28/03/2024 : 1:41 PM
জীবন শৈলীধর্ম -আধ্যাত্মিকতা

ক্রিসমাস ঘিরে ভুল ভাবনার ভিড়ে সত্যিটা কী?


সাহিত্যিক অজয় কুমার দে , মুর্শিদাবাদ

পৃথিবী সত্যি আজব। এ পৃথিবীর প্রতিটি পরতে ছড়িয়ে আছে বৈচিত্র্য। আর এ কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু তার জৌলুশ হারিয়ে পুরোনো রূপ লাভ করলেও পৃথিবী কখনো পুরোনো হয় না। তবে মানুষ কল্পনা জল্পনায় নিমেষে হারিয়ে যায় বিশ্বজগৎ ছাড়িয়ে ।

প্রাসঙ্গিক ভাবে বলতে গেলে বড়দিন নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা আমাদের মনে । অতয়েব ওঠে প্রশ্ন তাহলে কি মিথ্যা ?

যদি বলি হ্যাঁ আপনার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল আসল সত্য হলো যে মাতা মেরীর কোল আলো করে জন্ম নেন ছোট্ট যীশু। তাঁর এমন কিছু অলৌকিক ক্ষমতার সাক্ষী ছিল যে ইহুদীরা তাঁকে ‘রাজা’ মানত। আর তাতেই ঘটল বিপত্তি। রাজা পিলাতের রাজদরবারে অন্যায়ভাবে ধরে এনে অপমান করা হয় তাঁকে। রাজা পিলাত প্রথমে চাবুক মারার আদেশ। পরবর্তীতে ক্রুশে দেবার আদেশ দিলেন। অবশেষে রোমীয়রা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে। এই কাহিনী অল্প বিস্তর সবার জানা। কিন্তু আজ কিছু অজানা তথ্যের হদিশ দিতে চলেছি যার ফলে আপনি নিজেই বুঝতে সক্ষম হবেন সত্যিটা কি?

জ্ঞানে-অজ্ঞানে এই ক্রিসমাস নিয়ে বেশকিছু ভুল তথ্য আমরা নিজেদের মতো করে ভেবে নিয়েছি। সেই ভুলগুলো চলুন সংশোধন করে নেওয়া যাক।


প্রথমত :


‘এক্স’ অর্থ যীশু খ্রিষ্ট:- বর্তমান যুগের শুভেচ্ছাবার্তাটা ম্যাসেঞ্জার কিংবা হোয়াটস্যাপেই বদ্ধ। তাই বড়দিনে ‘Merry Xmas’ দিয়েই চলে শুভেচ্ছা প্রেরণ। কিন্তু এই ‘X’ এল কোত্থেকে? অনেকে এটাকে ক্রুশের ‘ক্রশ’ চিহ্ন বলে মনে করেন। কিন্তু বাস্তব একেবারে ভিন্ন। ‘ক্রিসমাস’ শব্দটিকে গ্রীসে ডাকা হয় ‘christos’ নামে। যার বানানটা শুরু হয়, ‘x’ মতন দেখতে একটি অক্ষর দিয়ে। আর সেখান থেকেই ছোট করে ক্রিসমাসের বানান হয়ে গিয়েছে ‘Xmas’।

দ্বিতীয়ত


বড়দিন আর খ্রিস্টান ধর্ম একসঙ্গে ছড়িয়েছে পৃথিবীতে:-
পৃথিবীতে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তন থেকেই বড়দিন পালন করার রেওয়াজ। এই ধারণাও ভুল। যিশুখ্রিস্টের জন্ম উদযাপনের অনেক আগে থেকেই খ্রিস্টধর্ম পৃথিবীতে এসেছিল। এ ব্যাপারে রোমান অনেক লেখকের পুঁথি রয়েছে। জন্মদিনকে পালন করার থেকে তখন মৃত্যু নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন সবাই। তাই বড়দিনের আগে উদযাপিত হয় ‘ইস্টার সানডে’ এবং ‘গুড ফ্রাইডে’। ২০০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে যীশুর জন্ম হয়। তাই চতুর্থ শতকের মাঝে এসে ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে পালন শুরু হয়। আর ১৭ শতক আসতে আসতে ব্যাপারটি বর্তমান জনপ্রিয়তায় এসে পৌঁছায়।


