স্টাফ রিপোর্টার, মেমারিঃ করোনা পরিস্থিতিতে যখন মানুষ নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য লকডাউন মেনে নিজেকে করেছে গৃহবন্দী, পালন করছেন সরকারী বিধিনিয়ম। অন্যদিকে লকডাউনে ব্যবসায়িক লাভ ওঠানোর জন্য কিছু মানুষ দেশের বিভিন্ন রাজ্য-জেলা জুড়ে অসাধু মন নিয়ে সাধারণ গরীব মানুষকে ধোকা দিচ্ছেন।
মেমারি শহরেও লকডাউনের প্রথমের দিকে একজন চাল ব্যবসায়ী যেমন লকডাউনের লাভ ওঠানোর জন্য গোডাউনে চাল মজুত করে রেখেছিলেন, পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সেরকমই গত ২৭ এপ্রিল লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মেমারি পুলিশ গ্রেপ্তার করল এক গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের অসাধু ব্যবসায়ীকে।
ঘটনায় প্রকাশ, অনেকদিন ধরেই অভিযোগ আসছিল যে, মেমারি নিউ বাসষ্ট্যান্ডের বাস প্রবেশের গেটের ধারে একটি গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের মালিক আনন্দময় রায় ও কল্যাণময় রায় বয়স্ক ভাতার পুরো টাকা দিচ্ছেন না গ্রাহকদের এবং সার্ভিস চার্জ হিসাবে ৫০-১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কেটে নিয়ে বৃদ্ধ-বৃ্দ্ধাদের টাকা দিচ্ছেন।
মেমারি পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের ঝাপানতলা ক্যানেল পাড়া নিবাসী নিমাই সাঁতরার মেমারি থানায় অভিযোগ ভিত্তিতে জানা যায় যে, গত ২৬ এপ্রিল সরকারের দেওয়া ২০০০ টাকা বৃদ্ধভাতা আধার কার্ডের মাধ্যমে মেমারি নিউ বাসষ্ট্যান্ডের অনলাইন সেন্টার থেকে তুলতে যান এবং উক্ত ব্যবসায়ী ১৫০০ টাকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে তুলে দেন এবং বলেন যে ৫০০ টাকা সার্ভিস চার্জ। তিনি ফিরে এসে তার ভাইপোকে জানান। তার ভাইপো কাকা নিমাই সাঁতরাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের মালিক আনন্দময় রায় ও কল্যাণময় রায়ের কাছে জানতে চায়লে তাদেরকে সঠিক ভাবে বোঝাতে পারেননি এবং শুধু বলেন এটা সার্ভিস চার্জ হিসাবে নেওয়া হয়। এমতাবস্থায় দোকানের মালিকের সাথে গ্রাহকের বচসা হয় এবং অনেক ভিড় জমে যাওয়া পুলিশ খবর পেয়ে তার দোকান বন্ধ করে দেয় এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। ভুক্তভোগী গ্রাহক বুঝতে পারেন যে প্রতারণা হয়েছে এবং সেই ভিত্তিতে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তবে এটা শুধু ১৫ নং ওয়ার্ডের ব্যক্তিই প্রতারনার শিকার হয়নি, দিনকয়েক আগে জিরো পয়েন্ট অফিসেও পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড থেকে একই অভিযোগ জানিয়ে সাধারণ বয়স্ক মানুষের প্রতি অবিচারের কথা জানানো হয়েছিল, এই ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের মালিক আনন্দময় রায় ও কল্যাণময় রায় বিভিন্ন অনলাইন মানি ওয়ালেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা আদান প্রদান করেন। তাদের নামে স্টেট ব্যাঙ্কের সিএসপি সেন্টার যেমন ছিল তেমনই বেসরকারী সংস্থা বিআরএস মানি -র অনুমোদন। কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই উচ্চহারে কমিশন নেওয়ার সিস্টেম নেই।
জনৈক স্টেট ব্যাঙ্কের এক সিএসপি সেন্টারের মালিক জানান, যে স্টেট ব্যাঙ্ক কোন কমিশন নেয় না। বিভিন্ন বেসরকারী ওয়ালেট থেকে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে নুন্যতম ধার্য করা কমিশন নেওয়া হয় কিন্তু সেটা শুধু পরিষেবার জন্যই। সূত্রে জানা যায় পূর্বে এইধরনের অভিযোগ থাকায় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া তাদের সিএসপি সেন্টারের লাইসেন্স বাতিল করেছেন অনেকদিন আগেই।
মেমারি থান সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর, আনন্দময় রায় এই মর্মে একটি মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান যে, ভবিষ্যতে তিনি এই ধরনের কাজ করবেন না এবং কমিশন বাবদ যাদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়েছেন সেই সব টাকা সকল গ্রাহকদের আগামী ৫ মে ২০২০-এর মধ্যে ফেরৎ দিয়ে দেবেন।
শ্রমজীবি সাধারণ মানুষ যেখানে লকডাউনে কাজ কর্ম হারিয়ে দুমুঠো অন্নের তাগিদে লড়াই করছেন। রাজ্য সরকার বিভিন্ন যোজনা ঘোষণা করছেন। করোনা সংক্রমনের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে বয়স্কদের বেশি করে দেখাশোনা করতে বলছেন সেখানেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের পার্থিব স্বার্থের জন্য বয়স্কদের প্রতারনা করছেন। মানব সভ্যতা সত্যিই এক সঙ্কটের মুখোমুখি আজ।