25/04/2024 : 5:55 PM
অন্যান্য

করোনা নয়, নারকেল গাছে সাদা মাছি

গত কয়েকদিন ধরে আপনারা আতঙ্কে ভুগছেন।আবার গুজব ছড়িয়েছে।বিষয়টি নিয়ে কিছু না লিখে পারলাম না। বিষয়টা হল নারকেল গাছে রাতে লাইট মারলে সাদা চকচক করছে।এটা নিয়ে আমি সকল চাষীকে বললেও বোঝাতে পারছি না।কিন্তু কেন? আগে বলেই রাখি, কোনো গুজবে কান দেবেন না। যেটা সত্য সেটা মেনেই নিতে হবে। আসলে এটা এক প্রকার সাদা মাছি (Regose Spiralling Whitefly).এটা আসলেই জীবানু বহন করে।এখন বলতে পারেন ব্যাপক ছড়িয়েছে। কারণ সময়টা ঐ মাছির ডিম পাড়ার। সাদা মাছির লালা রস লাইট পড়া মাত্রই চকচক করছে। এটা নারকেল,সুপারি,কলা,এমনকি বেগুন টমেটোতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে।বেগুন,লঙ্কা,তিলের তুলসী বা গুচ্ছপাতা বা ঢেরশের সাহেব রোগ ( ইয়োলো বিন মোজাইক ভাইরাস) এই পোকা বহন করতে পারে। এ বিষয়ে বাগানগ্রাম কীটনাশক বিক্রেতা বিনয় বাবুর সঙ্গে কথা হয়েছিল। যেহেতু নারকেল গাছ, তাই এটা বেশি বোঝা যাচ্ছে। এর আগে ২০১৬ সালে আমাদের দেশে কেরালা,তামিলনাড়ুতে এই রোগটা মহামারীর আকার নিয়েছিল।রোগ হলে ক্ষতি হতেই পারে।তবে যেহেতু এই পোকা ভাইরাস গঠিত রোগ বহন করে তাই খুব সচেতন হতেই হবে এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতেই হবে। আবার এই বিষয় নিয়ে যেসমস্ত মুসলিম চাষী আছে তারা আমার কাছে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। আসলে এই পোকা বা ম্যাপপোকা এত সুন্দর করে নকশাঁ তৈরি করে যা দেখে মনে হয় আরবি বা উর্দু হরফ। আর অনেকে বলছে এতে লেখা নাকি লা ইল্লালাহ লেখা। আমি রাত্রে লাইটের আলো জ্বালিয়ে দেখেছি যত রাত্রি হবে, ততই চকচক বেশি করছে।আচ্ছা, গভীর রাতে শিশির পড়তেই পারে, আলো তো চকচক করবে আর সাদা লালা দিয়ে নকশা ভালো লাগবেই। এটা কিন্তু মরণ ব্যাধি।নিয়ন্ত্রন করা কঠিন। তবে আগে থেকে প্রতিকার করলে তেমন সমস্যা তৈরি হয় না।আর করোনা ভাইরাস এর ওপর ক্রিয়া করতে পারে না বা চীন এই গাছের ওপর কোনো ভাইরাস ছড়াতে পারে না।

এরা কিন্তু শোষক পোকা তাই পাতার রস শুষে খায়।আর সাধারণত পাতার নিচে আক্রমণ বেশি হয়।

প্রতিকারঃ-
গাছের প্রাথমিক বয়সে আক্রমণ কমানোর জন্য চারা লাগানোর সময় অন্তর্বাহী কীটনাশক কার্বোফুরান (৫গ্রাম/গাছ), বা কারটাপ হাইড্রোক্লোরাইড (৩গ্রাম/গাছ), বা ফিপ্রোনিল ৩ জি(৩ গ্রাম/ গাছ) প্রয়োগ করতে হবে।

চারা বসানোর আগে অন্তর্বাহী কীটনাশক দ্রবনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড ০.৪মিলি/ লি, বা থায়ামেথোক্সাম০.৫ গ্রাম/ লি, বা অ্যাসিটামিপ্রিড ০.৫ গ্রাম/ লি, চারার শিকড়কে ৩০ মিনিট ডুবিয়ে শোধন করতে হবে বা পরে এই গুলোই প্রয়োগ করতে হবে। পাতার নিচের দিকে ভালো করে ভিজিয়ে দিতেই হবে।
এরপর বলবেন নারকেল গাছের মাথায় উঠে স্প্রে করবো? দরকার নেই গাছে ওঠার। গোড়া থেকে ১-১.৫ ফুট মাটি খুঁড়ে পেনসিলের মত মোটা ও কমলা লাল রঙের কচি শিকড় তুলুন এরপর আগাটাকে মসৃণ ও বাঁকাভাবে ধারালো ছুরি বা ব্লেড দিয়ে কেটে নিন।।পরিমান মত কীটনাশক লিটার প্রতি দিয়ে দু চামচ ইউরিয়া দিয়ে পলিথিনে দিয়ে বেঁধে দিন্।গাছ টেনে নেবে।

