30/10/2024 : 3:27 AM
অন্যান্য

জিরো পয়েন্ট রবিবারের আড্ডা | আঞ্জু মনোয়ারা আনসারী, আরণ‍্যক বসু, অশোক কুমার রায়, সুজাতা মিশ্র

জিরো পয়েন্ট সাহিত্য আড্ডা থেকে রবিবারের আড্ডা নামে
এই সাপ্তাহিক ওয়েব পেজটি আজ থেকে প্রথম প্রকাশ করা হল

————–২৯ মার্চ ২০২০ রবিবার—————

গল্প


একটা তুমুল বিশ্বাস

আঞ্জু মনোয়ারা আনসারী
শ্রাবনী পূর্ণিমা, ছাদ ভর্তি সজনেফুল রঙের জোছনা।  মাঝে মাঝে, শ্রাবণ মেঘ আর চাঁদের লুকোচুরি।  ছাদের ওয়াল ঘেঁষে সারি সারি বাহারি পাতা, এবং বিভিন্ন মরসুমি ফুলের গাছ।  কোণের দিকে একটি বড়ো টবে কামিনি, গাছ ভর্তি সাদা ফুলের গন্ধে ভরপুর।  একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়েছে গাছগুলিকে।  ঠিক এমনই এক মনোরম মোহময় সময়ে, রাত্রির বুকে– দুটি ছায়ামুর্তি মুখোমুখি বসেছে।  নিঃশব্দ, কোনো কথা নয়।
ক’দিন থেকেই অনির্বাণ দেখছে– অরুণিমার
কথাবার্তা, চলাফেরা কেমন যেন অদ্ভুত  হয়ে যাচ্ছে।  সংসারে আছে ঠিকই, কিন্তু না থাকার মতো।  এমনও হয়েছে, অনির্বাণ ডেকেছে, অরুণিমা ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে।  এমনকি– স্বামী-স্ত্রী একান্ত সময়েও নির্লিপ্ত; যেন শিথিল শরীরটা, শীতল একটি বরফের শিলাখন্ড।  অনির্বাণ বুঝে অনেক সময় না বোঝার মতো একরকম জোর পূর্বক, শুষ্ক কৃষ্ণগহ্বরে আদিম বুভুক্ষু মিলনে লিপ্ত হয়েছে, এক তরফা স্বস্তি-অস্বস্তির এক বাঙ্ময় ইচ্ছায়।  মনে মনে বিরক্ত হলেও– মুখাবয়বে সে রেখা ফুটে ওঠেনি।
অফিস ডিউটি আটঘন্টা, তারপর বাস ট্রেন জার্নি প্রায় ঘন্টা তিনেক।  সারাদিনের ক্লান্ত শরীর।  অথচ, আজ অনির্বাণ একরকম পণ করেই বাড়ি ফিরেছে।  ফিরতি পথে দেখেছে আকাশে শ্রাবন পূর্ণিমার চাঁদ।  অনেক দিনের পর রজনীগন্ধার কয়েকটি  স্টিক কিনেছে।  অরুণিমার হাতে দিয়ে– এগুলো ফুলদানিতে– মুখে বলার অপেক্ষা রাখে নি।  অরুণিমা উৎফুল্ল হয়েই স্টিকগুলি সুন্দর ভাবে কাটিং করে ফুলদানিতে সাজিয়ে ডাইনিং রুমের ছোট্টো একটি টুলের উপর রেখেছে।  তারপর রাতের খাবারের পাট চুকিয়ে, একমাত্র ছেলে অর্ঘ এবার ক্লাস টেন, হয়তোবা নিজের রুমে ঘুমিয়ে পড়েছে।
নীরবতা ভেঙে অনির্বাণ বলে–
অরু, তোমাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো তুমি কিছু মনে নেবে না তো?  আর তার উত্তর, সত্য এবং যা সঠিক সেটা আশা করবো আমি;  তুমিও তার মর্যাদা দেবে।
অরুণিমা এরকমই আঁচ একটা করেই ছিল।  তাই মনে মনে নিজেকে যতটা পেরেছে এতক্ষণ সেটাই তৈরি করে, বেশ সাবলীল ভাষায় বলে– কি বল, তারপর তো….!
অনির্বাণ– আমি কতোদিন তোমাকে দেখেছি, এবং বুঝতে পারছি তোমার কিছু একটা হয়েছে।  আর সেটা আরও পরিচ্ছন্ন করে বললে, তোমার সাথে কিছু একটা ঘটনায় বলি বা দুর্ঘটনা–  কিছু একটা ঘটেছে।
