এই লড়াই ধৈর্য্যের লড়াই,
বাড়িতে থেকে একসাথে লড়াই
করবার লড়াই,
বাইরের সাথে
ব্রেকআপ করবার লড়াই
অর্ক পাল, সামাজিক কার্যকর্তা, মেমারি, পূর্ব বর্ধমান
কোভিড-১৯ ভাইরাসের তান্ডব দেখছি আমরা সকলেই । চীন বাদে অন্য সব দেশের সুস্থতার হার খুবই কম । এই ভাইরাস যে কেবল মানুষ মারছে এমনটাই নয় গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, নেমেছে শেয়ার বাজারে ধস । এই পরিস্থিতিতে সরকার বাদেও অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের মতো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । কোনো সংস্থা মানুষ জনের খাদ্য সংস্থান করছেন কেউ করছেন সচেতনতা বৃদ্ধি, কেউ রক্ত সঙ্কট দূর করছেন। সরকারও এই সব বিষয়ে মোকাবিলা করবার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে চলেছেন । সেই সরকারী অর্থ রাশিতে অনেক সেলেব, ব্যবসায়ী এবং সর্বসাধারণ মানুষও তাদের সাধ্য মতো দান করেছেন । কিন্তু সেগুলো কতদিন ?
দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে চলতি ব্যবসার উপর, কিন্তু এখন সব বন্ধ । খেটে খাওয়া মানুষ থেকে কোটিপতি সবাই আজ বাড়িতে বসে সুতরাং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও পুরোপুরি বসে গেছে । অধিকাংশ প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে গেছে । মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট দেখা দিচ্ছে, আর বিলাসবহুল জিনিসের কথা তো বাদই দেওয়া যেতে পারে । এমন পরিস্থিতি চলতে শুরু করলে সবাই ভাঁড়ারে টান পড়বে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি হবে যা সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে । যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো না খেতে পেয়ে মরেবে । এর উপর কালোবাজারি তো আছেই ।
করোনার বাড়বাড়ন্ত মিটে গেলে ভবিষ্যতের কথা যদি ভাবা যায় এমন হতেই পারে, যারা পরিয়ায়ী শ্রমিক ছিলেন তারা অন্যত্র কাজ করতে যেতে ভয় পাবেন এবং মালিক পক্ষও কাজ করাতে চাইবেন না বাইরের মানুষ জনদের দিয়ে । প্রায় অনেক কনস্ট্রাকশনের কাজ স্থগিত হয়ে যাবে । সাধারণ ব্যবসায়ীদের বাজারেও অনেক মন্দা হবে যেহেতু প্রতিটি প্রডাকটিভ কাজেই শ্রমিক সঙ্কট দেখা যাবে । অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাইয়েরও আশঙ্কা দেখা যাবে । এই ভাবে দেখতে গেলে আর্থিক সঙ্কট কালোবাজারির মুখে সব শ্রেণীর মানুষই পড়বেন । তখনই সাহায্যের প্রয়োজন বেশি পড়বে। কারন পেটের খিদে মানুষকে বেশি হিংসাত্মক করে তোলে ।
দেশে সংক্রমনের সংখ্যা তরতরিয়ে বাড়লেও সমস্ত সারির মানুষের কোন সচেতনতা নেই, তারা ছুটির দিনের মতো পালন করছেন সরকারের নির্দেশ মানছেন না, মানছেন না ডাক্তারের নির্দেশও । তাই এই সংকটের দিনে সংক্রমনের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে । পুলিশ থেকে ডাক্তার সকলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন করোনার মোকাবিলায় । তাদের সকলের কাছে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী না থাকার জন্য আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন । যারা দেশের সুরক্ষায় সৈনিক হয়েছেন তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে ৩৩৫ কোটি মানুষের দেশে সুরক্ষা দেয়ার মতো কেউ থাকবে না ।
খাদ্যের প্রয়োজন সকলের হয় কিছু মানুষ সরকারি নির্দেশ কে ছুটির মত নিয়েছেন ফলে এক দলে বাজার করতে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট দূরত্ব মানছেন না ফলে তারাও সংক্রমিত হচ্ছেন এর থেকে তাদের পরিবার এবং একে অপরের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছেন । যা ধীরে ধীরে দেশকে ভেতর থেকে মেরে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট আজকাল নিউজ চ্যানেল চেয়েও বেশি মানুষের কাছে খবর পৌঁছে দেয় । কিছু মানুষ বাড়িতে থেকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের অপব্যবহার শুরু করেছেন । অনেকে তো খবর কে বিকৃত করে বা অসচেতনতামূলক খবর ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন । অনেকেই সেই বিভ্রান্তিমূলক খবরগুলোকে যাচাই না করে মানসিকভাবে হিংসাত্মক এবং অপরের উপর চড়াও হচ্ছেন হচ্ছেন ।
এই সামাজিক দুর্যোগের সময় কুসংস্কার এবং ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসের গোঁড়ামি বেশ কিছু সংখ্যক মানুষকে মন্দির মসজিদে একত্রিত করছেন । এই রোগ একত্রিতদের উপর চেপে বসে এটুকু । যে ভর্সা ডাক্তার, বিজ্ঞান এবং সচেতনতার উপর করা উচিত সেই ভরসা ধর্মপ্রচারকদের উপর করে ফেলেছেন ।
রাজনৈতিক মতামত ভিন্ন থাকবেই কিন্তু সকলের শত্রু বা সকলের বিরোধী আপাতত করোনাই । যখন এক হয়ে মহামারী বিরুদ্ধে প্রয়োজন তখন অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব একে অপরের বিরোধিতা করছেন । যেহেতু রোগটি নতুন প্রতিদিনই এই রোগটির বিরুদ্ধে লড়তে অনেক প্রতিকূলতা আসছে । এই সময়টা এক হয়ে প্রতিটি ভারতীয়দের লড়া উচিত । সবাই সুস্থভাবে বেঁচে থাকলে নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় লড়াই অনেক লড়ার সময় পাওয়া যাবে অনেক ।
আজকাল দেখা যাচ্ছে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাই এক সঙ্গে একই লোককে খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, সেই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সকলেই । তবে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যুবক যুবতীরা একত্রে অনেক জনকে নিয়ে একসাথে কাজ করছেন । তারা নিজেদের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছেন না বা প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিচ্ছেন না, এতে সংক্রমণের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি হচ্ছে । তারা যদি কোভিড-১৯ এর বাহক হয়ে যান তবে অনেক নিম্নবিত্ত মানুষ এবং তাদের পরিবারও সংক্রমিত হবেন । এক্ষেত্রে খুব অল্প সংখ্যক সদস্যের দল ভাগ করে এই কাজ করা উচিত কারন নিজেদের এই মহামারীর চম্বল থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেই এরা ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়তে পারবেন ।
এই লড়াই ধৈর্য্যের লড়াই, বাড়িতে থেকে একসাথে লড়াই করবার লড়াই, বাইরের সাথে ব্রেকআপ করবার লড়াই । আপনিই বাড়িতে থেকে নিজেকে সুস্থ রেখে এই মহামারির বাড়বাড়ন্তকে আটকাতে পারেন। আসুন অঙ্গীকারবদ্ধ হই ।