বিশেষ প্রতিবেদনঃ ‘স্বপ্নছায়া’ একটি সমাজ সেবামূলক সংস্থা, যেটি বরাবরই দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ছোট-বড়ো সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। এটি মূলত বর্ধমান ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের তথা সমাজের কল্যাণে ও বিভিন্ন অভাব-সংকট মোকাবিলায় ব্রত ও নিয়োজিত প্রাণ। এই সংস্থার সাথে যুক্ত ব্যাক্তিরা নিঃস্বার্থে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে সদা সচেষ্ট। সামগ্রিক ভাবে সমাজের হিতকার্যই তাদের চলার পথে মূল মন্ত্র।
এমনই দৃষ্টান্ত তাঁরা এই কঠিন ‘কোরোনা’ কালীন পরিস্থিতিতেও দেখিয়ে আসছে। লকডাউনের শুরু থেকেই সংস্থার সাথে যুক্ত প্রত্যেকেই নিজেদের উদ্যেগে নিজেদের সামর্থ্য মত ও তাঁদের পরিচিত ব্যক্তিবর্গ তথা বিভিন্ন জনহিতকর মানুষের থেকে সাহায্য নিয়ে বর্ধমান ও বর্ধমান সংলগ্ন গ্রামগুলোতে এখনও পর্যন্ত মোট প্রায় ১৮০০ পরিবারের খাবারের ব্যাবস্থা করেছে । এর পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের দাপটে ও তীব্র গরমের দাবদাহে যখন ব্লাডব্যাংকে রক্তের যোগানে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে অথবা কোন রোগীর রক্তের প্রয়োজন পড়ছে তখন এই সংস্থার ব্যাক্তিরা নিয়মিত রক্তদান করে এবং রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে কিছুটা রক্তের ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে চলেছেন।
লকডাউনের প্রাথমিক পর্যায়ে যেসমস্ত খেটে খাওয়া মানুষ তাঁদের কাজ হারিয়েছিলেন অথবা কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে বেরোতে পারেননি তখন তাঁদের কাছে খাবার নিয়ে ছুটে গেছিলো তাঁরা। খাবারের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, নুন, তেল, মশলা, আলু, সব্জি ও এর পাশাপাশি সাবান ও স্যানিটারি ন্যাপকিন ছিল এঁদের এক সম্পূর্ণ প্যাকেজ। এছাড়া যৌনকর্মীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে তাঁদের সন্তানদের খাবার যেমন দুধ, বিস্কুট ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। বর্তমানে প্রশাসনের পাশাপাশি ‘ স্বপ্নছায়া’ পরিবারও যেন মানুষের এক অন্যতম ভরসা হয়ে উঠছে।
এছাড়াও কিছুদিন আগেই এই সংস্থাটি মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে নিজেদের জমানো অর্থ থেকে ১০,০০১/- টাকা অনুদান দিয়েছে। একই সঙ্গে এই সংস্থা বর্ধমানের এস পি এবং হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালকদের হাতে তুলে দিয়েছে মোট ১০ টি PPE কিট। এর পাশাপাশি যে সমস্ত সংস্থা প্রতিদিন বিভিন্ন অসহায় ও পথের মানুষদের রান্না করে খাওয়াচ্ছেন তাঁদের হাতেও তাঁরা নিয়মিত খাবার তুলে দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।
অন্যদিকে অভুক্ত মানুষের পাশাপাশি পথের অভুক্ত কুকুরদের জন্যও যেনো এঁদের মন কেঁদে ওঠে। তাই তো তাদের জন্যও এঁদের দুয়ার খোলা। তাদের জন্যও পথে নেমে তাদের নিজেদের রান্না করে আনা খাবার খাওয়াচ্ছেন । এ
কই ভাবে যেসমস্ত পরিজায়ী শ্রমিকেরা দূর দূরান্ত থেকে হেঁটে বা সাইকেল করে বর্ধমানের উপর দিয়ে বাড়ি ফিরছেন ওঁনাদের জন্যও ছুটে গেছে তাঁরা তাঁদের সাধ্যমতো সাহায্য নিয়ে, ও কিছু খাবারের ব্যবস্থা করছেন সেই সমস্ত অসহায় মানুষের জন্য।
এর পাশাপাশি বর্ধমানে সরকারি কোয়ারেন্টিনে যে সমস্ত শ্রমিকেরা আটকে আছেন তাঁদের জন্য নিত্যদিনের ব্যবহৃত জিনিসের (সাবান, মাথার তেল, ব্রাশ, টুথপেষ্ট, রেজার ইত্যাদি) ব্যবস্থা করেছে এই সংস্থা। লকডাউনের সময় প্রয়োজনের তাগিদে যেসমস্ত মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছেন, তাদের থার্মাল গান ও পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে স্বাস্থপরীক্ষা করেছে এই সংস্থা।
সংস্থার সম্পাদক রানা শর্মা জানান, “সারা বছরই বিভিন্ন রকমের সমাজসেবামূলক কাজকর্ম করা হয়ে থাকে আমাদের এই সংস্থা থেকে, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো বৃক্ষরোপন কর্মসূচি। পুরো বর্ষাকাল জুড়েই এই কর্মসূচি পালন করা হয়ে থাকে।”
এইভাবে এই সংস্থা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের পাশে সর্বদাই দাঁড়ানোর চেষ্টা করে আসছে।