জিরো পয়েন্ট নিউজ – সুব্রত মজুমদার, বর্ধমান, ২৬ অগাষ্ট, ২০২০:
পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহরের তেলমাড়ুই পাড়ার এক করোনা আক্রান্ত রোগীর কাগজপত্রে ভুল থাকায় রোগীকে ফিরিয়ে দিল কোভিড হাসপাতাল। আর ক্যামরি ও বর্ধমানের বর্ধমান হাসপাতালে কাগজ চালাচালির টানা পোরেনে মঙ্গলবার মৃত্যু হল ওই করোনা আক্রান্ত মহিলার। মৃতার ছেলে সাহিল খান বলেন, ‘‘সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কাগজপত্রের ফাঁসে আটকে কোভিড হাসপাতালে ভর্তিই করা গেলো না মাকে। অবহেলায় মা মারা গেল।’’ সঠিক কাগজপত্র তৈরি হওয়ার আগেই মারা গেলেন কোভিড পজিটিভ রোগী। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে তৈরি করা কাগজপত্রে ভুল ছিল। তাই কোভিড হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় রোগীকে। এমনটাই অভিযোগ মৃত রোগীর পরিবারের তরফ থেকে। সোমবার রাত দশটা নাগাদ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় শহরের তেলমাড়ুই পাড়ার বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলাকে। তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল তাঁর। তাঁকে জরুরি বিভাগে দেখানোর পর ‘নিউ সারি’ ওয়ার্ডে রাখা হয়। পরে তাঁকে ওল্ড সারি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। এরমধ্যেই তাঁর অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়। এই রিপোর্ট পজেটিভ আসায় তাঁকে বর্ধমানের দু’নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বামচান্দাইপুর কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয় এবং রাত দু’টোর সময় রোগীর পরিবারের হাতে কাগজপত্র দেওয়া হয়। অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে রাত তিনটের সময় ওই মহিলাকে কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যায় রোগীর পরিবার। কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কাগজপত্র পরীক্ষা না করেই জানানো হয় ‘এসআরএফআইডি’ না থাকায় রোগী ভর্তি করা যাবে না, এমনি অভিযোগ রোগীর পরিজনদের। তখন তাঁরা বাধ্য হয়ে ফের ভোর চারটে নাগাদ ওই রোগীকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফিরে আসেন। তারপরই বর্ধমান হাসপাতালে শুরু হয় এসআরএফআইডি যুক্ত কাগজপত্র তৈরি করার কাজ। ততক্ষণ রোগীকে রাখা হয় ওল্ড সারি ওয়ার্ডে। তবে কাগজপত্র তৈরি হাওয়ার আগেই বেলা ১২টা নাগাদ ওই মহিলা মারা যান। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর পরিজনরা। নিউ বিল্ডিংয়ের ওল্ড সারি ওয়ার্ডের চেয়ার টেবিল উল্টে দেন রোগীর পরিবার। বর্ধমান হাসপাতালের পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরিজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের গাফিলতিতেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কেন ঠিকঠাক কাগজপত্র দেওয়া হল না? মঙ্গলবার ভোরবেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন সঠিক আইডি দেওয়া কাগজপত্র তৈরি করা গেল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। মৃতার ছেলে সাহিল খান বলেন, ‘‘সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কাগজপত্রের ফাঁসে আটকে কোভিড হাসপাতালে ভর্তিই করা গেলো না মাকে। অবহেলায় মা মারা গেল।’’ মৃতার স্বামী ফিরোজ খান বলেন, ‘‘ভোরবেলা রোগীকে না ফিরিয়ে দিয়ে ভর্তি নিতে পারত কোভিড হাসপাতাল। কাগজতো সকালেও এনে দেওয়া যেত। ভোর চারটে থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত কেন তাঁদের হাতে আইডি দেওয়া হল না।’’