23/04/2024 : 9:20 PM
আমার বাংলা

চারু মজুমদার শুধু একটা নাম নয়, একটা আদর্শ


মানস রায়


নতুন সমাজের স্বপ্ন যিনি দেখেন এবং অপরকে দেখতে শেখান, ইতিহাস তাদেরই বোধহয় স্বপ্নদ্রষ্টা বলে চিহ্নিত করে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে চারু মজুমদার এরকমই একটি নাম। যিনি স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীকে। হয়ত তার সেই স্বপ্ন সফল হয়নি, কিন্তু একটি যুগের জন্ম দিয়ে গেছে। তাঁর কথায়- ‘বিপ্লবী হচ্ছে সে, যে সমস্যা দেখে অন্যের কাছে ছুটে যায় না, নিজেই সমস্যার সমাধান করে এবং নেতৃত্ব দিতে পারে। যে স্বপ্ন দেখে না আর অন্যকে স্বপ্ন দেখায় না, সে বিপ্লবী হতে পারে না।’


তিনি আরও লিখেছেন, ‘কোনো কথার মৃত্যু হয় না। আজ আমরা যা বলছি হয়তো মানুষ আজই তা গ্রহণ করছে না; তাই বলে আমাদের সে প্রচার ব্যর্থ হচ্ছে না, কথাগুলো মানুষের মধ্যে যাচ্ছে।’ না চারু মজুমদারের কথার মৃত্যু হয়নি। আজও ভারতের লাখ লাখ অনুসারী জীবন বাজি রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও অসম সে লড়াই। সে পথ নিয়ে বিতর্ক আছে, আছে মতপার্থক্য। তবুও সকল প্রকার শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের রুখে দাঁড়ানোর যে দৃষ্টান্ত তিনি রেখে গেছেন, তা হয়তো আরও বহুকাল মানুষ মনে রাখবে।


জানি না আজকের প্রজন্মের স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারী কিশোর বা তরুণদের মধ্যে কতজন তাঁর সম্পর্কে জানে। কারণ ভারতবর্ষে তাঁর নামটা নিষিদ্ধ নাম, তাকে নিয়ে চর্চা করলে রাত্রে বাড়ির দরজায় পুলিশ কড়া নাড়ে, আর জন সমক্ষে তাঁর নাম উঠলেই মধ্যবিত্তরা হা হা করে তেড়ে আসে।
রোগা পাতলা চেহারার এই মানুষটি এক অদম্য বিপ্লবী বহ্নিশিখা বহন করতেন তাঁর বুকের ভিতর, ভারতের ইতিহাস কে তিনি আমাদের চিনিয়েছেন কৃষকের সংগ্রামের ইতিহাস হিসাবে ।

তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়েরা নেমে এসেছিল দেশের জন্যে জীবন দিতে, কৃষকের মুক্তির জন্যে সংগ্রাম করতে, এবং তাঁরা হাসি মুখে দেশের মুক্তির স্বার্থে প্রাণ বিসর্জন দিলেন। গড়ে তুললেন এক নয়া ইতিহাস যা প্রতিনিয়ত দেশের শাসক শ্রেণীকে আজও আতঙ্কিত করে তোলে।

সেই আতঙ্কের কারণেই একদিন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং প্রায় ১২ দিন অকথ্য অত্যাচার চালায় লালবাজারের সেন্ট্রাল লকআপে। সেই অত্যাচারের মুখেও এই শীর্ণ চেহারার মানুষটি অবিচল ছিলেন নিজের আদর্শের প্রতি এবং মানুষের মুক্তির জন্যে নিজের প্রাণ বলিদান দিলেন ২৮ শে জুলাই ১৯৭২ এর সকালবেলা। তাঁর মৃত্যুতে স্বস্তি পায়নি সরকার, তাই তো গভীর রাতে শহরের আলো নিভিয়ে মানুষটাকে নিয়ে গিয়ে নিক্ষেপিত করা হলো কেওরাতলার ঘাটে।


হয়ত তাঁর কর্মকাণ্ডে কিছু ভুল ছিল। কিছু সিদ্ধান্ত হয়ত হটকারি ছিল। আবার এমনও হতে পারে কোন কিছু ব্যর্থ হলেই তাকে ভুল বলে দাগিয়ে দেওয়ার অভ্যাস আমাদের। জয় হলেই সব ভুল ঠিক হয়ে যায়। ঠিক ভুল যায় হোক স্বাধীনতা উত্তর ভারতবর্ষে আমার জানা শ্রেষ্ঠ নেতা চারু মজুমদার। আজকে তাঁর প্রয়ান দিবসে জানাই কুর্নিশ। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েও শোষণ মুক্তির যে স্বপ্ন তিনি দেখিয়েছিলেন তা আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবে।

Related posts

মেমারিতে ভারতীয় স্টেট ব‍্যাঙ্কের ঋণদান শিবির

E Zero Point

জেল থেকে পুলিশি হেফাজতে তৃণমূলের বিতর্কিত নেতা নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায়

E Zero Point

দেহ উদ্ধার মেমারিতে

E Zero Point

মতামত দিন