23/04/2024 : 5:30 PM
অন্যান্য

করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণের সাহায্যে এগিয়ে এলো পশ্চিমবঙ্গ সার্কলের ডাক দফতর

শ্রীজাতা সাহা সাহু, কলকাতাঃ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের রানার কবিতার রানার চিঠিপত্র এবং সংবাদ নিয়ে গ্রাম থেকে শহরের পথে রাতের অন্ধকারে হাতে লন্ঠন নিয়ে ছুটে যেত নতুন খবর দেওয়ার জন্য। বহু দুঃখ, বেদনা এবং ক্ষুধার ক্লান্তি সহ্য করে তাঁরা এই কাজটি করতো। এযুগে সেই পরিস্থিতি স্বপ্নের মত মনে হয়। এযুগের রানারদের নাম ডাক সেবক বা পোস্টম্যান, যাঁরা চিঠিপত্র সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব নিয়ে কাজ করে চলেছে অবিরত এবং চিঠিপত্রের পাশাপাশি, ওষুধপত্র, দূর-দূরান্ত থেকে পোস্ট করা সামগ্রী পৌঁছে দেয় মানুষের দোর গোড়ায়। ইদানীং করোনা জীবাণুর আক্রমণে যখন দেশ নাজেহাল এবং একই জীবাণুর আক্রমণ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, তখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল-সহ পশ্চিমবঙ্গেও কোভিড-১৯ মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, পি.পি.ই., টেস্ট কিট এবং অন্যান্য চিকিত্সা-সরঞ্জাম যথাস্থানে পৌঁছে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সার্কলের ডাক দফতর। পাশাপাশি, ৮০ বছর পার করেছেন যে সব পেনশনভোগী, তাদের এবং দরিদ্র মানুষের দোর গোড়ায় এই ডাক সেবকরাই পৌঁছে দিচ্ছেন পেনশনের টাকা। যে সব মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন বা যাঁরা দিব্যাঙ্গ তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ নিয়ে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছেন তাঁরা।

কিছুদিন আগে দেশের ডাক ব্যবস্থা হিমাচল প্রদেশের উনা গ্রামের ৮ বছরের এক কন্যার হাতে তার ক্যান্সার রোগের চিকিত্সার ওষুধপত্র তুলে দিয়েছিল। মেয়েটির পরিবার তাঁদের গ্রামে ওই ওষুধগুলি পাচ্ছিলেন না। তখন তাঁরা তাঁদের দিল্লিতে থাকা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওষুধগুলি আনিয়ে দেওয়ার জন্য। লকডাউন পরিস্থিতে গাড়ি-ঘোড়া না থাকায় মেয়েটির ওই পারিবারিক বন্ধুরা কেন্দ্রীয় যোগাযোগ, আইন ও বিচার এবং বৈদ্যুতিন ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের কাছে সাহায্য চায়, যাতে ওষুধগুলি সময়মত ওই মেয়েটির পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া যায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তত্ক্ষণাত ইন্ডিয়া পোস্টের কর্মচারীদের নির্দেশ দেন ১৯ এপ্রিলের আগে যেন ৮ বছরের ওই মেয়েটির পরিবারের কাছে ওষুধগুলি পৌঁছে যায়। হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং হিমাচল প্রদেশের ইন্ডিয়া পোস্টের বিভিন্ন সার্কল নিজেদের মধ্যে সুন্দর ভাবে সমন্বয় রেখে ওই ওষুধপত্রগুলি সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয় মেয়েটির বাড়িতে। এই ঘটনায় মন্ত্রী আপ্লুত হয়ে দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া পোস্ট যে নজির সৃষ্টি করেছে সে প্রসঙ্গে একটি ট্যুইটও করেন।

পশ্চিমবঙ্গে বিগত ১৫ দিনে ইন্ডিয়া পোস্ট ওষুধপত্র, টেস্ট কিট এবং অন্যান্য চিকিত্সামূলক সরঞ্জাম কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূম জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ও ব্যক্তি বিশেষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে তাঁদের মোটরযানে করে।

