17/04/2024 : 3:50 AM
আমার দেশ

নতুন সংসদ ভবন গণতন্ত্রের বিবর্তন তুলে ধরবে, প্রতিফলন ঘটাবে নাগরিকদের প্রত্যাশার

নতুন ভবন ১৩০ কোটি নাগরিকের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে উঠে আসবে। বিশ্বে অন্যতম বৃহত্তম এবং খ্যাতিমান গণতন্ত্র হিসেবে ভারতের স্থান সুদৃঢ় করবে।
    ভারতের সংসদ দেশের গণতান্ত্রিক মনোভাবের অত্যুজ্জ্বল প্রতিফলন। জাতীয় আইনসভা এবং যুক্তরাজ্যের সাংবিধানিক ভান্ডার হিসেবে এতে স্থান পান জনগণের প্রতিনিধিরা। আমাদের গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদের কেন্দ্রস্থলে বিরাজ করছে ভারতের মানুষের কাছে যা বিশ্বাসের মন্দির।
    ২০২২এ ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হবে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রশাসনের ক্ষেত্রে একটি মাইল ফলক। এই অনুষ্ঠান উদযাপন উপলক্ষ্যে দেশের ইতিহাসে এই প্রথম জনতার ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে। এই ভবন যা গড়ে উঠবে দেশের রাজধানীর বুকে, তুলে ধরবে ভারতীয় গণতন্ত্রের বিবর্তনকে যা রূপ পেয়েছে নাগরিকদের দ্বারা এবং প্রতিফলন ঘটাবে নতুন ভারতের প্রত্যাশার।
    দেশের গণতন্ত্রের মূল সেই প্রাচীনকালে প্রোথিত। তবে সুলতান এবং মোঘল আমলের ৬০০টি বছর ছিল পিছিয়ে পড়ার সময়। স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে গণতান্ত্রিক আদর্শকে সুসংহত করে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু করে তোলাই ছিল জাতীয় নেতৃত্বের লক্ষ্যে। ঔপনিবেশিক যুগে যে সংসদ ভবন গড়ে তোলা হয়েছিল তা এই উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
    ভারতের জন্য নতুন সংসদ ভবনের প্রশ্নটি ব্রিটিশ সংসদে প্রথম উঠেছিল ১৯১২ সালে- দিল্লীর কোথায় এই ভবন করা যায় সেই নিয়ে অনুসন্ধান চলে। গভর্নর জেনারেলের সরকারি আবাসনে একটি অংশ হিসেবে প্রথমে ভাবা হয়েছিল। তবে ১৯১৯এর ভারত সরকার আইন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ  গড়ার অনুমোদন দেয়। এরফলেই প্রয়োজন দেখা দেয় একটি ভবনের যেখানে ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলকে স্থান দেওয়া হবে। ১৯২৭এ কমপ্লেক্সটির উদ্বোধন হয়। ৩টি হল ছিল। চেম্বার অফ প্রিন্সেস, স্টেট কাউন্সিল এবং লাইব্রেরি হল হিসেবে পরিচিত লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এগুলি রাজ্যসভা এবং লোকসভা হিসেবে পরিচিত হয়। স্থানাভাবের কারণে ১৯৫৬ সালে আরও দুটি তলা নির্মিত হয়।
    বর্তমান সংসদ ভবনটি ঔপনিবেশিক যুগের সাক্ষ্য বহন করছে যেখান থেকে ভারত ৭ দশকেরও বেশি সময় ধরে অগ্রসর হয়েছে সফল নাগরিক কেন্দ্রিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে। নাগরিকদের প্রত্যাশা মতো নতুন জনতার সংসদভবন গঠনের পরিকল্পনা আমাদের মূল্যবান ইতিহাসে এই প্রথম। নতুন সংসদ ভবনটি জনগণ চালিত, জনগণের এবং জনগণের জন্য ভারতীয় গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক উদ্যোগ  এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরবে।
    ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর অনেক গণতন্ত্রেই এমন ধরনের রূপান্তরকারী উদ্যোগ যে নেওয়া হয়েছে তার উদাহরণ আছে ইতিহাসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল বিল্ডিং দেশের স্বাধীনতার পাওয়ার ২৫ বছরের মধ্যে তৈরি করা হয়। ১৮০০ সালে সেখানেই হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন। ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান সংসদ ভবনটি ১৯৮৮ সালে উদঘাটিত হয়। এটি অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে গর্বের বস্তু এবং পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। ব্রাজিলে স্বাধীনতার প্রায় ৭০ বছর পরে ১৯৬০ সালে ন্যাশনাল কংগ্রেস বিল্ডিং নির্মিত হয়। এই প্রকল্পগুলি ইতিহাসে গুরু্ত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে এবং বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের অন্যতম তিনটির রূপান্তর চিহ্নিত করছে।
