নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমানঃ গত সোমবার আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের দরজা খুললো। মন্দির খুললেও সময় সূচীর কিছুটা বদল ঘটেছে। দর্শনের সময় সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা ও বৈকাল ৪টে থেকে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। মন্দিরে প্রবেশের জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে ভক্তদের। প্রথমে ভক্তদের হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হবে। প্রতিবার দশজন করে ভক্ত প্রবেশ করতে পারবেন একসঙ্গে । যদিও আপাতত ভোগ বিতরণ বন্ধ থাকবে। মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ জানান, বিপত্তারিনী পুজোয় মন্দির বন্ধ থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রী আগে ঘোষণা করেছিলেন জুনের এক তারিখ থেকে রাজ্যের সমস্ত ধর্মীয় স্থান খোলা যাবে। পরে রাজ্য সরকার বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। একসঙ্গে দশজনের বেশি মন্দির, মসজিদ, গীর্জা বা গুরুদুয়ারায় প্রবেশ নিষিদ্ধ। প্রবেশ পথে থাকবে হ্যাণ্ডস্যানিটাইজার।
প্রসঙ্গগত উল্লেখ্য প্রতিদিন ভোর থেকেই সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজোর আয়োজন শুরু হত। সকালের আলো প্রকাশ হতেই ভক্তের সমাগম ঘটত । এইটাই ছিল সর্বমঙ্গলা মন্দিরের রোজকার চেনা ছবি। কিন্তু গত আড়াই মাসে চিত্রটা পুরো বদলে গেছিল। মন্দিরের মেন গেট সহ তিনটে গেটেই তালা।
সর্বমঙ্গলা মন্দিরে এবার করোনা ভাইরাসের কোপে হালখাতার পুজো বন্ধ হয়েছে । গত ১৮ মার্চ থেকে অর্নিদিষ্ট কালের জন্য সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ভোগ বিতরণ, ভোগ খাওয়া ও ভোগ রান্না বন্ধ করে দেওয়া হয়। সর্বমঙ্গলা ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষ থেকে মন্দিরে ভোগ রান্না বন্ধ রাখার নির্দেশিকা মন্দিরের গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়।
দামোদর নদের ধারে বাহির সর্বমঙ্গলা অঞ্চলে বসবাস করা চুনুরীদের কাছ থেকে পাওয়া কষ্টিপাথরে অষ্টাদশ ভূজা এই দেবী মূর্তি বর্ধমান শহরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। ১৭৪০ সালে বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ সর্বমঙ্গলা মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির নির্মাণ করেন মহতাব চাঁদ।
এত বছরের ইতিহাসে এই ঐতিহ্যশালী মন্দিরের ভোগ রান্না বা বিতরণ কোন দিনই বন্ধ হয় নি। বন্ধ হয় নি মন্দিরের দরজাও। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ভোগ ঘরের রান্না বন্ধ হয়েছে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে।
এবছর নববর্ষের পুজোপাঠ বন্ধের পাশাপাশি, ব্যবসায়ীদের হালখাতার পুজোও বন্ধ হয়ে যায়। শুধু শহরের বাসিন্দারা নন। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে তো বটেই ভিন জেলার ভক্তরাও নতুন বছরের সকলে হাজির হতেন মন্দির প্রাঙ্গণে। দিনভর পুজোর পাশাপাশি দুপুরে হত ভোগ বিলি। কিন্তু এবার করোনার থাবায় সব কিছুই একলহমায় স্তব্ধ হয়ে গেছে। সর্বমঙ্গলা আর ভক্তদের মাঝে এতদিন বেড়া হয়ে দাঁড়িয়েছিল করোনা। এবার দরজা খুলে যাওয়ায় ভক্তরা খুশি।