আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর বাড়ি ছিল জান্নাত। সে হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে আমরাও জান্নাতের অধিবাসী। কোনো সন্তান যেমন বাবা-মায়ের অবাধ্যতা এবং পারিবারিক মর্যাদা নষ্ট করার কারণে উত্তরাধিকার থেকে বহিষ্কার হয়, তেমনি আমরাও যদি আল্লাহ ও তার রাসূলের দেখানো পথে না চলে নিজের ইচ্ছামতো চলি, তাহলে আমরাও জান্নাতের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামি হব।
জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা একটি মাস দিয়েছেন, সে মাসের নাম রমজান। এর শেষ দশক সম্পর্কে বলা হয়েছে, ওয়া আখিরুহু ইতকুম মিনান্নারি। শেষটি দোজখের আগুন থেকে মুক্তির দশক।
জাহান্নামিদের আল্লাহ বলবেন, তোমরা দোজখে এলে কেন? এ বিষয়টি ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করে বলবে, ‘মা সালাকাকুম ফি সাকার? তোমাদের জাহান্নামে কে নিয়ে এলো?’ বিষয়টি সংলাপ আকারে সূরা মুদ্দাসসিরে চারটি দফায় বলা হয়েছে।
১. কালু লাম নাকু মিনাল মুসাল্লিন। আমরা নামাজি ছিলাম না বা নামাজি হলেও তা ছিল ‘সাহুন’ বা আলস্যে ভরা নামাজ, বা ‘রাউন’ লোক দেখানো নামাজ। ফলে এ নামাজের কানাকড়ি পুরস্কারও পাইনি। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘রুব্বা সায়িমিন। অনেক রোজাদার আছে, লাইসা লাহু মিন সিয়ামিহি ইল্লাজ জুঈ। সে রোজা থেকে ক্ষুধা ছাড়া আর কিছুই পায় না। রুব্বা কায়িমিন। অনেক নামাজি আছে, লাইসা মিন ক্বিয়ামিহি ইল্লাস সাহার। সে তার নামাজ থেকে রাতজাগা ছাড়া কিছুই পায় না।’
২. ওয়া লাম নাকু নুতঈমুল মিসকিন- আমরা ভুখা-নাঙা দরিদ্র মিসকিনদের খাবার দিইনি। কৃপণতা বা প্রাচুর্যের লোভ মানুষকে উদাসীন রেখে শেষ পর্যন্ত কবরে নিয়ে যায়। মিসকিনদের খাওয়ানো মুত্তাকি বা পরহেজগারদের অন্যতম স্বভাব। যেমন, আল্লাহ সূরা বাকারার শুরুতে তিনটি স্বভাবের কথা বলেছেন, আল্লাজিনা ইয়ুমিনুনা বিল গাইবে। যারা অদেখা বিষয় বা পরকালে ইমান এনেছে। ওয়া ইয়ুকিমুনাসসালাতা। আর নামাজ কায়েম করেছে। ওয়া মিম্মা রাজাকনাহুম ইয়ুনফিকুন। আর তাদের রিজিক থেকে অসহায় দরিদ্রদের জন্য ব্যয় করে। তারাই মুত্তাকি তথা আল্লাহভিরু।
৩. ওয়া কুন্না নাখুদ্দু মাআল খায়িদ্বিন। আর আমরা অসার বিনোদনে সময় অপচয়কারী ছিলাম। সময় একটা দামি জিনিস। কোরানের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ সময়ের কসম, সময় নির্ধারণ করে এমন জিনিস যেমন: চাঁদ-সূর্য, দিনরাতের কসম কেটে এর মূল্য বোঝাতে চেয়েছেন। যেমন, ওয়াল আসরি। সময়ের কসম। ওয়াল কামারি। চাঁদের কসম। ওয়াশশামসি। সূর্যের কসম ইত্যাদি। কিন্তু আমরা এমনই নির্বোধ যে, পকেটের দশটি টাকা হারিয়ে গেলে মন আনচান করে, কিন্তু জীবনঘড়ির সময় যে গল্প গুজবে কাটিয়ে শেষ করছি তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। এমনকি রমজানে রোজা অবস্থায়ও কথাবার্তা কাজকর্মে সতর্ক নই আমরা। রোজা থাকা আর না থাকার মধ্যে পানাহার না করা ছাড়া আর কিছুই পরিবর্তন নেই আমাদের জীবনে।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে হাদিসে এসেছে ‘ওয়া লাম ইয়াদা কাওলাজ্জুরি ওয়া আমালা বিহি। যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা-অশ্লীল কথাবার্তা এবং আচরণ ছাড়তে পারল না, ফালা হাজাতুন লিল্লাহি আইয়াদ্বা তোয়ামাহু ওয়া শারাবাহু। তার পানাহার না করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।
৪. ওয়া কুন্না নুকাজ্জিবু বি ইয়াওমিদ্বীন। আর আমরা পরকালকে মিথ্যা মনে করতাম। আল্লাহকে স্রষ্টা হিসেবে মানি না। জান্নাত জাহান্নাম আবার কী? খাও দাও ফুর্তি করো দুনিয়াটা মস্ত বড়।
এই মস্ত বড় দুনিয়া আজ অদেখা করোনার কারণে সংকীর্ণ হয়ে গেছে। করোনাকে না দেখেও বিজ্ঞানীদের কথায় বিশ্বাস করে কোয়ারেন্টিনে আছে। কিন্তু আমাদের নবীজি (সা.) জান্নাত জাহান্নামসহ স্রষ্টার অপার রহস্য দেখে আমাদের জানিয়ে গেছেন অথচ মানুষ তা বিশ্বাস করতে চায় না। তাই আসুন নবীজির জীবন থেকে ইতেকাফ শিক্ষা নিয়ে রমজানের শেষ দশকে ধর্মীয় কোয়ারেন্টিনে বসে মাওলার সঙ্গে ভাববিনিময় করি।