    এটি ধরে নেওয়া যায় যে সব প্রজন্মের ভারতীয় আমাদের নিজস্ব সংসদ ভবন গড়ার কাজে এগিয়ে এসে অবদান রাখবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে জাতীয় গর্ব হিসেবে। অত্যাধুনিক এই ভবনটি হবে দেশের অগ্রগতির চিহ্ন। নতুন ভারতের উপযোগী হয়ে উঠবে এই ভবন।
    নিউ ইন্ডিয়া@৭৫ দর্শনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ২০২২এ ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন হবে এই ভবনের শীতকালীন অধিবেশনে। সংসদ চত্ত্বরে বর্তমান সংসদ ভবনের সঙ্গে এই নতুন ত্রিকোণাকার ভবনটি মিলে তৈরি হবে আইনসভা পরিচালনার সুষ্ঠু, দক্ষ, কার্যকরী ব্যবস্থা। ভবনের নকশা এবং অভ্যন্তরীণ সজ্জায় ধরা থাকবে ভারতীয় মূল্যবোধ এবং আমাদের আঞ্চলিক শিল্প, হস্তশিল্প, বস্ত্রশিল্প, স্থাপত্য এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য।
    নতুন ভবনটি হবে অত্যাধুনিক কাঠামোর। আলোর ব্যবস্থা হবে পরিবেশ বান্ধব, সকলের জন্য প্রবেশযোগ্য এবং এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যে বর্তমান ভবনের লোকসভার আয়তনের তিন গুণ। লোকসভা এবং রাজ্যসভা হলগুলিতে থাকবে উচ্চমানের ধ্বনি ব্যবস্থা এবং অডিও ভিস্যুয়াল সুবিধা, উন্নত স্বচ্ছন্দ বসার ব্যবস্থা এবং জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত বেরনোর ব্যবস্থা এবং সদস্যদের জন্য উচ্চস্তরের নিরাপত্তা। এই ভবনের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে তার সহজে দেখভালও করা যায়।
    ২০২৪এর মধ্যে প্রত্যেক সাংসদের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করা হবে। বর্তমান এবং নতুন ভবনের মধ্যে সহজে যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকবে। সাংসদদের ঘর, সংসদ সংলগ্ন ভবন এবং গ্রন্থাগার ভবন মিলে তৈরি হবে একটি আইনসভা প্রাঙ্গণ যা গণতন্ত্রের আধুনিক নিদর্শন হয়ে উঠবে। নতুন ভারতের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি সংরক্ষণ করবে আমাদের নিদর্শনমূলক ঐতিহ্যের।
    এই রকম বৃহদাকারের সরকারি কাজ প্রমাণ করে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা। বিশ্বের ইতিহাসে অনেক উদাহরণ আছে যে সরকারি পরিকাঠামো প্রকল্প দুঃসময়ে অর্থনীতির পুনর্জাগরণ ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জাপানের টোকিও টাওয়ার নির্মাণের কাজে হাজার হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছিল, জাতীয়তা বোধ বপন করেছিল এবং জাপানের অর্থনীতির পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘নিউ ডিল’ গড়ে উঠেছিল ৩৪ হাজারের বেশি সরকারি কাজে যার মূল্য ৩ বিলিয়ন ডলার গভীর সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পেতে।
    ভারত ২০২৪এর মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হয়ে উঠতে চায় যা ২০৩০এর মধ্যে হবে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার। নতুন সংসদ ভবন এবং রাজধানীর মনোরম কেন্দ্রে থাকা কাঠামোর উন্নয়ন, পুনরুন্নয়ন কাজ করবে জাতীয় সংহতির প্রকল্প হিসেবে। নাগরিকদের মধ্যে বপন করবে জাতীয় গর্বের ভাবনা এবং নিশ্চিত করবে নতুন ভারতের প্রত্যাশা মেটানোর জাতীয় লক্ষ্যে প্রতিটি মানুষের অবদানকে। নতুন ভবন হয়ে উঠবে একটি প্রতিষ্ঠান যা তৈরি করেছে ১৩০ কোটি নাগরিক। বিশ্বে অন্যতম বৃহত্তম ও সুখ্যাত গণতন্ত্র হিসেবে ভারতের স্থান সুদৃঢ় করবে।

‘মানুষের সংসদ’
লেখক- ভারত সরকারের আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব

Related posts

আপনি কি জানেন মাস্টারদা সূর্য সেনের শেষ বার্তা কি ছিল?

E Zero Point

৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবসঃ কিন্ত প্রশ্ন একটাই – গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভ কেন ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে?

E Zero Point

আপনি কি ইনভার্টার ব্যবহার করেন? নতুন প্রযুক্তির লিওন সিরিজের ইনভার্টার এলো বাজারে

E Zero Point

মতামত দিন