28/03/2024 : 1:27 PM
আমার দেশট্রেন্ডিং নিউজ

মে দিবসঃ ভারতের শ্রমজীবী পরিস্থিতি – শ্রমিকরা নিজেই কতটা ওয়াকিবহাল

জিরো পয়েন্ট বিশেষ প্রতিবেদন১ মে ২০২২:


শেখ জানে আলম


কাজ বাঁচার মত মজুরি ও শ্রম সময়ের ঘন্টা কমানোর আন্দোলন -সংগ্রাম ও জমায়েত এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও হামলা। সে দিনের সেই ঘটনা যা ছিল হত্যালীলা – বেশ কয়েকজন শ্রমিকের পুলিশের গুলিতে মৃত্যু ও পরে ফাঁসি । কিন্তু সেদিনের সেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও হত্যালীলা পারেনি শ্রমিক আন্দোলন দমিয়ে দিতে । সেই ঘটনা হচ্ছে ১লা মে ১৮৮৬ সালের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের । এই ঘটনার ৪ বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেসের ( ইতিহাসে যা দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বলে খ্যাত ) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮৯০ সাল থেকে পৃথিবীর দেশে দেশে মে দিবস পালন শুরু হয় । আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক মে দিবস পালনের সিদ্ধান্তের ৬৭ বছর অর্থাৎ ১৯২৩ সালে মাদ্রাজ হতে প্রথম মে দিবস পালন শুরু হয় ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কাল জুড়ে আমাদের দেশ সহ পৃথিবীর পরাধীন দেশ সমূহ এক এক করে ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ হতে মুক্ত হতে শুরু করে । দেশ গুলি স্বাধীনতা পায় শুধু নয় বেশ কিছু দেশে; পৃথিবীর তিন ভাগের এক ভাগ এলাকা মে দিবসের পথে হেঁটে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলে । সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের প্রভাবের ফল স্বরূপ পৃথিবীর দেশে দেশে রাষ্ট্রগুলি জনকল্যাণ মূলক রাষ্ট্রের নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয় । দেশ দেশে শাসক ও শোষকরা বুঝে যায় শুধু শাসন আর শোষণ চালিয়ে বুর্জুয়া রাষ্ট্রী রক্ষা করা যাবে না । তাই শ্রমজীবী জনগন সরকারের নিকট হতে অনেক সুরাহা মূলক প্রকল্প পায় ।
কিন্তু নানা ঐতিহাসিক কারনে ১৯৯০ সালে পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েতের বিপর্যয় ঘটে। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পর হতে শুরু হয়েছে পৃথিবীর দেশে দেশে মে দিবসের আলোকে অর্জিত শ্রমিক শ্রেণীর অর্জিত অধিকারের উপর আক্রমণ । জনকল্যাণ মূলক রাষ্ট্র তার কল্যাণ মূলক প্রকল্প সব বাতিল করতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে মে দিবসের মন্ত্রের অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক দর্শনের উপর আক্রমণ।চলছে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির লড়াইয়ের উপর আক্রমণ । আজকের সময়ের বাস্তবতায় ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর ও শ্রম আইনের পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দিতে চাই ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্রপুঞ্জের আওতায় তৈরি হয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার সনদ অনুযায়ী পৃথিবীর সব দেশ কে শ্রমিক কল্যাণের জন্য আইন তৈরি করতে বলে । স্বাধীনতার পর আমাদের দেশ ভারত নয় নয় করে ৪৪ টি শ্রমিক সুরক্ষা আইন তৈরি করেছে। শ্রমিক কল্যাণের জন্য তৈরি এই সব আইনের বে আব্রু চেহারার প্রকাশ দেখা গেল করনা পরিস্থিতিতে আচমকা লকডাউন ঘোষণার পর । ১৯৭৯ সালে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তৈরি আইনে বলা আছে ;- এক রাজ্য থেকে কোন শ্রমিক আর এক রাজ্যে গিয়ে কোন শিল্প বা কারখানায় কাজ করলে তা শ্রম দপ্তরের অনুমোদন নিয়ে করতে হবে । কিন্তু লকডাউনের পর পরিযায়ী এই শ্রমিকদের কাতারে কাতারে বাড়ি ফেরার মর্মান্তিক দৃশ্য ও কিছু ক্ষেত্রে শিশু ও নারীদের মর্মান্তিক পরিণতি অকল্পনীয় দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছি আমরা । আরও দেখা গেল এই পরিযায়ী শ্রমিকদের কোন তথ্য না কেন্দ্র না রাজ্য কোন সরকারের কাছে নেই ।
