বিশেষ প্রতিবেদনঃ
অমিত সাধুখাঁ, প্রাক্তনী, আঝাপুর হাই স্কুল
সহজ পাড়ায় কয়েকটা মাত্র ঘর। একদম শেষেরটা দিনুর মায়ের। মায়ের নামের দায়িত্ব দিনু নিলেও ওর মায়ের বেঁচে থাকার দায়িত্ব থেকে দিনু একরকম মুক্ত। অবিবাহিত মেয়েকে নিয়ে দিনুর মা একাই থাকে। ও পাড়ার পাঁচ পাঁচটা বাড়িতে বাসন মাজা, কাপড় কাচার কাজ বন্ধ। কল পারের মোড়ে যে সময় বলা ছিলো সেখানে তার আগে থেকেই গিয়ে হাজির ছিল দিনুর মা। সোজা হয়ে বেশিক্ষন হাঁটতে পারে না ও। ফেরার সময় রাস্তার পাশের বাঁশ তলায় বসে প্যাকেট খুলে একবার দেখে নিয়েছে কি কি আছে। ও শুধু জানে এটা আঝাপুর হাই ইস্কুল থেকে দিয়েছে। এর বেশি না। রাস্তা দিয়ে আসতে আসতে ঠিক করেছে আজ আর ভাত রাধবে না। গুড় দিয়ে চিড়ে ভিজিয়ে খেলে মনে হয় অমৃত। পা চালাতে থাকে দিনুর মা। ও পাড়ার দিনুর মা, এ পাড়ার শম্ভুর বৌ, সে পাড়ার খোঁড়া শম্ভুদের যতটা সম্ভব খুঁজে তাদের নিকটে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমারা।
দিনের শেষে উনারা সবাই হয়তো বুঝে উঠতেও পারছেন না যে আমরা আঝাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের সংগঠন। আমাদের উদ্দেশেও সেটা নয়। আমাদের লক্ষ্য কোন এক সুমন বাবুর পরিবারের কয়েকদিনের ‘ক্ষুধা’র দায়িত্ব নেওয়া। কিছুটা হলেও সেটা আমরা পারছি। পেরেছি, কারন আঝাপুর সংলগ্ন পঁচিশটা গ্রাম, যেখানকার মানুষ শিক্ষিত হয়েছেন আঝাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সেখানকার প্রায় ৫০০টি গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে পৌঁছে আমাদের সামান্য পরিমান খাদ্য দ্রবেই তাঁদের সীমাহীন তৃপ্তি ও আমাদের প্রতি সন্দেহাতীত ভালবাসা দেখতে পেয়েছি। সেদিন আঝাপুর হাই স্কুলের পুনর্মিলন কমিটির ফান্ডের টাকা তুলতে বাঙ্কে গিয়েছিলাম। ম্যানেজার বললেন, জানেন আমরাও চেয়েছিলাম আমাদের প্রাক্তনীদের কমিটিকে বাৎসরিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে। সেখানে আপনারা যা করছেন সেটা রীতিমত ঈর্ষার। এগুলো আমাদের গর্ব নয় ভালো কাজ করতে চাওয়ার অনুপ্রেরনা। আঝাপুর হাই স্কুলের পুনর্মিলন কমিটি সারা বছর রক্ত দান শিবির, স্বাস্থ্য শিবির করে থাকেন। তথাকথিত অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বর্তমান শতাব্দীর সবথেকে ভয়ানক সামাজিক বিপদের দিনে অসহায় মানুষের পাশে একটু দাঁড়াতে পারাটাই আমাদের কমিটির শ্রেষ্ঠ উৎসব বলে আমরা মন করি।