চল্লিশ-এর ঘরে অরুণিমা।  বাইশ বছরের বিবাহিত, সুখের দাম্পত্য জীবন।  কিন্তু হঠাৎ একি হলো অরুণিমার।  নিজেই এখনও বিশ্বাস করতে পারছেনা নিজেকে।  আর সে কথা, অনিকে কি করে বলবে।  তবুও তো বলতেই হবে।  না হলে যে, নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবেনা।  আবার ভীষণ ভয়ও করছে– অনি কিভাবে নেবে।  সত্যটা শোনার পর, তাদের স্বামী-স্ত্রীর  সম্পর্কের ভিতটা আলগা হয়ে যাবে না তো!  ছন্দময় জীবনের তানপুরায় আগের মতো সুর আসবে তো;  নাকি ছন্দহীন হয়ে বেসুরে সব উলোট-পুরাণ হয়ে যাবে না তো…..!
অরুণিমাকে আরো কাছে টেনে নেয় অনির্বাণ।  জ্যোৎস্নায় মাখামাখি দু’চোখে, দুটি খরস্রোতা নদীর ধারা বয়ে চলেছে।  অনির্বাণের বুকের ভেতর মাথা, মুখ গুজে সে ধারা লুকানোর অনেক চেষ্টা করেও পারেনা অরুণিমা।  চিবুকটা দু’হাত দিয়ে তুলে, অনির্বাণ, ললাটপ্রান্ত, দুটি গাল, দুই ঠোঁট নিঃশেষে শুঁকছে;  প্রাণের ভেতর  ভরে নিচ্ছে, অমলিন প্রেমের সুবাস।  ভিজিয়ে নিচ্ছে হৃদয়ের আগাপাশতলা…..!
দেখো, আমার চোখের দিকে– কোনো ঘৃণা আছে কিনা;  তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে বলো– তোমার সাথে কি ঘটেছে–
অরুণিমা– বিশ্বাস করো আমি চাই নি– কিন্তু হয়েছে।  কেমন করে মুহূর্তে হয়েছে আমি টের পাই নি।  আর যখন বুঝতে… তখন অনেক টা এগিয়ে গেছি।
অনির্বাণ– স্বাভাবিক, সাবলীল ভাবে, আকাশের দিকে দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাস ছেড়ে– অরু, জীবনে কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা জানিয়ে আসে না;  প্রকৃতির মতোই এরা এদের স্বাভাবিক নিয়মেই আসে।  কিন্তু আমাদের দায়িত্ব তার সীমাবদ্ধ পার না করা।  আমরা কি ভাবে নেবো কতোটা নিতে পারবো সেটা আমাদেরই সচেতন ভাবেই ঠিক করে নিতে হবে।  ভালোলাগা, ভালোবাসা, আর তার থেকেই প্রেম…!  এটা কখন কি ভাবে যে, সময়ের কোন সূচাগ্ৰ বেয়ে হৃদয় গহ্বরে প্রবেশ– এসবই মুহূর্তে– আমি, তুমি, কেউই আটকাতে পারি না।  জানো, অরু, তোমার মধ্যে যে, এতো প্রেম– তা এই ঘটনা বা দুর্ঘটনা যায় বলি না কেন, যদি না ঘটতো তাহলে…..??
আজ তোমাকে নতুন করে আবিস্কার করলুম; অরুণিমা– এই বিশাল তারা ভরা আকাশ তলে, তোমার প্রেম যেন আসন পেতেছে আমাকেও ঐ আসনে…..!!
ভিজে, কামিনি ফুলের সুগন্ধ বাতাস ছুঁয়ে গেল।  মুহূর্তে অনির্বাণ, মোবাইল এ লোড করা প্রিয় গানটা অন করে—
“দেখো, আলোয় আলো আকাশ/দেখো আকাশ তারায় ভরা/দেখো, যাওয়ার পথের পাশে/ছোটে হাওয়া পাগল পারা/এতো আনন্দ আয়োজন/সবই বৃথা তোমায় ছাড়া/ভরে থাকুক আমার মুঠো/দুই চোখে থাকুক ধারা/এলো সময় রাজার মতো/হলো কাজের হিসেব সারা।”
কখন যে, চাঁদ পশ্চিম আকাশে লুকিয়ে পড়েছে।  শ্রাবনের ঘন মেঘ আরও ঘন হয়েছে।  তারপর…. মুসলধারায় বৃষ্টি— ভিজল দুটি শরীর, হৃদয়, মন, আরও, আরও….. আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে দু’টি ছায়ামূর্তি– তুমুল ভালোবাসার সাক্ষী রেখে একটা গভীর বিশ্বাসে– বেডরুমের দিকে এগিয়ে যায়……।

