জিরো পয়েন্ট নিউজ, ১৯ জুন ২০২১:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এখন আর বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নেই। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এখন ইহুদি কট্টরপন্থি নেতা নাফতালি বেনেট। ইসরায়েলের ক্ষমতায় পরিবর্তন এলেও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসছে না। উল্টো আগের চেয়ে ইসরায়েল পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে অনেক বেশি সম্প্রসারণবাদী চরিত্র ধারণ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নেতানিয়াহুর আমলের একেবারে শেষের দিকেই মূলত এই সম্প্রসারণবাদী নীতির সূচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর নেতানিয়াহু গোপনে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা শুরু করেন। ওইবারই প্রথম ইসরায়েলকে এমন পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। নেতানিয়াহুর কারিশমাই হোক আর ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটেই হোক সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ ইসরায়েলকে সমর্থন দেয় ও চুক্তি করে। তখন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, ইসরায়েল ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইবে।
সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে উদগ্রীব ইসরায়েল। সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানালেও এসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত সাগি কারনি। গত বৃহস্পতিবার তিনি এ মন্তব্য করেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো হলো ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেই। মে মাসে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের টানা ১১ দিনের বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এসব দেশ। দেশ তিনটি জাতিসংঘকে বলেছে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এই নৃশংসতা বন্ধে হস্তক্ষেপ নেওয়ার জন্য। তবে এই দেশগুলোর সঙ্গে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মন্দ নয়। বৈশ্বিক ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র আর আগের অবস্থায় নেই। কে হবে বিশ্ব মোড়ল এ নিয়ে অলিখিত লড়াই কিন্তু জারি আছে। ফলে ইসরায়েল লবি যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়তে পারে।
ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্ক নেই এই তিন মুসলিম দেশের। তাদের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ফিরিয়ে দিয়ে ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুসারে দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত সাগি কারনি বলেন, তিনটি দেশের সমালোচনা সৎ না এবং সংঘাতের প্রকৃতিতে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। তার দাবি, এই সংঘাত ছিল ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে নয়। ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত বলেন, হামাস একটি ইহুদিবিদ্বেষী সংগঠন। আমি নিশ্চিত নই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিতর্কে অংশ নেওয়া মানুষরা সত্যিকার অর্থে হামাসের জঙ্গি ও ফ্যাসিবাদী প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা রাখেন কিনা। যদিও হামাস বরাবরই ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। কারনি জানান, ইসরায়েল স্বীকার করেছে ১১ দিনের হামলায় বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে সেটাতে কার্যকর প্রভাব রাখতে হলে যেকোনো পক্ষের জন্য একমাত্র উপায় হলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা। তিনি বলেন, আমরা আলোচনায় রাজি, বৈঠকে আগ্রহী এবং আমাদের দরজা উন্মুক্ত। আমি মনে করি না আমাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন।
ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও মিয়ানমারে ইসরায়েলি দূতাবাস রয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চারটি আরব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।