বিশেষ প্রতিবেদনঃ তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের করালগ্রাস থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করার নিমিত্তে ১৯৮৭ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে প্রতি বছরের একটি দিনকে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস হিষৈবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এবং তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সাল থেকে ৩১ মে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস প্রতি বছর আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়ে আসছে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- Protecting Youth From Industry Manipulation and Preventing Them From Tobacco and Nicotine Use অর্থাৎ তামাক কোম্পানির কূটচাল রুখে দাও, তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচাও।
জরিপ বলছে, সারা বিশ্বে তামাক ব্যবহারজনিত রোগ, পঙ্গুত্ব, অক্ষমতা ও মৃত্যুর কারণে ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ ১.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা কিনা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যেত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পৃথিবীর প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি ৩৭ লাখ বয়স্ক ধূমপায়ী বসবাস করে।
বিশ্বে যত ধোয়াবিহীন তামাক সেবন করে, তার ৮২ শতাংশ অর্থাৎ ৩ কোটি ১ লাখ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ৭.৩ যুবক আসক্ত।
তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য অসংক্রামক রোগের জন্য অন্যতম ঝুঁকি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতি বছর প্রায় ১৬ লাখ লোক মারা যায় শুধু তামাকের জন্য।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন এবং প্রায় ৯০ লাখ লোক তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তার মধ্যে ৮০ লাখ মারা যায় প্রত্যক্ষভাবে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণের ফলে।
আর ১০ লাখ মারা যায় ধুমপায়ীর পাশে থেকে অর্থাৎ পরোক্ষভাবে ধূমপানের ফলে।
তামাক ব্যবহারে ফুসফুস, ঠোঁট, জিহ্বা, মুখ গহ্বর, স্বরনালি, খাদ্যনালি, শ্বাসনালি, মূত্রথলি, কিডনি, জরায়ু, বৃহদন্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত, অগ্নাশয় এবং স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।
তামাক সেবনের ফলে করোনারি রোগ, স্ট্রোক ও হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ধূমপানের ফলে তামাকের বিষাক্ত পদার্থ সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে, বিধায় ফুসফুস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফুসফুসের ক্যান্সার ছাড়াও ধূমপানের ফলে ফুসফুসের আরও অনেক রোগ যেমন- ক্রনিক ব্রংকাইটিস, এমফাইসেমা ও অ্যাজমা হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টের কারণ।
গবেষণা বলছে, সিগারেটে প্রায় সাত হাজারেরও বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা বিভিন্ন রোগের সৃষ্টির কারণ। এর ৭০টি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টিতে সক্ষম। যেমন নিকোটিন, কার্বন মনোঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, বেনজোপাইরিন, ফরমালডিহাইড, অ্যামোনিয়া, পোলোনিয়াম ২১০-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
এদিকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে হাজির হয়েছে নভেল করোনাভাইরাস নামক একটি অদৃশ্য, সর্বগ্রাসী, মানুষখেকো শক্তি, যা সারা বিশ্ব মানবতাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
মাত্র ৫ মাসে সে পৃথিবীর ২১৪ দেশ ও অঞ্চলকে গ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে এবং এ পর্যন্ত ৬০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এ ভাইরাসে।
কোনো ওষুধ বা প্রতিষধক আবিষ্কার না হওয়ায় ৩ লাখ ৬২ হাজারের অধিক মানুষ ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে।
বাংলাদেশেও ব্যাপক আকারে এ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক মানুষ এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত এবং অনেকেরই জীবন বিপন্ন প্রায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যারা ধূমপান ও তামাক সেবন করেন তাদের কোভিড ১৯-এর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। ধূমপান বা তামাক সেবন ফুসফুস ও দেহের অঙ্গপ্রতঙ্গে ক্ষতি করে এবং কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ধূমপান এবং জর্দা, গুল ও সাদাপাতা ফুসফুস ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। যেহেতু তামাকপণ্য ফুসফুসের সংক্রমণ ও অসুস্থতা বাড়ায় এবং শরীররে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, যা করোনা সংক্রমণরে জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
কাজেই কোভিড-১৯ মোকাবেলার একমাত্র পথ হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। নিজের শরীর সুস্থ রাখা, বিশেষ করে ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছু সেবন করা থেকে বিরত থাকা।