জিরো পয়েন্ট নিউজ – নূর আহামেদ, মেমারি, ২৮ অগাস্ট ২০২০:
দেশজুড়ে করোনার প্রকোপ এখনও কমেনি। লকডাউন, আনলক প্রক্রিয়াতে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যেমন বিপাকে ঠিক তেমনই দেশের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষন প্রক্রিয়া আজ নিম্নমুখী। বেশ কিছু রাজ্যে বেসরকারী স্কুলগুলি অনলাইনে ক্লাস চালু করে দিয়েছে কিন্তু সরকারী স্কুলগুলিতে এরকম কোন সুযোগ সুবিধা নেই। সর্বোপরি শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পশ্চিম বঙ্গের ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত মেমারি জামিয়া ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুম সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার আর অপেক্ষা না করে অনলাইন ক্লাস চালু করা হবে। জামিয়া ইসলামিয়া মদিনাতুল উলুম এর অধ্যক্ষ ক্বারী শামসুদ্দিন আহমাদ জানান যে, করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য লকডাউন পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকায় পঠনপাঠনও সম্পুর্ণ বন্ধ ছিল। গত ২৫ আগষ্ট একাডেমিক কাউন্সিল ও ম্যানেজমেন্ট সদস্যদের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পরিস্থিতি স্বাভাবিন না হওয়া পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস চালু করা হবে। যদিও নতুন কোন ছাত্র এবছর ভর্তি করা হবে না।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন তাদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর জামিয়া অফিসে নথিভুক্ত করে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যের ছাত্ররা থাকায় তাদের 9732315137 ও 7074729789 ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও তিনি জানান যে, অল বেঙ্গল বিফাকুল মাদারিস সংগঠনের ৬৮৪টি মাদ্রাসার বিভিন্ন জেলার এই প্রতিষ্ঠানগুলিকেও প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গগত উল্লেখ্য মেমারি জামিয়া ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক হাজারেরও বেশি ছাত্র পঞ্চম থেকে স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করে। আরবী ভাষাা, আলকুরআন, হাদীস, ফিকাহ, তাফসীরের পাশাপাশি পড়ানো হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিলেবাসও। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রদের ঐ সমস্ত বিষয়গুলির সঙ্গে আবশ্যিকভাবে পড়তে হয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সম্পূর্ণ সিলেবাস। উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরের ছাত্রদের ইংরেজি ভাষা ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বা স্নাতক হয়ে আসা ছাত্রদের জন্য আছে ছয় বছরে আলেম হওয়ার বিজ্ঞানসম্মত কোর্স। দৃষ্টিহীন ছাত্রদেরও বিভাগ আছে। তাদেরকে আলকুরআন, বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক শেখানো হয় ব্রেইল পদ্ধতিতে। আলকুরআনে হাফেজ ছাত্রদের জন্য বিজ্ঞান পড়ার এবং কলেজ ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার আকর্ষণীয় কোর্সও এখানে আছে। হাফেজ ছাত্ররা সরাসরি নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। পরের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে এখানেই পড়াশোনা করে। তারা ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে বা অন্য বিভাগে স্নাতক হয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে।
হাফেজ সিরাজুল ইসলাম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ এ গণিতে ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হয়ে বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছে। হাফেজ ইমতিয়াজ বৈদ্য মেমারি জামিয়া ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুম থেকে পড়ে আজ অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে।
রাজ্য তথা দেশের অনেকে মনে করে মাদ্রাসায় ধর্মীয়শিক্ষা ছাড়া আর কিছু শেখানো হয় না তাদের ভুল প্রমাণিত করে মেমারি জামিয়া ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুম ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষন পদ্ধতি ও ছাত্রছাত্রীদের ফলাফল ।