তৃতীয়ত


বড়দিন পালন হয় প্যাগান উৎসবের কথা মাথায় রেখে পালিত হয়:

– অনেকেই ভাবেন, প্যাগান ধর্মাবলম্বীরা উৎসবে অংশ নিতে পারে সে কথা ভেবেই বড়দিন পালিত হয় ২৫ ডিসেম্বর। ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। একটা সময় প্যাগান সংস্কৃতির কিছু অংশ খ্রিস্ট ধর্মের মধ্যে চলে আসে। তবে সেটা ১২ শতকের আগে নয়। তাহলে ২৫ ডিসেম্বরে কেন বড়দিন পালিত হয়? রোমান দিনপঞ্জিকা অনুসারে, ২৫ মার্চ যিশু গর্ভে আসেন এবং ২৫শে মার্চেই তিনি ক্রুশবিদ্ধ হন। আর ঠিক তার নয় মাস পরেই আসে ২৫ ডিসেম্বর। তাই ওটাই একমাত্র কারণ বড়দিন পালনের।

চতুর্থ-


তিনজন জ্ঞানী মানুষ নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে:-
বড়দিনের একটি বিশেষত্ব হলো থ্রি ওয়াইজ ম্যান বা তিনজন জ্ঞানী মানুষ। এরা নাকি আকাশের তারাকে অনুসরণ করে বেথেলহামে যান যীশু খ্রিষ্টের খোঁজে। বাইবেলে বলা না হলেও ম্যাথিউ (২:১-১২) তে এ ব্যাপারে কিছু কথা বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, “যে কিংবা যারা খোঁজ নিয়ে যিশুর সাথে দেখা করতে যান”, মায়ের সাথে শিশু যিশুকে দেখে তাকে স্বর্ণ, ধূপ এবং গন্ধরস দেন। এখানে কিন্তু তিনি তিনজন জ্ঞানী মানুষের কথা কিংবা তাদের রাজাকে কিছু জিজ্ঞেস করে উটের পিঠে চড়ে আসার কথা বলেননি।

পঞ্চমত –


বড়দিনে নাকি প্রচুর গাছ কাটা হয়:-
ক্রিসমাস মানেই সুসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি। মূলত দুভাবে এই গাছের জোগান হয়। আস্ত গাছ কেটে অথবা বাজারের কৃত্রিম গাছ কিনে। আস্ত গাছ কাটলেই অনেকে বলেন পরিবেশের ক্ষতিসাধন। তা কিন্তু একেবারেই নয়। বড়দিনে যে আসল গাছগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো কিন্তু বন থেকে কেটে আনা নয়। বড়দিন উপলক্ষেই কয়েক মাস আগে সেগুলো লাগানো হয়। যাতে করে বড়দিনে ব্যবহার করা যায়। সেগুলো পরিবেশের গড় ভালো থাকা কিংবা খারাপ থাকায় তেমন একটা প্রভাব রাখে না। নকল গাছ যারা ব্যবহার করেন তাদেরও একটা কথা মনে রাখা দরকার। বড়দিন উপলক্ষ্যে একটি গাছ কিনে, সেটাকেই নষ্ট না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ব্যবহার উচিৎ। প্রতি বছর এর পেছনে খরচ করার কোনো মানে হয় না।

