02/05/2024 : 4:09 PM
আমার বাংলাদক্ষিণ বঙ্গপূর্ব বর্ধমান

পূর্ব বর্ধমানের কলানবগ্ৰামে সংগ্ৰহশালার বোধায়ন

রিয়া খাতুন


জিরো পয়েন্ট বিশেষ প্রতিবেদন

ছোট টবে খুব ছোট চারাগাছ জন্মায়।‌ আর বড় টবে অনেকটা বড় এবং সুন্দর ফুলের বংশবিস্তারে এক সুন্দর মল্লিকা বাগান তৈরি হয়। তবে অনেক সময় ছোট টবগুলোতে এমন কিছু ফুল হয় যা সকলকে অদ্ভূতভাবেই থমকে দেয়, চোখদুটোকে স্থির করায়। ঠিক তেমনই একটা জায়গা হল পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্তর্গত ‘কলানবগ্ৰাম।’ শহরের হাতছানিকে তোয়াক্কা না করে নিজস্ব সংস্কৃতিকে মুষ্টিবদ্ধ করে সাহিত্যের মহাপীঠস্থান করে তুলেছেন। প্রধানতঃ ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষতা, কুশীলব, আগ্ৰহ যেন স্থানটাকে বিশেষিত করে সর্বদা। প্রভাতের স্নিগ্ধ শোভন, জীবনানুরণনের রক্তিম অনুপম গোধূলি যেখানে বিধুর করে।


স্বাধীনতার পূর্ববতী ১৯৩০ সালে সংগ্ৰহশালা স্থাপিত হয়; তিনজন বিপ্লবী বা দেশপ্রেমিকের হাত ধরে। ‘বিজয় কুমার ভট্টাচার্য্য,’ (বর্ধমান, খন্ডঘোষ) ‘উপেন্দ্রনাথ দাস,’ ‘জ্যোতিষচন্দ্র রায়’ (দক্ষিন চব্বিশ পরগনা)। পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালে তা রেজিস্ট্রেশন পায়। তৎপরবর্তীতে এখনও পর্যন্ত তার সংস্করণ হয়েছে। কলানবগ্ৰামের শিক্ষার বাড়ি ‘শিক্ষানিকেতন’ নামক স্বেচ্ছাসেবী বিদ্যালয়; যেখানে গরীব-দুঃস্থরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছত্রছায়ায় শিক্ষার বীজ বপন করে।

শিক্ষার পাশাপাশি ছড়িয়েছে সাহিত্য, সংগ্ৰহশালার গন্ধ। কিছু দুর্লভ জিনিস আজীবন কলানবগ্ৰামকে বিশেষিত করে রাখবে—-
“গ্ৰামে উৎপাদিত ৩৩প্রকার অ্যারোমা রাইস(কাটারীভোগ, কনকচু, মৃগী, বানসহা, বাঁকচুড়, চিংড়ী, পান-তারা, কলমা, বালাম, ঝিঙেশাল, রামশাল, দলার আউশ) সার(তারা মার্কা, ফসফেট অফলাইন) বিভিন্ন প্রকার বেতের তৈরি জিনিসপত্র, পাটের তন্তু থেকে তৈরি নানান সুতো ছাড়াও প্রথম উল্কাপিন্ডের ক্ষুদ্রাংশ রয়েছে। বেলে পাথর- চুনা পাথর এমনকি ভিন্ন ভিন্ন মাটিরও জোগান ঐ সংগ্ৰহশালা। আশ্চর্যকর এবং অনন্য দৃষ্টি আকর্ষণকারীর মধ্যে হল ষড়পদ বিশিষ্ট ছাগল। (ছাগলটি জন্মানোর কিছু সময় পর তার মৃত্যু ঘটে আর তা পাত্রের মধ্যে কেমিক্যালের মাধ্যমে রাখা হয়েছে।)” এইসব কিছু সংরক্ষিত হয়েছে ‘যতীন্দ্রমোহন গ্ৰন্থাগার’-এ।

