা না বললেই নয় সেটা হলো কালনার মিষ্টি বিশেষ করে ছানা মুড়কি,মাখা সন্দেশ ও নোড়া পান্তুয়া (ল্যাংচা)। চকবাজারে মাঁ অম্বিকা সুইটসের ছানা মুড়কি ও মাখা সন্দেশ যেন এখনো মুখে লেগে আছে। আসলে আমরা বাঙালিরা ঘুরতে যেমন ভালোবাসি,ঠিক তেমনি ভোজন রসিক ও বটে। তাই আমার মতো ভোজনরসিকদের জন্য কালনা এক বিশেষ ভালো লাগার জায়গা। যারা খেতে আর ঘুরতে ভালোবাসেন তারা অবশ্যই একবার ঘুরে আসুন কালনা।
কালনার রাখী –কালনার এক অন্যতম বড় শিল্প হচ্ছে রাখী ব্যবসা। পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পাড়ি দিচ্ছে কালনার তৈরি রাখী। কালনার ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে রাখী। কলকাতার সমস্ত বড় রাখী কোম্পানির কারখানা আছে শহর কালনাতে। কালনাতে যখন পর্যটকরা ঘুরতে আসেন তারা সরাসরি কারখানাতে গিয়ে কিভাবে রাখী তৈরি হচ্ছে তা স্বচক্ষে পরিদর্শন করতে পারবেন। যেটা আমি স্বচক্ষে পরিদর্শন করেছি আর সাথে স্নারক হিসেবে কিছু রাখী ও উপহার পেয়েছি। রাখী কারখানা পরিদর্শনের জন্য অবশ্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে।
কালনার তাঁত : ভাগিরথী নদীর পাড় ধরে রয়েছে কালনার বিখ্যাত তাঁত শিল্প। শহর জুড়ে বেশ কিছু কাপড়ের দোকান যেখানে টাঙ্গাইল, ধনেখালি ও কালনার নিজস্ব ঘরানায় তৈরি তাঁত শিল্পের ভান্ডার রয়েছে।প্রতি শনিবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পযর্ন্ত কালনার ব্যাংক বাজারে ‘তাঁত কাপড়ের হাট’ বসে। দাম ও নাকি বেশ কিছুটা কম হয়।
কালনার আরেক বৈশিষ্ট্য হলো সরস্বতী পূজো। থিম পূজার রমরমা এখন কলকাতা ছড়িয়ে দিকে দিকে যার জলন্ত উদাহরণ হচ্ছে শহর কালনার সরস্বতী পূজো। বিশাল আলোকসজ্জা ও শোভাযাত্রায় আলোকিত করে রেখেছে পুরো কালনাকে। আমার এই পূজো দেখা হয়নি, তবে ওখানকার মানুষের কথা শুনে মনে হয়েছে ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে এই পূজো এক উপরি পাওনা হবে।
কলকাতা থেকে অম্বিকা কালনা ঘুরে দেখতে রাত্রিবাসের কোনও প্রয়োজন হয় না। নিজেদের গাড়িতে বা ট্রেনে গেলে স্থানীয় রিক্সা ভাড়া করে সমস্ত দ্রষ্টব্যস্থান ভালো ভাবে দেখে অনায়াসে সন্ধ্যার মধ্যে কলকাতা ফেরা যায। তবুও থাকতে চাইলে পুরসভার টুরিস্ট লজ আছে।কলকাতা থেকে লোকাল ট্রেনে অম্বিকা-কালনা পৌঁছনো যায়। সব থেকে ভালো হাওড়া বা শিয়ালদহ কাটোয়া । সড়কপথে কলকাতা থেকে জি টি রোড/ দিল্লি রোড ধরে ব্যান্ডেল পৌঁছে সেখান থেকে আসাম-লিঙ্ক রোড ধরে কালনা প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ।
তথ্যসূত্র : উইকিপেডিয়া , কালনাবাসী , আমার শহর, ফেসবুক
তথ্য সহযোগিতায় : বাবন পাল , রবিশঙ্কর পাল এবং একরামল হক (ঝাড়ুবাটি , কালনা )
____________________________ ***___________________________________________