অথচ আন্তরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তৈরি আইনে শুধু তথ্য রাখা নয় – বলা আছে ন্যায্য মজুরির কথা, সন্তানদের লেখা পড়া এবং তাদের সুরক্ষার কথা । বিগত করোনা পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের মর্মান্তিক দৃশ্য দেখিয়ে দিল আইন থাকলেও তাকে কার্যকরী করার জন্য ভারতে কোন সরকারি কাঠামো নাই । এখানে এই কথাটাও উল্লেখ্য যে ১৯৭৯ সাল থেকে কেন্দ্রে ও রাজ্যে অনেক রাজনৈতিক দল ই বিভিন্ন সময়ে শাসন ক্ষমতায় থেকেছে কিন্তু সেই সব দল শ্রমজীবীদের এই আইন কে কার্যকরী করার কথা উপলব্ধি করেছে বলে কিন্তু মনে হয় না । তবে এই ব্যাপারে কেরালার বাম সরকারের শ্রমিকের অনুকূলে কাজ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
অপরদিকে সংগঠিত শিল্প শ্রমিকদের ও বঞ্চনার শেষ নাই । করোনা বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বহু শিল্পের শ্রমিকদের বেতন দান বন্ধ ছিল । পরে পরে কেন্দ্র রাজ্য সব সরকারই সব শিল্প সংস্থাকে শ্রমিকদের বেতন মিটিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় । কিন্তু শিল্প মালিকরা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে বহাল তবিতয়তে আছেন । উল্টে চলছে শ্রমিক ছাঁটাই, অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চনা ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ এর মত ঘটনা। আগে শ্রমিক আইন থাকলেও তা বইয়ের পাতায় থেকে যায় । শ্রমিকদের পক্ষে তাকে কাজে লাগানো হত না। এখন সেই সব আইনকে আরও শ্রমিক বিরোধী করে তোলার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে । আগেকার যে কোন সময়ের তুলনায় শ্রমিকদের জন্য পরিস্থিতি কিন্তু খুবই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে । এই পরিস্থিতি এখন বিশ্ব জুড়েই দেখা দিয়েছে ।
ভারতে শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ অসংগঠিত শ্রমিক । এরা হচ্ছে বাড়ির কাজের মেয়ে, নির্মাণ শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান চালক, মুটে মজদুর, ড্রাইভার, খালাসি, ধোপা নাপিত সহ অজস্র লক্ষ লক্ষ মানুষ নানা পেশায় যুক্ত। এদের যতদিন শরীর চালু থাকে ততদিনই এদের কর্মসংস্থান ও অন্ন জোটে । ভবিষ্যতের দিশা কিছু তাদের নাই । এই সব অসংগঠিত শ্রমিকরা শারীরিক ভাবে অচল হলে বা বৃদ্ধ হলে ভিক্ষাপাত্র ই তাদের সম্বল ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ছিল উপনিবেশবাদ এখন হয়েছে নয়া উপনিবেশবাদ । শ্রমজীবীদের জন্য আইন হয়েছে তার প্রয়োগ নাই । উল্টে নয়া শ্রমিক আইন এনে শ্রমিক সুরাহা সব বরবাদের অপচেষ্টায় মেতেছে বি জে পি শাসিত ভারত সরকার । দিনে দিনে বিচার ব্যবস্থার কাছে বিচার পাওয়া ও শক্ত হছে ।
আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান গণতন্ত্র কাজ মজুরি শ্রমিক কল্যাণ মূলক সুরাহা আগের আগের সময়ের থেকে অনেক অনেক বেশি পরিমাণে আক্রমনের মুখে। শ্রমজীবী ও গণতান্ত্রিক সাধারণ মধ্যবিত্ত শিক্ষক সহ সংগঠিত অসংগঠিত সব মেহনতী মানুষের সামনে ই গভীর অন্ধকার এখন । বেকারদের কর্মসংস্থান নাই । তাই এই শ্রমজীবী জনগন বিরোধী বিশ্ব ব্যবস্থা , ধনী ও গরিবের বৈষম্য বিরোধী ব্যবস্থা এক কথায় নয়া বিশ্ব ব্যবস্থ্যার বিরুদ্ধে মে দিবসের দর্শন ই এখন আলোক বর্তিকা।
ফরাসি কবি ইউজিন পতিয়ের রচনা ইন্টার ন্যাশনাল সঙ্গীত ;- কবি নজরুল যার বাংলা নাম দেন অন্তর ন্যাশনাল সঙ্গীত এবং সেই অনুবাদ ১৯২৭ সালে ১লা মে গনবানি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।। সেই গানের বানী জোরের সঙ্গে কার্য্যকরি করার শপথ ই আজকের মে দিবসের শপথ ।
” জাগো
জাগো অনশন বন্দি , উঠরে যত
জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত ” ।
যত অত্যাচারের আজ বজ্র হানি
হাকে নিপীড়ত জনগন মথিত বানী ,
নব জনম লভি অভিনব ধরণী
ওরে ওই আগত “।

Related posts

লকডাউনের পর অশোক হোটেল খোলার প্রথম দিনে প্রস্তুতি পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

E Zero Point

সরকারের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় “মিশন কর্মযোগী” ক্রমাগত উন্নতিতে সাহায্য করবেঃ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

E Zero Point

IPL2023: এটাই কি তবে ধোনির শেষ আইপিএল?

E Zero Point

মতামত দিন