কবিতাগুচ্ছ


লাভ হবে তারও বেশি

আরণ‍্যক বসু
গৃহবন্দীতে কতটুকু ক্ষতি হবে ?
লাভ হবে তারও বেশি।
####
ব‍্যালকনি ভরা জোড়া ঘুঘু দম্পতি,
রেডিও টিভি তো আছে অগতির গতি ।
ফোনে আর মনে কোটি হৃদয়ের হাসি,
ভালোতেই পাশাপাশি।
####
রাস্তা পেরোনো কথা চালাচালি ,
মরমীয়া মনে মৃদু হাততালি ,
হৃদয়ের কাছে সুজন ও প্রতিবেশী ,
লাভ হবে জেনো বেশি ।
####
বইয়ের তাকে জসীমউদ্দীন,
গল্পগুচ্ছে ভালোবাসা, ঋণ,
জানলা টপকে চৈত্র ডাকছে– আয় ?
বন্ধ দরজা ,বসন্ত ফিরে যায়।
####
আপাতত এই সদানন্দের মেলায়,
কলমেই আছি ,অন্তমিলের খেলায় ।

দূষণ মুক্ত সভ্য আসুক

 অশোক কুমার রায়
সৃষ্টিটাকে হাতের.মুঠোয়.
  রাখবে যারা ভাবছে  ।
পুঁচকে একটা জীব- জড়ের
ভয়েই বিশ্ব কাঁপছে !
সীমানাতে কাঁটার বেড়া
দেশ-ভাগেতেই মগ্ন ।
রাজনীতি আর ধর্মনীতি
এখন সবই নগ্ন ।
গরীব- দুঃখী মানুষ নাকি–
জঞ্জালেতে  ভরা !
ভাবতো নাকো এইতো আছি —
খানিক বাদেই মরা  !
অর্থ- বোমা শক্তি কত
বিশ্ব হাতের মুঠে ।
ভয়ে ভক্তি বিশ্ব- বাসী
মরবে মাথা কুটে ।
 এক- লহমায় ভেঙ্গে দিল
মানবজাতীর বড়াই !
করোনাটাই একাই একশো–
করছে একাই লড়াই ।
ভালবাসায় এক হল না
স্বার্থে গোনা-গুনি ।
বিশ্ব- বাসী এক হয়েছে
.মৃত্যু – কথা শুনি !
ভিন্ন নয়কো গীর্জা- মন্দির
গুরু- দুয়ার কাবা ।
দূষণ মুক্ত সভ্য আসুক–
নয় করোনা থাবা !

মেঘ-রং

সুজাতা মিশ্র(সুজান মিঠি)
রাখাল গরুর পাল ছেড়ে দিত
ঘাসের বুকে।
বটের নিচে শুয়ে নিজে ভেসে যেত
মেঘেদের ঘাটে ঘাটে।
মেঘ নিয়ে নিয়ে ছবি আঁকতো
কখনো ঘর কখনো ময়ূরকন্ঠী শাড়ি।
কখনো সূর্য যেত পাটে!
রাখালের গরুর পাল ঘাসের বুকে শুয়ে
জাবর কাটতো বেশ খানিক,
রাখাল তখন আঁকতো ঘুম।
গাছের উপর হঠাৎ চুপ হতো আকাশ
বিরাট দৈত্যের মত নেমে আসতো
মেঘ, প্রকান্ড ঘোরকালো ধূম।
নিমেষের মধ্যে পাশের ধানক্ষেত
হয়ে যেত ধূসর মলিন খড়
আলপথে জমতো গভীর ঘা,
গরুর পালে ছিন্নভিন্ন ঘাসও,
বাছুরেরা ভয়ে সন্ত্রস্ত
জড়িয়ে নিত মায়েদের গা।
ঘুম আঁকা শেষ করে রাখাল আঁকতো
স্বপ্ন। ঝড়ের পাতার পরে
মেঘের রং তখন ধুপছায়া।
কলাপাতার উপরে গরম ভাত
চটকে মুখে তুলতে গিয়ে ছেলেটা
খাইয়ে দিত মাকে। পরম মায়া।
কিছু পরে সূর্য পাটে যায়।
রাখাল গরু নিয়ে যায় ঘরে
খোলা দরজায় রাত নিয়ে শোয়,
মেঘ রঙে ছবিগুলো একে একে এসে
রাখালের গাছ গায়ে দোল খায়।
এক বুক ঘামে সুখ হয়ে ছোঁয়।

 


লেখাগুলি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য করুন নীচের কমেন্ট বক্সে।

জিরো পয়েন্ট রবিবারের আড্ডার সাপ্তাহিক ওয়েব পাতায় লেখা পাঠাতে হলে ইমেল করুন zeropointpublication@gmail.com

বিষয় – রবিবারের আড্ডা উল্লেখ করবেন।

Related posts

মেমারি ও আমাদপুরের দিনমজুরের পাশে সিপিআইএম

E Zero Point

কাটোয়া ও অগ্ৰদ্বীপ রেল স্টেশনে তৃণমূলের অবস্থান বিক্ষোভ

E Zero Point

পোস্ট অফিসের প্রতারণার শিকার হলো গ্রাহকরা

E Zero Point