27/04/2024 : 8:35 AM
অন্যান্য

করোনা প্রভাব, দিন আনি দিন খাইয়ের সংসারেও বাড়ছে সঞ্চয়ের প্রবণতা

বিশেষ প্রতিবেদনঃ অর্থনীতির হাল খারাপ। অনেকের মাসহরায় কোপ পড়েছে। টান সামলাতে তাই এবার স্বল্প আয়ের মধ্যেই মানুষ সঞ্চয় করতে চাইছে। অনেকে আবার কোন ব্যাংক কত সুদ দিচ্ছে সেদিকেও নজর রাখছেন। মূল লক্ষ্য সাশ্রয়। ভারতের সবচেয়ে বড় হাইপারলোকাল ফিনটেক স্টার্ট আপ Pay Near by তার প্রথম ‘India Savings Behaviour’ রিপোর্টে জানিয়েছে যে যদিও এখন ৮০% এর বেশি ভারতীয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে, তবু নিম্ন আয়ের আওতায় থাকা ৭০% মানুষ এখনো চিট ফান্ড বা তোষকের তলায় টাকা রাখার মত প্রথা বহির্ভূত উপায়েই সঞ্চয় করেন। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে আছে চিট ফান্ডগুলোর শক্ত সামাজিক বাঁধন আর প্রযুক্তি সম্বন্ধে ভীতি এবং প্রযুক্তির অভাব।এই প্রবণতা শহর এবং গ্রাম, দু জায়গাতেই দেখা গেছে। দেশ জুড়ে প্রায় ১০,০০০ নিম্ন আয়ের পরিবারের সাথে সরাসরি কথাবার্তা এবং ডিজিটাল সার্ভের মাধ্যমে করা এই PayNearby সমীক্ষা থেকে উত্তরদাতাদের সঞ্চয়ের অভ্যাসকে কোন কোন বিষয় প্রভাবিত করে তা নিয়ে অনেক নতুন কথা উঠে এসেছে। ৪৭% বলেছেন মেয়াদ বাড়ানো কমানোর স্বাধীনতা এবং কত টাকা রাখতে হবে তার বাধ্যবাধকতা না থাকা কোন সঞ্চয় প্রকল্প বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর। সঞ্চয় প্রকল্পগুলোর নমনীয় হওয়া যে কতটা জরুরী তা বোঝা যায় যখন ৬৫% উত্তরদাতা বলেন যে তাঁরা প্রচলিত সঞ্চয় প্রকল্পগুলোর দিকে যাননি কারণ ক্যাশ টাকার যোগান অনিয়মিত। এ বিষয়ে আরো জিজ্ঞেস করে জানা যায় যে মূলত আয়ের অনিশ্চয়তা এবং বড় পরিবার চালানোর খরচের কথা ভেবে অনেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রাখতেই হবে এমন সঞ্চয় প্রকল্পে যেতে চান না। ভবিষ্যতের তহবিল তৈরি করার চেয়ে বর্তমানে কাঁচা টাকা হাতে পাওয়াই এঁদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পঁয়ত্রিশ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা বলেন সঞ্চয়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল নিজের এবং পরিবারের অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করা। আরো প্রশ্ন করা হলে ৬৫% উত্তরদাতা জানান যে তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল আয় থেকে যা বেঁচে যায় তা জমিয়ে একটা মোটা টাকার ব্যবস্থা করা যা দিয়ে জীবনের স্বল্পমেয়াদী ও মধ্যমেয়াদী লক্ষ্যগুলো পূরণ করা যায়। লিঙ্গ এবং বয়স অনুযায়ী এই লক্ষ্যগুলো একেবারেই আলাদা রকমের। বাইক কেনা থেকে শুরু করে সন্তানের শিক্ষার খরচ যোগানো — সবই এর মধ্যে পড়ে। গয়না কেনা বা জমি কেনা, বাড়ি বানানোও জনপ্রিয় লক্ষ্য হিসাবে উঠে এসেছে। উনপঞ্চাশ শতাংশ উত্তরদাতা কোন এমার্জেন্সির মোকাবিলা করতে সেফটি নেট বানানোর কথাও বলেছেন। চলতি অতিমারির কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিপদে পড়েছেন, ক্রমশ বেড়ে চলা বেকারত্বের হার এবং নিয়মিত মাইনে পাওয়ার অনিশ্চয়তায় তাঁদের আর্থিক সুরক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ এর মত সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে সঞ্চয় করে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার ব্যাপারে নাগরিকরা আগের চেয়ে বেশি সচেতন হয়ে উঠেছেন। সমীক্ষায় আরো দেখা যাচ্ছে যে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে কোন প্রকল্পে সঞ্চয় করে শেষ অব্দি কত টাকা পাওয়া