অর্পণ কুমার ঘোষ
মানবতা একটি মানবিক গুণ। যে গুণের বলে একজন মানুষ অন্যের কাছে নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দিতে পারে। প্রেম-প্রীতির বন্ধনে একত্রিত হতে পারে- এমনই মানবিক গুণেরই সমাবেশ।
আমি এক মানুষ এ বোধটা সকলের মধ্যে যেমন জাগ্রত থাকে তেমনি অন্য মানুষটাও যে আমার মত একজন মানুষ, তারও প্রাণ আছে, তারও মন আছে, তার মধ্যেও আত্মা রয়েছে- এমন বোধ যদি টিকে থাকে তবেই তারা হবে সত্যি কারের মানবতাবাদী মানুষ। এখন আমি দেখেছি ধর্মে-ধর্মে এমনকি মানুষে-মানুষে সংঘর্ষ হচ্ছে। মানুষ ও মরছে কিন্তু মানবতা বাদী মানুষ এসব ধর্ম-কর্ম নিয়ে মাথা ঘামায় না, তারা যা করে সেটা মানুষের জন্য তথা বিশ্ববাসীর জন্য। এ জগতে যা দুর্লভ তা হল মানুষের মানবতা। অথচ এটা হচ্ছে মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচয়। বিবেকানন্দের কথায়-” জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর” অর্থাৎ জীবের মধ্যে ঈশ্বরের বাস। তাকে ভালোবাসা মানেই তো ঈশ্বরকে ভালোবাসা, তাকে সেবা করা মানেই তো ঈশ্বরের সেবা করা। তোমরা চোখ তুলে দেখো এই মানবতাবাদী প্রেম হৃদয় মানুষদেরই জয়গান হয়েছে- আর তা যুগে যুগে হয়েও চলবে। আমি আধ্যাত্বিক জিনিসটাকে বাদ দিলাম, মানবতা জিনিসটা তো তবে সকল মানুষের মধ্যে উপস্থিত থাকা দরকার, কিন্তু তার কোন অস্তিত্ব আমি পাইনা। বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “মানুষ হ, তবে সব হয়ে যাবে” কিন্তু তাঁর বাণী প্রোথিত মানুষ এযুগে সত্যিই দুর্লভ।
আমরা ভারতবর্ষের মানুষ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আরো অনেক মানুষের পূণ্যভূমি এই মহান ভারত ভূখণ্ড। এখানেই একদিন গড়ে উঠেছিল তপবনের মতো পরিবেশ। যেখানে হিংসা, মারামারি, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম বলতে কিছুই ছিল না। এমন ভারতবর্ষের বুকে সভ্যতার উন্মেষ ঘটলো, গড়ে উঠল এক সভ্য মানব সমাজ। ভারত ভূখণ্ডের মানুষ হয়েও কেউ বাস করে পার্বত্য ভূমিতে, কেউ সমভূমিতে, আবার কেউ বাস করে বদ্বীপ অঞ্চলে। তারা বিভিন্ন বস্ত্র পরিধান করে, ভিন্ন ভিন্ন লোকাচার পালন করে, ধর্মের মধ্যে দুস্তর বিভেদ, সেখানে তবুও তারা ভারতবাসী। এটাই তাদের বড় কথা হয়ে ওঠা উচিত কিন্তু তারা এখন এসব ভুলে মারপিট করে আর রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ঘটিয়ে ভারতমাতাকে টুকরো টুকরো করে দিতে চাইছে। তাদের মধ্যে মানবতার সেতু তৈরি হয়নি। তারা এখনো অবুঝ, তারা এখনো কচি বর্তমানে ভারতবর্ষের একজন আদর্শ নেতার অভাব আছে। যে এই দেশটাকে গড়ে তুলবে একটা সঠিক দিকে।ভারত মাতার জন্য সে হবে বলি প্রদত্ত একজন বীর যোদ্ধা।
বর্তমান সমাজে মানুষের অপব্যবহার অসদাচরণ ও দুর্নীতি শাসনে আচ্ছন্ন। মানুষের প্রতি মানুষ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে; ফলে আজ মানুষ হয়েছে বিশ্বাসঘাতক ক্রমে ক্রমে মনুষত্ব লোপ পাচ্ছে। মানুষকে পৃথিবীতে এসে যে কর্তব্য পালন করতে হয়, তা আর নেই। একজন মানুষ যেমন যশের দ্বারা অপরের অন্দরে অমরত্ব লাভ করে তেমনি আরো ১০ জনের প্রয়োজন কিন্তু মানুষ এর বিপরীত আচরণ করে। এই দুর্নীতি পরায়ন মানুষ কে দন্ড দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের প্রয়োজন মনুষত্বকে রক্ষা করা, আমরা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠি আমরা যেন হয়ে উঠি বীরভোগ্যা বসুন্ধরার বীর সন্তান।