25/04/2024 : 2:01 PM
ট্রেন্ডিং নিউজ

অফবিটঃ সাংবাদিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা

পরাগ জ্যোতি ঘোষ

সাংবাদিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে লিখতে বসে প্রথমেই মনে পড়ে যাচ্ছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা ও জনসংযোগ বিভাগের অধ্যাপিকা মৌসুমী ভট্টাচার্যের কথা। প্রথম দিনেই তিনি প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকতা কাকে বলে। এ বিষয়ে আমাদের অনেকেই নানাভাবে উত্তর দিতে চেষ্টা করলাম। সব শোনার পর তিনি দুটো বাক্যে উত্তর দিলেন। যখন একটি কুকুর মানুষকে কামড়ায় তখন সেটা খবর নয়। কিন্তু মানুষ যদি কুকুরকে কামড়ায় তখন সেটা খবর। আবার কুকুর যদি কোন বিশেষ ব্যক্তি কে কামড়ায় তখনো সেটা খবর ।ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়েছিলাম কথাটা। এছাড়াও তিনি জানালেন হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে অনেক কথা। এবং আমাদের নিষেধ করেছিলেন কখনো নিজের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে যেন এর ফাঁদে না পড়ি। আমরা ছিলাম বিশ্বভারতীর সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম ব্যাচ। তখন ডিপ্লোমা ছিল। ছাপোষা বাড়ির ছেলে হয়ে এমন একটা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা নিয়ে বাড়ির লোকজন তেমন উৎসাহিত ছিলেন না। কিন্তু চিরকালের জেদি ছেলের জেদ কে প্রশ্রয় দেবার তাগিদেই হয়তো বাবা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু শিখেছিলাম মন দিয়ে । ভাঙাচোরা একটা দপ্তর তাকেও মন দিয়ে সাজিয়ে ছিলেন আমাদের শিক্ষক অধ্যাপক অধ্যাপিকা মৌসুমী ভট্টাচার্য , চন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, সত্য সাঁই, মাঝে মাঝে অতিথি অধ্যাপক অশোক দাশগুপ্ত বুড়োশিব দাশগুপ্ত উৎসাহিত করতে । বিভাগীয় সংবাদপত্র বিশ্বভারতী ক্রনিকেল লেখালেখি নিয়ে সময় বেশ ভালোই কাটতো। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম কিন্তু পারিবারিক বাধা-বিপত্তির ফলে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি। কিন্তু আমাদের সহপাঠীরা অনেকেই আজ সুপ্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন মিডিয়ায় ।যে বিষয়ে লেখা সেটা হল শিখেছিলাম অনেক কিছু আর কোনো শিক্ষাই ব্যর্থ হয় না । সেদিন একটা পকেট রেকর্ডার কেনার পয়সা ছিল না ।বান্ধবীর কাছে ধার নিয়ে ইন্টারভিউ নিতাম লোকের । একটা ক্যামেরা হয়নি সেটা অনেক সময় বন্ধুরা সাহায্য করত ।কিন্তু তাতেও লিখতাম বেশ ভালই লিখতাম। মৌসুমী ম্যাডাম আমায় ভাইয়ের মতন ভালোবাসতেন। আমায় নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। গ্রামের ছেলে বলে কখনো দূরে সরিয়ে দিতেন না। উপরন্তু সবার সামনে বলতেন লেখার হাত ওর ,খবর সেন্স সবার থেকে আলাদা। অথচ আজ যখন আবার ভালোবাসার টানে জিরো পয়েন্ট সংবাদ মাধ্যমে দায় বদ্ধ হলাম মনে পড়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। আমার স্বপ্নের মতো মনে ভেসে উঠছে। দীর্ঘ ১৮ বছর পর কলম ধরলাম । সত্যি বলছি কলম বিক্রি করব মনে করলে করতে পারতাম। হাউস পলিসি মেনে কাজ করা সম্ভব হয়নি। কালোকে কালো আর সাদা কে সাদা বলতে ভয় পেতাম না আমি। কিন্তু সেখানে অনেকেই বাদ সাধলেন। তখনতো সাফল্য সূত্র ভালো করে বুঝতাম না। আজ বুঝি ভালোই বুঝি। জীবনযুদ্ধে হাঁটতে হাঁটতে কখন শিখে গেছি জীবনের ভালো মন্দ, কিভাবে জীবনকে ভালবাসতে হয় সংসারের জন্য। কত বাচ্চা বাচ্চা ছেলে হলুদ সাংবাদিকতা করে দুনিয়া কাপাচ্ছে আর আমি পারলাম না। অবাক হই নিজের প্রতি নিজেই। তবে কি আমি নিজে ঠিক নই। তখনই মনে পড়ে যায় মৌসুমীদির সাবধান বাণী। ঠিক তাই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা একজন সাংবাদিকের মূল দায়বদ্ধতা । এমন কোনো খবর করা উচিত নয় সে যত রিয়েল হোক না কেন যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। কিন্তু আজ যখন দেখি অনেকেই এটা মানেন না তখন বড় কষ্ট হয়। আজ করো না নিয়ে অনেক সাংবাদিক দেখছি প্রশাসনকে অহেতুক দুযছেন। দিন আনা দিন খাওয়া তারা কিভাবে খাবেন। ঠাণ্ডা ঘরে বসে অনেক কথা লেখা যায় বাস্তবে কাজ করা বড় কঠিন । করো না থাকবে তাকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। মাসের শেষে মাস মাইনে একাউন্টে ঢুকে গেলে হয়তো বাইরে না বেরোলে চলে কিন্তু আজ বাদে দুদিন পর ওটা যদি অর্ধেক হয়ে যায় তখন চলবে তো ঘরে বসে। কষ্ট হচ্ছে না খুব শুনে । আমি এমনই ।তাহলে ভাবুন তো ওদের কথা ওদের কিভাবে চলছে। অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব মেনে ওরা চলে । কিন্তু আপনার কলমের আঁচড় ওদের রুজি-রুটিতে আচর কাটছে। তাই সাধু সাবধান ওদের বাঁচতে দিন করোনা কে সঙ্গে নিয়েই ক্রমশ।

Related posts

কলকাতা পুরসভার ১৩৮ টি আসন জিততে পারে তৃণমূলঃ সমীক্ষা

E Zero Point

ইউটিউব প্লেলিস্ট এ প্রচুর পরিমাণে ভিডিও ডাউনলোড করতে চান? কি করবেন জানুন বিস্তারিত

E Zero Point

করোনাকাল ও বাংলার রাজনীতি

E Zero Point

মতামত দিন