যাবে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় নমনীয়তা, নিরাপত্তা, বিশ্বাস আর লেনদেনের সুবিধা। চল্লিশ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন কাগজপত্র জমা দেওয়ার জটিলতা কোন প্রচলিত সঞ্চয় প্রকল্প পছন্দ না করার প্রাথমিক কারণ। প্রচলিত সেট আপে অস্বস্তি, কাগজপত্র জমা দেওয়ার দৌড়াদৌড়ি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের সময়, দীর্ঘ অপেক্ষা অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে পড়ে। তেতাল্লিশ শতাংশের বেশি কনজিউমার বলেছেন লেনদেনের সহজ পদ্ধতি একটা জরুরী ফ্যাক্টর, যা ঠিক করে তাঁরা কতটা ঘন ঘন সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখবেন। যাতায়াতে সময় ব্যয় এবং অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করা তাঁদের পক্ষে অসুবিধাজনক। এসব করতে গিয়ে দিন মজুরির টাকা না পাওয়াও প্রচলিত তাঁদের সঞ্চয় প্রকল্প এড়িয়ে চলার কারণ।
এই সমীক্ষা সম্পর্কে PayNearby MD & CEO শ্রী আনন্দ কুমার বাজাজ বলেন “অতিমারি থেকে আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হল আমাদের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ করা উচিৎ, যাতে আমরা এরকম পরিস্থিতির জন্য আরো ভাল করে তৈরি থাকতে পারি। সরকার এবং সিভিক ও রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর উপর ভরসা রাখলেও ব্যক্তিগতভাবে আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ আমাদের চারপাশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর একটা হল জনতার মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি করা। আমরা জানি যে ভারতের একটা বড় অংশ আজ জীবনধারণ করতে হিমসিম খাচ্ছে, আর আমাদের ওপেন ব্যাঙ্কিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে DBT funds যার প্রাপ্য তার কাছেই পৌঁছানো আমরা নিশ্চিত করতে চাই। সতেরো হাজার পিন কোডে ছড়িয়ে থাকা আমাদের ডিজিটাল প্রধানরা গত দু মাসে ৬,০০০ কোটি টাকার বেশি DBT fund পেতে মানুষকে সাহায্য করেছে। এ কাজ সম্ভব হয়েছে NPCI এর সমর্থন, RBI এর নির্দেশ, অর্থমন্ত্রক ও DFS থেকে নীতিগত নির্দেশ এবং সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাঙ্কগুলোর সহায়তায়। যাদের কাছে এই লক্ষ লক্ষ অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেই ব্যাঙ্কগুলো এবং আমাদের স্পনসর ব্যাঙ্কগুলো। এখন জরুরী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে মানুষের জীবনে আমরা আরো গভীর প্রভাব ফেলতে পারি। শুধু অজানা পরিস্থিতির জন্য সেফটি নেট তৈরি করাই নয়, যেন আমাদের সহনাগরিকরা নিজেদের জীবনের লক্ষ্যগুলো পূরণ করার জন্যও সঞ্চয় করতে পারেন। সঞ্চয় প্রকল্পগুলোকে সহজ করার প্রয়োজনীয়তা এই সমীক্ষা থেকে বোঝা গেছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে যাতে লেনদেন আরো সহজ হয় তার ব্যবস্থা করা দরকার। শক্ত সামাজিক বাঁধনে থাকা ডিজিটাল প্রধানদের সাথে স্থানীয় খুচরো ব্যবসায়ীর বিশ্বাস ও সম্পর্ককে আমরা আমাদের ব্যাঙ্কিং পার্টনারদের কাছে নিয়ে আসতে চাই যাতে সহজ সঞ্চয় প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতে সুরক্ষিত, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়।

Related posts

লহমার অনুরণন -নীল অর্কিড

E Zero Point

গুসকরা মহাবিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে রক্তদান ও খাদ্য সামগ্রী দান

E Zero Point

লকডাউনের কারণে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে না

E Zero Point

মতামত দিন