ইন্ডিয়া পোস্টের নিউটাউন, বিধাননগর এবং সল্টলেক এলাকার পূর্ব কলকাতা বিভাগ গত ২০ এপ্রিল থেকে নিউটাউন কলকাতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-র সঙ্গে একটি বিরাট কর্মযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছে। কাজটি হল – ওই ডিভিশনের অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকায় থাকা প্রবীণ নাগরিক এবং কায়িক অসুস্থতায় ভুগছেন যে সব মানুষজন, তাঁদের কাছে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়া। ইন্ডিয়া পোস্টের পূর্ব কলকাতা বিভাগটি এজন্য একটি অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে, যার ফলে একটি হোয়াটস অ্যাপ নম্বরের সাহায্যে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সরবরাহের জন্য নাম লেখানো যাচ্ছে। এই নম্বরটি হল – +৯১ ৬২৯২১৩২৪৫০। এই সুবিধা কেবল প্রবীণ নাগরিক এবং অসুস্থ মানুষজনদের জন্যই প্রযোজ্য। এভাবে, এখন পর্যন্ত ১ হাজারেরও বেশি প্রবীণ পেনশনভোগীর বাড়িতে পেনশনের টাকা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছে ইন্ডিয়া পোস্টের ডাক সেবকরা। ৯০ লক্ষ টাকার বেশি পেনশনের টাকা তাঁরা এভাবে পৌঁছে দিয়েছেন ওই এলাকার ৮০ ঊর্ধ্ব পেনশনভোগীদের বাড়িতে বাড়িতে। সল্টলেকের এ.এইচ ব্লকে ৮০ ঊর্ধ্ব শেঠ আনন্দরাম জয়পুরীয়া কলেজের এডুকেশন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপিকা শ্রীমতি গীতশ্রী রায় পেয়ে গিয়েছেন তাঁর ফ্যামিলি পেনশনের টাকা ইন্ডিয়া পোস্টের ডাক সেবকের সাহায্যে।

ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্ট ব্যাঙ্কগুলির (আই.পি.পি.বি.) ও মাইক্রো এ.টি.এম. ব্যবস্থা এবং ডাক সেবক ও জি.ডি.এস. কর্মচারীদের সাহায্যে সরাসরি হস্তান্তরের মাধ্যমে আই.পি.পি.বি. অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে দেওয়াও হচ্ছে। একই সঙ্গে আধার কেন্দ্রিক প্রদায়ী ব্যবস্থা (এ.ই.পি.এস.)-এর সাহায্যে অন্যান্য ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা তুলে গ্রাহকদের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে ইন্ডিয়া পোস্টের ডাক সেবকরা। এভাবে, বিগত ১৫ দিনে কলকাতা ও উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূম জেলার গ্রামাঞ্চলে থাকা ১০ হাজারেরও বেশি সুবিধাভোগীর বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

আই.পি.পি.বি.-র সাহায্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধাভোগীদের হাতেও নগদ সহায়তার অর্থ তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে ইন্ডিয়া পোস্ট। সরাসরি নগদ লেনদেন না করে অনলাইন ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সাহায্যে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষজন এবং মহিলা সুবিধাভোগীদের কাছাকাছি চলে আসার-ও প্রচেষ্টায় রয়েছে ইন্ডিয়া পোস্ট। কলকাতা অঞ্চলের পোস্টমাস্টার জেনারেল শ্রী নীরজ কুমারের ভাষায়, ইন্ডিয়া পোস্টেরপ্রধান লক্ষ্য হল, করোনা রোগটি থেকে শহর ও গ্রাম এলাকার নাগরিকদের মুক্ত রেখে তাঁদের দোর গোড়ায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া এবং দরিদ্র ও প্রবীণ মানুষের কাছে নিজেদের নির্ভরশীল করে তোলা।

ইন্ডিয়া পোস্টের এই মহানুভবতাকে আমরা সেলাম জানাই। (পিআইবি)

Related posts

আত্মঘাতী বাঙালি…ঝড়ের গতিতে সংক্রমণ বাড়ছে….মেমারিতেও মানুষ রাস্তায় ছুটছে

E Zero Point

লক ডাউনঃ মেমারিতে ভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমিকের দল

E Zero Point

রমজানঃ মুক্তির মাস

E Zero Point

মতামত দিন