অমিত চট্টোপাধ্যায়, কৃষি বিজ্ঞানী
করোনা সংক্রমনে রক্তহীন হয়ে পরা ভারতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দেশের জন্য ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিস্তৃত বর্ণনাতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কৃষি এবং কৃষকদের জন্য ঘোষনা করলেন তিনদফা সংস্কারের এবং আট দফা সুবিধার প্যাকেজের কথা। আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে তৈরি করা এই পরিকল্পনায় একদিকে যেমন জোর দেওয়া হয়েছে কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নে অন্যদিকে কৃষি পণ্যের মজুতকে নিয়ন্ত্রনমুক্ত করা এবং বাজারকে কৃষকের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। সরকারের আশা মোট ১.৬ লক্ষ কোটির এই পদক্ষেপগুলিতে কৃষক এবং কৃষির দীর্ঘমেয়াদি এবং সার্বিক উন্নয়ন চোখে পড়বে।
পরিকাঠামো উন্নয়ন – এবারের প্যাকেজের সিংহভাগ টাকা (১ লক্ষ কোটি) খরচ করা হবে কৃষির পরিকাঠামো উন্নয়নে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দান নয় তাঁদের উদ্দেশ্য ক্ষমতায়ন। যেখানে প্রয়োজন সেখানে ত্রান, কৃষি সহায়ক শিল্পক্ষেত্রে নগদ যোগান ছাড়া বাকি টাকা খরচ করা হবে কোল্ড স্টোরেজ, ওয়ার-হাউসিং, ফসল সংরক্ষন কেন্দ্র ইত্যাদি পরিকাঠামো তৈরিতে। এতে কৃষক তার অবিকৃত ফসল ফেলে দেওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
ভেষজ উদ্ভিদের চাষ – ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে গঙ্গার দু’ধারের পাড়ের জমিতে ভেষজ উদ্ভিদের চাষের জন্য। আয়ুষ মন্ত্রকের জন্য প্রয়োজনীয় অষুধ ছাড়াও রপ্তানীযোগ্য মেডিসিনাল প্লান্টের চাষের ব্যবস্থা হবে এই টাকায়।
মৌমাছি পালন – চাষ থেকে উৎপন্ন প্রাকৃতিক মধুর স্বাস্থ্যগুণ প্রচুর। মধুর দেশিয় এবং রপ্তানীর বাজার – দুই বেশ ভালো। ফসল চাষের সঙ্গে সঙ্গে বাক্স বসিয়ে মৌমাছির চাষ করতে পারলে কৃষকের রোজগার বাড়বে। সেই লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরন – খাদ্য প্রক্রিয়াকরন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির উন্নয়নে ১০ হাজার কোটির প্রকল্প। কৃষি উৎপন্নের সঠিক প্রক্রিয়াকরন হলেই কৃষকের ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত হবে। সেই লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ। আরও বলা হয়েছে প্রক্রিয়াকরন শিল্পে মহিলা উদ্যোগপতিদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
মাছ চাষে নজর – মাছের চাষ এবং উৎপাদিত মাছ বিক্রি বাড়াতে ‘মৎস্য সম্পদ প্রকল্প’-এ ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরির কথা বলা হয়েছে প্যাকেজে।
প্রাণিপালনে দু দফা নজর – প্রথমতঃ দেশের সমস্তরকম গবাদিপশুর টিকাকরনের জন্য আসছে ‘জাতীয় গবাদি পশু রোগ নিয়ন্ত্রন প্রকল্প’ সম্পূর্ন সরকারি খরচে। গবাদিপশুর রোগব্যাধি কমানোর উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ। দ্বিতীয়তঃ দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরন শিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং তৈরির জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকল্পের নাম ‘পশুপালন উন্নয়ন তহবিল’।
হিমঘর ভাড়ায় ভর্তুকি – কৃষিপণ্য পরিবহন এবং হিমঘরে সরাসরি মজুতে যা খরচ হবে তার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে তার কিষান ক্রেডিট কার্ডের একাউন্টে ফেরত পাবেন কৃষকেরা। কৃষকের বিপননের খরচ কমাতে এমন উদ্যোগ।
সংস্কার ১ – মজুতদারির উর্ধসীমা নিয়ন্ত্রনহীন করা – কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৬৫ বছরের পুরোনো কৃষিপণ্য মজুতের উর্ধসীমা সংক্রান্ত আইন ‘এসেন্সিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট’ নিয়ন্ত্রনমুক্ত করার কথা ভেবে সংশোধন করার কথা ঘোষনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর সবটাই করা হবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরন শিল্পের কথা মাথায় রেখে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
সংস্কার ২ – কৃষিপণ্যের অবাধ বাণিজ্য – পণ্য বিক্রি এখন থেকে অবাধ হবে। স্থানীয় মান্ডি বা রাজ্য কোনো বাধা নয়। পণ্য বাণিজ্য করা যাবে রাজ্যের গন্ডি পেরিয়েও। কৃষককে তার উৎপাদন বিক্রির করার জন্য দেওয়া হবে অনলাইন প্লাটফর্মও। কৃষক তার ফসল বেচবেন দাম যাচাই করে সর্বোচ্চ মুনাফায়।
সংস্কার ৩ – আইনি রূপ পেতে চলেছে চুক্তি চাষ – কৃষক পেতে চলেছে বিজ্ঞান মেনে চলা নানান সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হবার সুযোগ। আর যা তাকে দেবে উন্নত ফসল চাষের এবং অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ।
তথ্য: পিআইবি