ষষ্ঠত –


যীশুর জন্ম দৃশ্য:-
যে কোনও চার্চে গেলেই দেখা যায় যীশুর জন্মের সেই পবিত্র সময়ের নানা চিত্র। যেখানে দেবদূত, জ্ঞানী মানুষ, রাখাল এবং আরো অনেকের মাঝখানে আলো করে থাকেন যিশু খ্রিস্ট। তবে বাস্তবে এমন কিছুর কোনো প্রমাণ কিন্তু পাওয়া যায় না। ম্যাথিউ বলেছেন জ্ঞানী মানুষের কথা। আর অন্যদিকে লুক বলেছেন রাখালের কথা। সেইসাথে ভেড়া আর দেবদূতেরা তো ছিলেনই। তবে মজার ব্যাপার হলো, লুক এবং ম্যাথিউ- দুজনের বর্ণনায় আলাদা আলাদাভাবে দেখতে পাওয়া গিয়েছে এদেরকে। জন্ম দৃশ্য নিয়ে যারা কাজ করেছেন, সেখানে পাওয়া গিয়েছে ষাঁড় ও গাধাকে। যাদের কথা বাইবেলে কখনো বলাও হয়নি।

সপ্তমত –


সান্তা আসেন বলগা হরিণে চড়ে:-
বলা হয় সান্তা ক্লজ চরিত্রটি এসেছে মূলত সেন্ট নিকোলাস থেকে। আসলে এই বলগা হরিণের পুরো ব্যাপারটাই এসেছে সাইবেরিয়ার জাদুর মাশরুম বা আমানিতা মুসকারিয়া থেকে। এই মাশরুমটি খেলে বেশ একটা তন্দ্রাভাব কাজ করে মানুষের মধ্যে। তাই দৃষ্টিভ্রমও হয়। ফলে সে সময় আশেপাশে দেখা বলগা হরিণকেই আকাশে উড়তে দেখতো তারা। কল্পনা করতো বড়দিনের সময় সান্তা এমন হরিণে করে এসেই সব উপহার দিয়ে গিয়েছেন।

 অষ্টমত-


সারা পৃথিবীতেই বড়দিনের ছুটি পালিত হয়:-
বাস্তবতা হলো বড়দিন হচ্ছে যীশুর জন্মদিন – যিনি খ্রিস্টানদের নবী।ইহুদি, হিন্দু বা মুসলিমদের জন্য এটা কোন ছুটির দিন নয়।
অন্যভাবে বলতে গেলে যেমন মুসলিম বিশ্বে পরিবারের সদস্যরা একসাথে হন ঈদের দিন, বড়দিনে নয়। এই পার্থক্যটুকু উপলব্ধি করা জরুরি, তবে মধ্যে যে মিলও আছে তা-ও জানা গুরুত্বপূর্ণ।সুতরাং বিশ্বের অনেক দেশ আছে যেখানে বড়োদিন পালিত হয়না।

নবমত :


মুসলিমরা কেও বড়দিন পালন করেন না বা যীশুকে সন্মান দেন না :-

পশ্চিম বিশ্বের খ্রিস্টানরা অবাক হতে পারেন তা হলো – ইসলাম যীশুর জন্মদিন পালন না করলেও – তাকে সম্মান করেন।
মুসলমানরা তাদের ধর্ম বিশ্বাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে খ্রিস্টানদের যীশুকে গভীরভাবে সম্মান করেন।
নবী মোহাম্মদের আগে অবতীর্ণদের মধ্যে যীশুকে সবচেয়ে সম্মানিতদের অন্যতম বলে স্থান দিয়েছে কোরান।
সত্যি কথা হলো, কোরানে অসংখ্যবার উল্লিখিত হয়েছে যীশুর (যাকে আরবিতে বলা হয় ঈসা) নাম, নবী মোহাম্মদের নামের চেয়েও বেশিবার।

দশমত


– বাঙলির বিশ্বাস বড়দিনে কেক খেলে রোগ কম হয় বা পূর্ণ হয় :-
সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এই মত ধারণার কোনো অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না।

(বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগৃহীত)

Related posts

শ্রীমৎ কেদারনাথ দত্ত ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের স্বলিখিত জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ

E Zero Point

জেনে নিন বৃহস্পতিবারের রাশিফল

E Zero Point

রান্নাঘরঃ সরষে পাবদা

E Zero Point

মতামত দিন