জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০:
যুক্তরাষ্ট্রে আর কিছুদিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় শিবিরই ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছে। তবে এবারের নির্বাচনে যে কয়েকটি ইস্যু উভয়পক্ষকেই ভোগাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম করোনাভাইরাস ও এর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকট থেকে বাঁচতে সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন নভেম্বর মাসেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও টিকার ট্রায়ালের হিসেবে নভেম্বরে টিকা বাজারে আনার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভোটের রাজনীতিতে জেতার জন্য জনস্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি করছেন, যা হিতে বিপরীত হতে পারে।
নভেম্বরের ৩ তারিখ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগেই ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে বাজারে টিকা আনতে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দুই টিকা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ফিজার ও মর্ডানা। তারা টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করে গত ২৭ জুলাই। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত সপ্তাহে জানান, টিকার ট্রায়ালের জন্য তাদের দরকার ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী, কিন্তু তাদের আছে ১৫ হাজার।
ফিজারের টিকার দুই ডোজ লাগে ২১ দিনে। আর মর্ডানার দুই ডোজ লাগে ২৮ দিনে। উভয় প্রতিষ্ঠানই এক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে টিকা উৎপাদনে। তবে তাদের এই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা টিকা কার্যকরী হয় কি-না তা এখনো প্রমাণিত নয়। প্রাথমিক পরীক্ষায় উভয় টিকাই রোগীর শরীরে ইমিউনিটি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু শুধু ইমিউনিটি তৈরিই করোনা সংক্রমণ রোধে কার্যকরী কিছু নয়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনঙ্কাও কয়েকটি দেশে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করেছে।
ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেককে টিকা ও অর্ধেককে প্লেসবো (ওষুধ) দেওয়া হচ্ছে। প্লেসবোর তুলনায় যদি টিকা গ্রহণকারীদের শরীরে সংক্রমণের হার কম ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত টিকার ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার কেমন হতে পারে সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো অন্ধকারেই আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ প্রশাসন (এফডিএ) প্রায়োগিক তথ্য যাচাই করে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য টিকা উৎপাদনের অনুমতি দিতে পারে জনসাধারণের শরীরে ব্যবহারের জন্য। এফডিএ’র টিকাবিষয়ক উপদেষ্টা পল অফিট বলেন, কিছু স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা মনিটরিং প্যানেল টিকার ট্রায়ালের ফলাফলের ওপর নজর রাখছেন। তাদের ওপরই নির্ভর করবে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের পর টিকা জনসাধারণের শরীরে দেওয়ার জন্য উৎপাদন করা যেতে পারে কি-না, কারণ এর সঙ্গে জননিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত।
অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে, তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের ফলাফল চলতি বছরের শেষের দিকে পাওয়া যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি গত মঙ্গলবার বলেন, টিকার ট্রায়ালের ফলাফল নভেম্বর অথবা ডিসেম্বর নাগাদ পাওয়া যেতে পারে। তার ওই বক্তব্যই পরিষ্কার করে যে, টিকা নির্ধারিত সময়ের আগে বের করা নিয়ে হোয়াইট হাউজের চাপ রয়েছে। যদিও হোয়াইট হাউজ এমন দাবি অস্বীকার করেছে। হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র কেইলিগ ম্যাকেন্নি এএফপিকে বলেন, এফডিএকে কেউ চাপ দিচ্ছে না। এখানে মানুষের জীবন রক্ষাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’ কিন্তু রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহের কনভেনশনে চলতি বছরের শেষের আরও আগেই টিকা বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। তারপরই সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষ থেকে রাজ্যগুলোকে টিকা বিতরণী ব্যবস্থা ঠিকঠাক করতে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।