এককথায়, ‘শিক্ষানিকেতন’ এবং ‘যতীন্দ্রমোহন গ্ৰন্থাগার’ মনি হয়ে যেন গোটা গ্ৰামে শিক্ষা, মেধা, তথ্য-সঞ্চারক, সংরক্ষণশীল চেতনা, জ্ঞান-মননের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। গান্ধিজীর জীবন বৃত্তান্ত অর্থাৎ তার স্মৃতিচারণায় এই গ্ৰন্থাগার। তার মতাদর্শ, জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে ২রা অক্টোবর সগৌরবে খুব বিশেষভাবে পালিত হয় এই দিনটি। সর্বোপরি, ছোট্ট সংগ্ৰহশালায় নানারকম উপাদানে প্রমাণিত করে শুধু বড় বড় সিমেন্ট পাথরের দেওয়ালকেই সংগ্ৰহশালা বলে না বরং ছোট্ট প্রচেষ্টাকে সকলের সহযোগিতায় এবং পরস্পরের ঐকান্তিকতায় সংস্করণের পথে পা দিতে পারে‌… ক্লাব এবং গ্ৰন্থাগারের ময়দানের মধ্যে সিমেন্টের আবরণে তৈরি ছোট মঞ্চপ্রাঙ্গনে পদধূলি রেখে গেছেন ‘সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।’

হ্যাঁ আমরা তাই গর্বের সহিত বলতে পারি জ্ঞানগর্ভ হল আমাদের ‘কলানবগ্ৰাম।’ যেখানে শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি এই ত্রিবৃত্তের ভ্রমনমেলায় মানবিক শিক্ষায় দীক্ষিত নবপ্রজন্মের ধ্বজা উড্ডীত হবে। তবে আমাদের কালের সূর্যালো, তূর্যকে দেখতে গেলে কলানবগ্ৰামে সংস্পর্শে গিয়ে সহযোগিতায় উচ্চতম সংস্করণের অগ্ন্যাহুতি দিতেই হবে। শিক্ষানিকেতনের এই জ্ঞানের বীজ এবং আশুতোষ গ্ৰন্থাগারের জ্ঞানবৃক্ষের বর্ধন যেন কলানবগ্ৰামকে কোন এক জায়গায় শান্তিনিকেতনের আবহ প্রদান করে।


শিক্ষানিকেতনের সম্পাদক ‘জ্ঞানেন্দ্র বিশ্বাস’ যিনি ১৯৬২ সাল থেকে কলানবগ্ৰামে পড়াশোনা করে বাইরে চাকরির জন্য গেলেও শিকড়ের টানে ফিরে এসে আত্মজকে নিবেদন করেন। ‘শিক্ষানিকেতন’ বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে দুঃস্থদের উজ্জ্বল শিক্ষালোকের দিকে নিয়ে আসা এবং গ্ৰামের মাটিতে কর্ষিত এক-একজনকে স্কলার তৈরি করা।

জ্ঞানেন্দ্র বিশ্বাস বলেছেন, “আমি এবং পারিপার্শ্বিক সহকর্মীরা সরকারের অনুদান ছাড়াই এগিয়ে গেছি। তবে যতদিন বেঁচে থাকবো এই স্থান, এই ‘যতীন্দ্রমোহন গ্ৰন্থাগার’ এর সংস্করণ সর্বোপরি একটা মিউজিয়াম করার ইচ্ছা আছে। যাতে দূর-দূরান্ত থেকে বাচ্ছারা টেকনিক্যালি নিজেদের প্রশ্নের উত্তর জানতে পারে। আমৃত্যু পর্যন্ত যতটুকু পারবো আমরা করে যাবো।।”


চিত্র সৌজণ্যঃ সৌরিন ঘোষ


 

Related posts

পুজোর মুখে জমজমাট সমুদ্রগড়ের তাঁতি কাপড় হাট

E Zero Point

চাষীদের স্বার্থে হাইরোড অবরোধ করার কর্মসূচী

E Zero Point

‘দুয়ারে ভ্যাকসিন’ প্রকল্পের সুযোগ পেল গুসকরাবাসী

E Zero Point

মতামত দিন