জিরো পয়েন্ট নিউজ, মেমারি, ৭ নভেম্বর ২০২২:
হিন্দুদের কাছে রাস অন্যতম বড় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীর ভাবধারার এই উৎসব। কথিত আছে রাস কথাটি এসেছে ‘রস’ থেকে। ‘রস’ মানে আনন্দ, দিব্য অনুভূতি, দিব্য প্রেম বা সার, নির্যাস, আনন্দ, আহ্লাদ, অমৃত ও ব্রহ্ম। ‘তৈত্তিরীয়’ উপনিষদে (২/৭) ‘রস’ সম্পর্কে বলা হয়েছে “রসো বৈ সঃ। অর্থাৎ ‘রস’ ব্রহ্ম ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তাত্ত্বিক রসে সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিকতার সুখানুভূতি এই উৎসবের বিষয়বস্তু। যা শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধা ও গোপিনীদের মধ্যেকার লীলা খেলা। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জেলা এবং ওড়িশা, আসাম, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে অত্যন্ত বড় আকারে রাসপূর্ণিমা পালিত হয়। এবছর (ইংরেজির ২০২২ সাল, বাংলার ১৪২৯ সাল) রাসপূর্ণিমা পড়েছে ৮ নভেম্বর/২১ কার্তিক, মঙ্গলবার। ভারতীয় সময় সোমবার ৭ নভেম্বর বিকেল ৪টা ১৫-য় রাসপূর্ণিমার তিথি শুরু। শেষ পরদিন, ৮ নভেম্বর বেলা ৪টা ৩১ নাগাদ।
কথিত আছে, বস্ত্রহরণের দিন কৃষ্ণ গোপিনীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি তাঁদের সঙ্গে রাসলীলা করবেন। কৃষ্ণের মধুর বাঁশির শব্দ শুনে মুগ্ধ গোপিনীরা নিজেদের কর্তব্য বিসর্জন দিয়ে সংসারের মোহ ত্যাগ করে বৃন্দাবনে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁরা নিজেদেরকে শ্রীকৃষ্ণের চরণে সমর্পণ করেছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের গৃহে ফিরে যেতে বললেও তাঁরা ফিরে যাননি। তাঁদের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে এরপর শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের অন্তর পরিষ্কার করেন। যতজন গোপিনী, ততজন কৃষ্ণ হয়ে গোপিনীদের ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন। যার মাধ্যমে গোপিনীরা জাগতিক ক্লেশমুক্ত হন। এভাবেই রাস উৎসব শুরু হয়েছিল।
উদ্বোধন হয়ে গেল পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি থানার অন্তর্গত পাল্লারোড রাস উৎসব ও মেলার। ১০ দিন ব্যাপী এই উৎসব জুড়ে আছে বাউল গান, কবি গান, হরিনাম সংকৃত্তন , যাত্রাপালা সহ না না অনুষ্ঠান , মেলা উপলক্ষ্যে ভিড় জমাবে এলাকার অগণিত মানুষ, এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন কবিয়াল অসিম সরকার।
বিশিষ্ট সমাজসেবী সন্দীপন সরকার জানান, করোনার জন্য পাল্লারোডে দু’বছর রাস উৎসব ও মেলায় বিধিনিষেধের কারণে সেইভাবে করা সম্ভব হয়নি। কঠিন সময় কাটিয়ে এবছর আবার শুরু হয়েছে রাস উৎসব ও মেলা। মেলায় যেমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে তেমনই বিভিন্ন ধরনের দোকানও থাকছে। খাবারের দোকানের সঙ্গে মনোহারি, স্টেশনারি, শীতবস্ত্রের দোকানের সঙ্গে ছোট নাগরদোলাও থাকছে।