25/04/2024 : 8:28 PM
আমার বাংলা

আইআইটি খড়গপুরের গবেষকরা আবিষ্কার করলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন নৃতাত্ত্বিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে

জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, কলকাতা, ২০ এপ্রিল ২০২১:


সাম্প্রতি একটি গবেষণায় আইআইটি খড়গপুরের গবেষক দল লক্ষ্য করেছেন যে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশেষ বিশেষ আর্দ্রতম স্থানগুলি যেমন – চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরামে বৃষ্টিপাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। গবেষকরা ১৯০১ থেকে ২০১৯ সময়কালে বিশ্বের আর্দ্রতম স্থান দুটির ওপর বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন সংক্রান্ত পর্যালোচনা করে দেখেছিলেন এই অঞ্চল দুটিতে বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের দরুণ জলবায়ু পরিবর্তন ও নৃতাত্ত্বিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। তাঁরা প্রমাণ সমেত এই তথ্যটি সবার সামনে নিয়ে এসেছেন।

উত্তর-পূর্ব ভারতের ১৭টি কেন্দ্রে ১১৯ বছরের বৃষ্টিপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বৃষ্টিপাতে নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। গ্রীষ্ণকালে বেশি বৃষ্টিপাত এবং শীতকালে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এই দুটি এলাকায়। সাতের দশকের মাঝামাঝি থেকেই বৃষ্টিপাতে এই ধরণের  পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের এই আকস্মিক পরিবর্তন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনে যথেষ্টই দায়ী।

নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগরের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত পরিবর্তনশীলতা ও দ্রুত উষ্ণায়নের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বায়ুমন্ডল সঞ্চালনের ধরণ-ধারণ, ভূমি ব্যবহার/জমির আবরণ পরিবর্তন প্রভৃতি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিশেষ করে চেরাপুঞ্জি ও শিলং-এ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এই নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।

১৯৭৩ সালের আগের তুলনায় এই অঞ্চলে নির্ধারিত সময়ের একমাস আগেই মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আটের দশকের গোড়ার দিকে চেরাপুঞ্জি থেকে মৌসিনরামে বৃষ্টিপাত সরে গিয়েছে। অর্থাৎ বৃষ্টিপাত স্থান পরিবর্তন করে কিছুটা পশ্চিম দিকে সরে গিয়েছে।

পশ্চিম উপক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চতার সম্প্রসারণের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরণে পরিবর্তন এসেছে বলেও গবেষকরা মনে করেন।

মহাসাগর, নদী, বায়ুমন্ডল এবং ভূ-বিজ্ঞান কেন্দ্রের (সিওআরএএল)-এর সহকারি অধ্যাপক গবেষক ডঃ জে কুট্টিপুরাথ এই বিষয়ে বলেন, উল্লেখিত তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করে ভারতের আঞ্চলিক ব্যবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণে পরিবর্তন হওয়ার ফলে পানীয় জল, সেচ, কৃষি, জ্বালানি উৎপাদন এবং দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব পড়ছে। তাই এই গবেষণা তাই দেশে আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তনে কি ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে সে সম্পর্কে আগাম সতর্কতা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রায় ৬৪ শতাংশ অঞ্চলই বনে আবৃত। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার আওতায় রয়েছে ৩০ শতাংশ এবং বাকি অংশে রয়েছে পাহাড়-পর্বত। এই অঞ্চলে ভারতের সবচেয়ে বেশি উদ্ভিদ রয়েছে। বিশ্বের ১৮টি জীব-বৈচিত্র্য হটস্পটগুলির মধ্যে অন্যতম এই অঞ্চলটি। সবুজ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ক্ষেত্রে স্পর্শকাতরতার বিষয়টিতে এই অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষিক্ষেত্র ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজকর্মের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে এই অঞ্চলের অর্থনীতির মেরুদন্ডটি।

কৃষি ও খাদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরের অধ্যাপক মদন কুমার ঝাঁ এপ্রসঙ্গে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল বিশ্বের আর্দ্রতম অঞ্চল হিসেবেও পরিচিত। কারণ, এখানে বছরে প্রায় ২ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় যা ভারতের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি। এছাড়াও এই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষরা মূলত কৃষি ও উদ্যানপালনের ওপর নির্ভর করেন। বর্ষায় এই বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন অর্থনীতির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগরের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন  এবং বায়ুমন্ডল সঞ্চালের ধরণ-ধারণ, পাশাপাশি, ভূমির ব্যবহার/জমির আবরণে পরিবর্তন বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে। তাঁদের আশঙ্কা এই পরিবর্তন ভারতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এই পরিস্থিতিতে, আইআইটি খড়গপুরের গবেষকরা যে গবেষণা করেছেন তাতে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে আগাম সতর্ক করা হয়েছে এবং বনাঞ্চল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেই দেশের অর্থনীতি বাঁচবে।

Related posts

করোনা আপডেট পূর্ব বর্ধমানঃ আক্রান্ত ৪৩ জন, সুস্থ ৪৪ জন, দেখুন কোথায় কোথায় আক্রান্ত হয়েছে

E Zero Point

মেমারি সৎসঙ্গ মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান

E Zero Point

তৃণমূলের উদ্যোগে পালিত হলো রামনবমী

E Zero Point

মতামত দিন