তবে কম দেখা গেলে নিমতেল ১০০০০ পিপিএম ২মিলি/ লিটার জলে গুলে দিতে পারেন।

বিঘা প্রতি ৪টি হলুদ আঁঠালো ফাঁদ বসালে পূর্ণাঙ্গ মাছিরা হলুদ রঙে আকৃষ্ট হয়ে ফাঁদের আঠায় আটকে যাবে।এছাড়া ফেরোমেন ট্রাপ ব্যবহার করা যায়।

এখন গরম কাল।তো যে বিষয়টি নিয়ে এখন কথা বললো সেটা নারকেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। সেটা এরিওফাইড মাকড় বা মোবাইল রোগ।এই মাকড় খুবই ছোট,খালি চোখে দেখা যায় না। প্রায় ১৫-২০ দিনের মধ্যে এদের জীবন কাল শেষ হয়ে যায়। এই মাকড় আণুবীক্ষণিক হলদেটে সাদা রঙের, লম্বা, দীর্ঘায়িত, অনুদেহী পোকা।খালি চোখে দেখলে মনে হয় নারকেলের গুটিতে এখানে সেখানে বিভিন্ন জায়গায় সাদা পাউডার ছড়ানো আছে। অনুকূল পরিবেশে এরা অসংখ্য পরিমান সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। ছোট অবস্থায় এরা খুব তাড়াতাড়ি বাতাসের মাধ্যমে পাশাপাশি এক গাছ থেকে অন্য গাছে ও বহুদূরবর্তী জায়গায় নারকেল গাছকেও আক্রমণ করতে পারে।

এদের আক্রমণের প্রায় এক মাস পরে ছোট ছোট ডাবের গায়ে লক্ষ্মণগুলি দেখা যায়। এরা গুটির (৩০-৪৫ দিন) বৃতির নীচে অসংখ্য সংখ্যায় বৃদ্ধি করে ও গুটির কচি সবুজ অংশ থেকে রস শুষে খায়। বৃতি ছাড়িয়ে দিলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বৃতির ভেতরের দিকে গোলাপি রঙের দাগ দেখা যায়। কয়েক দিন পর গোলাপি রঙের আক্রান্ত অংশ হলুদ হয়ে যায় ও ত্রিকোনাকৃতি শুকনো অংশ হিসাবে ডাবের বাইরের সতেজ সবুজ খোসা শুকিয়ে কালো কালো দাগ ফাটা ফাটা দাগ হয়ে যায়, গা খসখসে হয়ে যায়। বেশি আক্রান্ত ফল থেকে আঠা বেরোতে থাকে ও ডাবের সবুজ ভাব নষ্ট হয়ে যায়। অত্যধিক আক্রমণে ডাব শুকনো হয়ে যায় ও ছোট ছোট ডাব গাছ থেকে ঝরে পড়ে।এতে ডাবের বৃদ্ধি কমে যায় এবং নারকেল ছোট হয় ও শাঁস কম উৎপাদন হয়।

প্রতিকারঃ-
উদ্ভিদজাত কীটনাশক যেমন নীমতেল(শতকরা ২ভাগ),রসুনতেল( শতকরা ২ ভাগ),করঞ্জতেল(শতকরা ০.৪ভাগ),মহুয়া তেল(শতকরা ৪ভাগ),অ্যাজাডিরেকটিন ১০০০০পিপিএম,(২মিলি/ লিটার) জলে গুলে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

প্রয়োজন হলে রাসায়নিক মাকড় নাশক দেওয়া যেতে পারে।তবে বিকালে স্প্রে করুন।
প্রোপারজাইট ৫৭% ই সি,( ওমাইট,সিম্বা,ইন্দোমাইট) ২ মিলি/ লিটার।

মিলবিমেটিন ১% ইসি,(মিলবিনক) ০.৫ মিলি/ লিটার।

ফেনাজাকুইন ১০% ইসি(ম্যাজিস্টার,ম্যাজেস্টিক) ১.৫মিলি/লিটার।

ফেনপাইরক্সিমেট ৫% এস সি,(সেডনা,প্রক্সিমেট,মিটিগেট) ১.৫ মিলি/ লিটার

হেক্সিথায়াজক্স ৫.৪% ইসি,(মেডেন,অগ্রদূত),১.৫মিলি/লিটার।

স্পাইরোমেসিফেন ২২.৯% এস সি,(ওবেরন,ভোলটেজ),০.৭৫ মিলি/ লিটার।

Related posts

রমজানের সামাজিক উপকারিতা : আত্মশুদ্ধির এক ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা

E Zero Point

জিরো পয়েন্ট পাবলিকেশনের ৬টি বই প্রকাশ

E Zero Point

গুসকরায় তৃণমূল নেত্রীর উদ্যোগে পানীয় জলের পাম্প মেরামত

E Zero Point