25/04/2024 : 8:22 PM
জীবন শৈলীধর্ম -আধ্যাত্মিকতা

কল্পতরু উৎসবঃ ‘‌তোমাদের চৈতন্য হোক’

জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, ১ জানুয়ারি, ২০২১:


আজ কল্পতরু উৎসব। ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম কল্পতরু উৎসবের দিনটি রামকৃষ্ণ পরমহংস ও তাঁর অনুগামীদের জীবনে ছিল এক “অভূতপূর্ব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।” রামকৃষ্ণ পরমহংস সেই সময় দুরারোগ্য গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থারও যথেষ্ট অবনতি ঘটেছিল। উত্তর কলকাতার কাশীপুরঅঞ্চলের একটি বাগানবাড়িতে চিকিৎসার সুবিধার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ১ জানুয়ারি একটু সুস্থ বোধ করায় তিনি বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর অনুগামী নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষকে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার কি মনে হয়, আমি কে?” গিরিশচন্দ্র বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে রামকৃষ্ণ পরমহংস “মানবকল্যাণের জন্য মর্ত্যে অবতীর্ণ ঈশ্বরের অবতার।” রামকৃষ্ণ পরমহংস বলে, “আমি আর কি বলব? তোমাদের চৈতন্য হোক।” এরপর তিনি সমাধিস্থ হয়ে তাঁর প্রত্যেক শিষ্যকে স্পর্শ করেন। রামকৃষ্ণ-অনুগামীদের মতে, তাঁর স্পর্শে সেদিন প্রত্যেকের অদ্ভুত কিছু আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছিল।

এই ঘটনা যখন ঘটেছিল, তখন ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসকের চরম শোষণের শিকার। এক দিকে পিছিয়ে পড়া মানুষদের অবহেলা, অবজ্ঞা, শোষণ আর অত্যাচার যেমন দীনদরিদ্র সাধারণ মানুষকে কোণঠাসা করে রেখেছে, অন্য দিকে তেমনি প্রজ্ঞাহীন পুরোহিত সম্প্রদায় পরগাছার মতো ধর্মের রক্ষক হয়ে দাপটের সঙ্গে নারীদের শৃঙ্খলিত করে সমাজের সুবিধা, শিক্ষা থেকে তাদের বঞ্চিত করে, ধর্মের ধ্বজা ওড়াচ্ছে। আর উচ্চবর্ণ অথবা শিক্ষিত সম্প্রদায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্তাবকতা করে উপাধি জোগাড় করছে আর ধনী হচ্ছে। ইংরাজি শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজের দৃষ্টিতে তখন ত্যাগের অর্থ অজ্ঞতা, ঈশ্বর কল্পনা মাত্র, আর সন্ন্যাস মূর্খতার নামান্তর!‌

শ্রী রামকৃষ্ণ এক অসাধারণ নজিরবিহীন জীবন যাপন করে গেলেন। বাইরের আচার আচরণে তিনি ছিলেন সহজ সরল এক গ্রাম্য মানুষ আর অন্তরে এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব। আধ্যাত্মিক জগতের তিনি এক মহান বিপ্লবী। ‘চাল কলা বাঁধা বিদ্যে’‌ শিখবেন না বলে পাঠশালায় যোগ অবধি শিখে তিনি পড়া ছেড়ে দিলেন, কারণ বিয়োগ কথাটি তাঁর কাছে দুর্বিষহ। তা ছাড়া পুঁথিগত বিদ্যায় তাঁর একান্ত অনীহা। সাধন প্রক্রিয়ায় ঈশ্বরের দর্শন লাভের পর হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ধারায় আর অন্যান্য ধর্মের সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে উচ্চস্বরে ঘোষণা করলেন ‘‌যত মত তত পথ’‌। পরবর্তী কালে তাঁর মন্ত্র ‘‌জীব সেবায় শিব সেবা’‌ যুগধর্ম রূপে সারা বিশ্বে প্রচার করলেন তাঁর প্রিয় শিষ্য নরেন্দ্রনাথ। নারীকে জগৎসভায় উচ্চাসনে বসিয়ে স্ত্রী সারদাকে গুরুরূপে বরণ করলেন আর, জীবন সায়াহ্নে তাঁর অব্রাহ্মণ শিষ্যদের গৈরিক বসন দিয়ে সন্ন্যাসের অধিকার দিলেন।


জীবনের প্রথম পর্বে শ্রী রামকৃষ্ণ আকুতি আর আর্তির সঙ্গে ঈশ্বরের জন্যে কেঁদে ছিলেন। আর দ্বিতীয় পর্বে কেঁদেছিলেন মানুষের জন্যে। ঈশ্বরবিমুখ মানুষকে ঈশ্বরমুখী করা ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তিনি বলতেন, ‘‌সর্বভূতে তিনি আছেন। তবে মানুষের মধ্যে তাঁর প্রকাশ বেশি।’‌ বলতেন, ‘‌মানুষ কি কম গা!‌ মানুষ ঈশ্বরকে চিন্তা করতে পারে।’‌ দিগভ্রান্ত মানুষকে বললেন, ঈশ্বর দর্শনই মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য। মানুষ স্বরূপতঃ ঈশ্বর। জগতে মানুষের সুপ্ত চেতনাকে জাগ্রত করতেই সকলকে আশীর্বাদ করে তাই বললেন, তোমাদের চৈতন্য হোক। যাতে মানুষ উপলব্ধি করে ‘‌চিদানন্দ রূপোহম শিবোহম শিবোহম’‌। আমিই চিৎ আনন্দের আধার, আমিই সত্য সুন্দর শিব।

রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতম শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, সেই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কল্পতরুতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনিই এই দিনটিকে কল্পতরু দিবস নাম দিয়েছিলেন, যা পরে কল্পতরু উৎসব নামে পরিণত হয়েছিল।

অর্থ নয়, নাম নয়, যশ নয়, প্রতিপত্তি নয়, ঠাকুর সে দিন চৈতন্য বিতরণ করেছিলেন। তিনি সে দিন কল্পতরু হয়েছিলেন আমাদের অন্তরস্থিত চেতনার উন্মীলনের জন্য।


তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

 

Related posts

‘কোভিড পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্য’ -শান্ত থাকুন, অযথা আতঙ্কিত হবেন না

E Zero Point

জেনে নিন শনিবারের রাশিফল

E Zero Point

গঙ্গাসাগর মেলা ২০২১ – মেলা থেকে বেলাতটে

E Zero Point

মতামত দিন